
মান্দায় সংযোগ সড়ক ছাড়াই বিলের মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকার সেতু
বর্ষা মৌসুমে বিলে থৈথৈ করে পানি। তখন পাড়ি দিতে হয় নৌকায়। এরপর হেঁটে কাদাপানি মাড়িয়ে চলাচল কিছুদিন। আর খরা মৌসুমে বিলের মাঝখানে জেগে ওঠা ভাঙাচোরা রাস্তা। এভাবেই দুর্ভোগ সঙ্গে নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলাচল করছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের অন্তত ১৫ গ্রামের মানুষ। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কাক্সিক্ষত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি প্রত্যন্ত এই জনপদে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন এই রাস্তা দিয়ে। দুর্ভোগ সঙ্গী করে যেতে হয় উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চৌবাড়িয়া হাটে। এ ছাড়া নওগাঁর নিয়ামতপুর ও রাজশাহীর তানোর উপজেলার সঙ্গে স্বল্প সময় ও সহজে এ জনপদের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বিলের ভেতরের এই রাস্তাটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিলের ভেতর দিয়ে টেকসই রাস্তার পাশাপাশি একটি সেতু নির্মাণের প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু এলজিইডি দপ্তর রাস্তা ছাড়াই খামখেয়ালিভাবে বিলের মাঝখানে সেতুটি নির্মাণ করে। রাস্তা না থাকায় জনগণের কোনো কাজেই আসছে না সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। উপজেলা এলজিইডি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২৪ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ৭৪৬ টাকা। রুয়াই গ্রামের বাসিন্দা মোজাফফর হোসেন বলেন, শংকরপুর বিলের মাঝখানের এ রাস্তা দিয়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শংকরপুর, পলাশবাড়ি, জয়পুর, ভাতহন্ডা, জ্যোতিষমাইল, রুয়াইসহ ১৫ গ্রামের অন্তত ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন।
বছরের ছয় মাস ভাঙচুর রাস্তায় ভ্যান, সাইকেল কিংবা হেঁটে চলাচল করা গেলেও অবশিষ্ট সময় নৌকা কিংবা কাদা-পানি ভেঙে যাতায়াত করেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। মান্দা উপজেলা প্রকৌশলী আবু সায়েদ বলেন, সেতুটির নির্মাণ শেষ হলেও পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি। সেতুর সংযোগ রাস্তা নির্মাণের জন্য মাটি সংগ্রহের কাজ চলছে। মাটি পেলেই রাস্তাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
গাইবান্ধায় ঘাঘট নদীর ওপর সেতু জরুরি
নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা থেকে জানান, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে ঘাঘট নদী। এই নদীটির ২০ কিলোমিটারের মধ্যে আট স্থানে ডিঙি নৌকা ও বাঁশ-কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচল করে লক্ষাধিক মানুষ। তবে, এসব সাঁকো ও নৌকার নড়বড়ে অবস্থা এবং বারবার দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়ে স্থানীয় জনগণ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সাকো তৈরি করলেও সেটি এখন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে, যা পারাপারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এতে করে প্রতিদিন শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীদের যাতায়াতে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় শিক্ষকরা বলেন, ঘাঘটের বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সম্ভব হবে, পাশাপাশি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে।
এদিকে, ঘাঘট তীরের বাসিন্দা নবির উদ্দিন ব্যাপারি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও এসব ঘাটের উন্নয়ন হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকায় পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে, আর শুকনো মৌসুমে স্থানীয়রা অর্থনৈতিক খরচের মাধ্যমে কাঠ-বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে, যা প্রতি বছর পুনঃসংস্কার করতে হয়। তবে সাঁকোটি কখনোই যথেষ্ট নিরাপদ নয়, এবং সরকারি কোনো বরাদ্দও পাওয়া যাচ্ছে না।
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিউল ইসলাম জানান, বিশেষ প্রকল্পের আওতায় কাঠের সাকোর স্থলে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্র দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
ব্রিজের অভাবে দুর্ভোগে হাজারো মানুষ
সংবাদদাতা, বকশীগঞ্জ, জামালপুর থেকে জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের কুশল নগর উত্তরপাড়া গ্রামে খালের ওপর একটি ব্রিজ না থাকায় শত বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ৮ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
এলাকার আমিনুল ইসলাম বলেন, এখানে একটি ব্রিজ না থাকায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা খাল পার হয়ে কষ্ট করে লেখাপড়া করতে যায়। ওই খালের ওপর একটি ব্রিজ না থাকার কারণে আমরা হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার।
এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষিনির্ভর। তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যগুলো পরিবহন করে খাল পারাপার করতে গিয়ে কৃষকদের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়। তাই ওখানে একটি ব্রিজ হলে উন্নত হবে যাতায়াত ব্যবস্থা। ঘুচবে দুঃখ-দুর্দশা, এমনটাই জনপ্রত্যাশা।
এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সামচুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য ইতিপূর্বে কেউ আবেদন-নিবেদন করেননি। তাই সেখানে ব্রিজ নির্মাণের কোনো প্রস্তাব কিংবা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়নি।