ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

মজাদার জনপ্রিয় সব খাবার

বাহের দ্যাশে ইফতার ঐতিহ্য

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী

প্রকাশিত: ০১:২২, ৪ মার্চ ২০২৫

বাহের দ্যাশে ইফতার ঐতিহ্য

নীলফামারীতে ঐতিহ্যবাহী ইফতারি নিখুঁতি

শত শত আইটেমের মুখরোচক খাদ্যের ইফতারের মাঝে উত্তরাঞ্চলের বাহের দ্যাশের মানুষজনের কাছে আজও ঐতিহ্য ধরেছে জিলাপি ও বুন্দিয়া। সিরকা মিশানো তৈরি জিলাপি চিবোতে শুরু করলেই পাওয়া যায় মচমচে, রসাল, টক-মিষ্টি একটা স্বাদ। আবার একইভাবে ভাজা হচ্ছে বুন্দিয়া। 
বছর ঘুরে শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। বাহের দ্যাশ বলে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও দিনাজপুরের আট জেলা নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ইফতার তালিকায় থাকা সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার মিষ্টান জাতীয় জিলাপি ও বুন্দিয়া। সেই সঙ্গে দেশী মুড়ি মিশ্রণে ঝালের পরশে রয়েছে ছোলা বুট, পেঁয়াজু আর বেগুনি এবং আলুরচপ।

গ্রাম-বাংলার ইফতার ঐতিহ্যে ধারা হাজারো বছর ধরে বিদ্যমান। এখন আবার বুটচিড়া একসঙ্গে বিরিয়ানি করা হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের ইসমাইল হোসেনসহ চরবাসীরা এমন কথা জানালেন।  
এ ছাড়াও এ অঞ্চলের শহরের বিশাল পরসায় রয়েছে দইবড়া, ফালুদা, বুট বিরিয়ানি, হালিম, পাতাবড়া, পাটিসাপটা পিঠা, চিকেন ফ্রাই, শাহি জিলাপি, আলুর চপ, চিকেন রোল, ভেজিটেবল রোল, নিমকপরা, নিমকি, ডিম চপ, শাক ফ্লোরি, বিফ টোস্ট, চিকেন টোস্ট, জালি কাবাব, মাটন সাসলিক, শামি কাবাব, টিকা কাবাব, চিকেন চপ, চিকেন তন্দুরি, রেশমি জিলাপি, ছানার পোলাও, খাসির রেজালা, খাসির কাবাব, পেঁয়াজু আর বেগুনি রয়েছে ইফতারিতে।

তবে গ্রামে বা শহরে এত ইফতারির আইটেমের খাবারের ভিড়ে জিলাপি ও বুন্দিয়া সবার কাছেই প্রিয়। এখানকার জিলাপি একসময় বাঁশের খাঁচায় বিক্রি হতো। সারা বছর এই জিলাপি মিললেও রমজানের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। আর বুন্দিয়া তো তৈরি করার সময় মনে হবে যেন বৃষ্টি ঝরছে, তবে বৃষ্টি নয় গরম তেলে বানানো হচ্ছে বুন্দিয়া।

ছোট ছোট আকারের বলের মতো যে খাদ্যসামগ্রী সেটাই বুন্দিয়া। বুন্দিয়া মূলত চিনির রসে ভেজা অবস্থায় সারা বছর বিভিন্ন ভাজাপোড়ার দোকানে বা রেস্টুরেন্টে পাওয়া গেলেও রমজান সামনে রেখে এটি এখন শুকনো আকারে তৈরি হচ্ছে।
ইতিহাস বলছেন মিষ্টির প্রচলন শুরু হয় ৫ হাজার বছর আগে। গবেষকদের মতে, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে এই মিষ্টির প্রচলন হয়। শোনা যায়, জিলাপির স্বাদে মুগ্ধ হয়ে নিজের নামেই তিনি এই মিষ্টির নাম রাখেন জাহাঙ্গীরা। পরে সেটির নাম বদল হয়। ফলে জিলাপির ইতিহাস রাজকীয়ও বলা যায়। অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, এই উপমহাদেশে জিলাপির প্রবেশ ঘটে মুসলিম বণিকদের হাত ধরে। খুব সম্ভবত পারসি ও তুর্কিদের জন্য এই খাদ্যটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল।
বাংলাদেশে হলদে আর লালচে মিশ্রণের বুন্দিয়া বেশি প্রচলিত। সারা দেশেই এটি পাওয়া যায়। সবসময় বানানো হলেও রমজানে এর চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। কিছু খাবার আছে যেগুলোর স্বাদ বদলানোর প্রয়োজন হয় না।  বুন্দিয়া সেরকমই।

×