ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

সরকারি প্রকল্পের ঘরে ঝুলছে তালা, একেকজনের দু-তিনটি ঘর পাওয়ার অভিযোগ

আল মামুন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ৪ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১০:৫৬, ৪ মার্চ ২০২৫

সরকারি প্রকল্পের ঘরে ঝুলছে তালা, একেকজনের দু-তিনটি ঘর পাওয়ার অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাটে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন অনেক বিত্তবান ও একই পরিবারের লোকজন। সঠিকভাবে বরাদ্দ না দেওয়ার কারণে প্রকল্পে এলাকার ভূমিহীন ও দরিদ্র পরিবার থাকলেও তারা ঘর বরাদ্দ পাননি। অভিযোগ রয়েছে, প্রথম দিন চাবি আর জমির কাগজ নিতে এসেছিল সবাই। আর কোনোদিন তারা আসেনি। বরাদ্দ পাওয়া সেই ঘরে নাম লেখা বোর্ড নেই। তাই নামও জানেন না বসবাসরতা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলীম, তিনি দালান বাড়িতে বসবাস করেন। কিন্তু তাঁর নামে ঘর বরাদ্দ আছে পাথুরিয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তেমনি বেলাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির নামে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ও দোগাছি আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ রয়েছে ৩টি বাড়ি।

সারি সারি আধাপাকা টিনের ঘর। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার। রয়েছে বিদ্যুৎ আর সুপেয় পানির ব্যবস্থাও। কিন্তু সেখানে ১৪টি ঘরের মধ্যে ৫ টিতে বসবাস করছেন বৈধ উপকার ভোগীরা। আর দখলে থাকা ৯ টি ঘরে বসবাস না করায় এখন ফাঁকা ঘরে ঝুলছে তালা। নষ্ট হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী। বিত্তবানরা কোনো কোনো ঘরে পালন করছে মুরগি। রাখছেন গৃহস্থালির সরঞ্জামাদি।

শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আঃ গফুর দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আশ্রয় প্রকল্পের পাশে আমার জমি, আমাকে সেখানে নিয়মিত যেতে হয়। গিয়ে দেখি ১৪ টি বাড়ির মধ্যে ৩/৪ টি পরিবার বসবাস করে, আর বাকিগুলোতে তালা ঝুলানো থাকে। তিনি বলেন, এগুলো ফেলে না রেখে এলাকায় তো আরো গরিব দুঃখী রয়েছে তাদেরকে দিয়ে দিক সরকার।

সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করা মনোয়ারা বেগম জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের এখানে যারা ঘর পেয়েছেন তাদের অনেককেই আমরা চিনিনা। এসব অধিকাংশ ঘরে বসবাস না করায় সব সময় ঝুলে থাকে তালা। মাঝে মধ্যে অচেনা ব্যক্তিরা এসে কিছু সময়ের জন্য ঘরে থেকে চলে যায়। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা চরম চিন্তিত। আমরা চাই যেসব ঘরগুলোতে কেউ থাকেনা, সমাজের মধ্যে যারা অসহায় গরিব রয়েছে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হোক। 

জেলার অন্যান্য এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, একই অবস্থা জেলার অধিকাংশ আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর। আর বরাদ্দ পাওয়া ঘর গুলোতে নাম লেখা বোর্ড না থাকায় প্রকৃত মালিক না চেনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত বলেও জানান আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা।

প্রকল্পে ঘর নিয়েছে অথচ সেখানে না থেকে নিজের দালানের ঘরে থেকে প্রকল্পের ঘরে মুরগী পালন করছেন আব্দুল আলিম নামের একজন। তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ২০২২ সালে আমাদের মেম্বার আমাদের একটা বাড়ি দিয়েছেন, আমার ছেলে কিছুদিন সেখানে ছিল এখন আমার ছেলে ঢাকায় একটা চাকরি করে, তাই আমি সেই ঘরে মুরগি পালন করছি।

অনুসন্ধানে আরও একটি তথ্য পাওয়া গেছে, 
একই এলাকার বেলাল, যার পরিবারের নামে দুটি আশ্রয়ন প্রকল্পে তিনটি ঘর রয়েছে। সেই বিষয়ে জানতে চাইলে বেলালের স্ত্রী বলেন; আমার ছেলের নামে একটি, মেয়ের নামে একটি আর আমরা এখানে থাকি। তিনি বলেন, আমার ছেলে মেয়ে এখন ঢাকাতে থাকায় সেই ঘরগুলো তালা দেওয়া, আমরা সেখানে মাঝেমধ্যে যাই। আমরা তো ভূমিহীন, তাই এসব ঘর নিয়ে থাকি। 

জয়পুরহাট জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্খাপনা কর্মকর্তা আব্দুল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, ঘর বরাদ্দের কাজগুলো করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। তাঁরা শুধু ঘর নির্মাণে সহায়তা করেছেন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিপুল কুমার জনকণ্ঠকে বলেন, সুবিধাভোগীরা কেন থাকছে না এবং বরাদ্দ প্রাপ্তরা কোথায় তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আর বরাদ্দ পাওয়ার পরেও যারা থাকছেন না, তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

×