
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন এসেছে। ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এক পরিপত্র জারি করে জানায়, এখন থেকে ই-পাসপোর্ট পেতে আর পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতেই পাসপোর্ট দেওয়া হবে।
কাদের জন্য কোন নথি প্রয়োজন?
ই-পাসপোর্ট পেতে আবেদনকারীদের বয়স অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নথি দিতে হবে:
১৮ বছরের নিচে: অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC, ইংরেজি ভার্সন)।
১৮-২০ বছর: এনআইডি কার্ড বা অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC, ইংরেজি ভার্সন)।
২০ বছরের বেশি: শুধুমাত্র এনআইডি কার্ড। তবে বিদেশি মিশনের মাধ্যমে আবেদনকারীরা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দিতে পারবেন।
শিশুদের ক্ষেত্রে: পিতা-মাতার এনআইডি কার্ড।
ঠিকানার প্রমাণ: সাম্প্রতিক ইউটিলিটি বিল (গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানি)।
বিশেষ পরিস্থিতি: দত্তক বা অভিভাবকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অনুমোদন।
পেশাভিত্তিক প্রয়োজনীয় নথি
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার: সংশ্লিষ্ট কারিগরি সনদপত্র।
শিক্ষার্থী: সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র/স্টুডেন্ট আইডি।
বেসরকারি চাকরিজীবী: প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক প্রত্যয়নপত্র।
সরকারি চাকরিজীবী: সরকারি আদেশ (জিও), অনাপত্তি পত্র (এনওসি), প্রত্যয়নপত্র, পিআরএল অর্ডার বা পেনশন বই।
কৃষক: জমির পর্চা।
ব্যবসায়ী: ট্রেড লাইসেন্স।
আবেদনের সময় জমা দিতে হবে
বায়োমেট্রিকের জন্য নির্ধারিত সময়সহ আবেদনপত্রের সারাংশ (প্রিন্ট কপি)।
অনলাইনে নিবন্ধিত পূর্ণ আবেদনপত্র (প্রিন্ট কপি)।
পাসপোর্ট ফি জমার রশিদ।
৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য ল্যাব-প্রিন্টেড সদ্য তোলা ছবি (গ্রে ব্যাকগ্রাউন্ডে)।
ই-পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া
১. অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ:
www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে "Apply Online" ট্যাবে ক্লিক করতে হবে।
প্রার্থীর জেলা ও থানার নাম দিয়ে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিস নির্ধারণ করতে হবে।
ই-মেইল, এনআইডি/জন্ম নিবন্ধন ও মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
২. তথ্য প্রদান ও ফি পরিশোধ:
এনআইডি অনুযায়ী সব তথ্য পূরণ করতে হবে।
অনলাইনে ভিসা, মাস্টারকার্ড, বিকাশ, নগদ, রকেট, ইউপে, ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যাবে।
৩. বায়োমেট্রিকের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট:
অনলাইন ক্যালেন্ডার থেকে সুবিধাজনক তারিখ নির্বাচন করতে হবে।
নির্ধারিত দিনে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে।
৪. পাসপোর্ট বিতরণ:
আবেদন জমার পর মোবাইলে এসএমএস/ই-মেইলে প্রস্তুতির নোটিফিকেশন আসবে।
বিতরণ স্লিপ ও এনআইডি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।
ই-পাসপোর্ট ফি ও সময়সীমা
ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ও সরবরাহের ভিত্তিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে:
সুপার এক্সপ্রেস: ২ কার্যদিবস।
এক্সপ্রেস: ৭-১০ কার্যদিবস।
রেগুলার: ১৫-২১ কার্যদিবস।
অনলাইনে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক
আবেদনকৃত পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা জানতে https://www.epassport.gov.bd/authorization/application-status লিঙ্কে গিয়ে ১৩-সংখ্যার অ্যাপ্লিকেশন আইডি বা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি (OID) দিয়ে চেক করা যাবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ
আগে বায়োমেট্রিকের পর পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য কল করা হতো, যা এখন বাতিল হয়েছে। আবেদনকারীরা নির্ধারিত দিনে অফিস থেকে সরাসরি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
এই পরিবর্তনের ফলে ই-পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ ও দ্রুততর হলো, যা নাগরিকদের জন্য সময় ও হয়রানি কমাবে।
আসিফ