
ছবি: প্রতিনিধি
বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় সাদামাটা একটি গোডাউন। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, চারপাশে টিনের বেড়ার আড়ালে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে শিশু খাদ্য, ফ্রুট জুস ও কোমল পানীয়।
ময়মনসিংহের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তথ্যের ভিত্তিতে গৌরীপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা সরকার প্রমা মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের রুকনাকান্দা গ্রামে অবস্থিত সন্দেহভাজন এই কারখানায় অভিযান চালান।
সেখানে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে যান! বিশাল কারখানায় স্তরে স্তরে সাজানো নামীদামী ব্র্যান্ডের ম্যাঙ্গো জুসের বোতল। তৈরির অপেক্ষায় আরও হাজারো বোতল ও বিশাল ড্রামে রাখা জুস। কিন্তু পুরো কারখানায় তল্লাশি চালিয়েও পাওয়া যায়নি একটি আমের অস্তিত্ব! তারা সম্পূর্ণ কেমিক্যাল দিয়ে দিনের পর দিন তৈরি করছিল ম্যাঙ্গো জুস।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এম সাজ্জাদুল হাসান, গৌরীপুর অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর শাদমান, গৌরীপুর থানার পুলিশ, এনএসআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিএসটিআইয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
অবৈধ এই কারখানার মালিক দুলাল উদ্দিন আহমেদ (৪৩) কে আটক করা হয়েছে। তিনি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার গোমনা গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি গৌরীপুর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে ফ্রুট জুস ও চাবান পানীয় তৈরি করে আসছিলেন। তার প্রধান টার্গেট ছিল গ্রামের বাজারগুলো। রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে তিনি জুস উৎপাদন বাড়িয়েছিলেন। প্রতিদিন হাজার হাজার বোতল জুস বাজারে সরবরাহ করতেন।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) ময়মনসিংহ মাঠ কর্মকর্তা প্রকৌশলী শাওন কুমার ধর আবীর জানান, এই কারখানাটি বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অথচ মোড়কে বিএসটিআইয়ের লোগো ব্যবহার করছিল, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
গৌরীপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা সরকার প্রমা জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারখানার মালিক দুলাল উদ্দিন আহমেদকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কারখানাটি ময়মনসিংহ বিএসটিআইয়ের তত্ত্বাবধানে সিলগালা করা হয়েছে।
অভিযান শেষে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম সাজ্জাদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, এখানে সম্পূর্ণ বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে ফ্রুট জুস তৈরি করা হচ্ছিল, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রথমে অভিযান চালান। জব্দকৃত সহস্রাধিক জুসের বোতল, উৎপাদনের কেমিক্যাল ও রঙ বিনষ্ট করে অবৈধ এই কারখানাটি স্থায়ীভাবে সিলগালা করা হয়েছে।
এম.কে.