
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দ মঙ্গলবার রাজধানীর রায়েরবাজারে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের কবর জিয়ারত করেন
রাজধানীর রায়েরবাজারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের কবর জিয়ারত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতারা। জিয়ারত শেষে এনসিপির নেতারা ডান-বামের বিভাজনের মধ্যে না গিয়ে মধ্যপন্থি রাজনীতি সূচনার অঙ্গীকারের কথা জানান।
মঙ্গলবার সকালে জিয়ারত শেষ সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ কথা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ নেতারা।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনি হাসিনার দৃশ্যমান বিচার দেখতে চাই। এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের প্রতি কিছুটা সুবিচার সম্ভব হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে রাজনৈতিক ফায়সালা দরকার। তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজাতন্ত্র গড়তে একটি নতুন সংবিধান দরকার। এর মাধ্যমেই কেবল শাসন কাঠামো ও পুরানো সংবিধান পরিবর্তন করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারব।
তিনি বলেন, যে ফ্যাসিজম সংগঠিত হয়েছিল, স্বৈরাচার সংগঠিত হয়েছিল, এই বিচারের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে, সেটি যেন বাংলাদেশে ফিরতে না পারে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পুরো পৃথিবীতে যেন সংগঠিত হতে না পারে, এই বিচার পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে নিদর্শন হিসেবে থাকা উচিত। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন বিচার দৃশ্যমান হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের কবর জিয়ারত করেছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছি। আমরা সবাই জানি, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে স্বৈরাচারী-ফ্যাসিবাদীর বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল। সেখানে জীবন দিয়েছেন শত শত ছাত্র, তরুণ, শ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, যে আকাক্সক্ষা থেকে আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলাম, সেই আকাক্সক্ষা যেন সঠিকভাবে ধারণ করতে পারি, সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করছি।
এ সময় দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ডান-বামের বিভাজনের মধ্যে না গিয়ে মধ্যপন্থার রাজনীতি সূচনা করার অঙ্গীকারের কথা জানান।
নবগঠিত দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মানুষ, কোনো রাজনৈতিক দল ভুল করেও যেন নির্বাচনের কথা না বলে।
তিনি আরও বলেন, খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে। সে বিচারের মঞ্চে দাঁড়াবে, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবে। যে হাসিনার নির্দেশে এতগুলো হত্যা করা হলো সেই খুনের বিচার না দেখা পর্যন্ত কীভাবে এ দেশের মানুষ ভিন্ন কিছু চিন্তা করে?
তিনি বলেন, যতদিন না আমরা খুনি হাসিনাকে ওই ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, এই বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা রাজপথে ছিলাম। আমার যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছে, আমাদের যে মায়েদের চোখ দিয়ে এখনো কান্না ঝরছে, পানি পড়ছে আমরা যেন মরার আগে অন্তত খুনি হাসিনার বিচারটা দেখে মরতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ করতে পারি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মায়েদের পাশে থাকার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করব।
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক দল গঠনের পর প্রথম দলীয় কর্মসূচিতে এর আগে সকাল ৭টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এনসিপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।