
বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
প্যানারোমা অ্যাপারেলস কারখানার এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় কারখানা ভাঙচুর, বিক্ষোভ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে শ্রমিকরা। এ সময় তারা কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে আশেপাশের অন্তত অর্ধশত কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে একই দিনে বকেয়া পরিশোধ, বন্ধ কারখানা চালু ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কেয়া গ্রুপের নীট কম্পোজিট ডিভিশন ও এমপি সোয়েটারস লিমিটেড কারখানার ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস এলাকার প্যানারোমা অ্যাপারেলস কারখানায় চাকরি করতেন আফসানা আক্তার লাবণী (২৯)। তিনি ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার জাগির ভুগলী গ্রামের আফসার আলীর মেয়ে।
প্রায় ১০ বছর আগে লাবণীর সঙ্গে একই জেলার নান্দাইল থানার পাঁচরুখী এলাকার চান মিয়ার ছেলে হৃদয় খান ওরফে মল্লিক মিয়ার (৩০) বিয়ে হয়। তারা গাজীপুর শহরের হাড়িনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত কিছুদিন ধরে তাদের মাঝে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল বলে জানিয়েছেন নিহতের মা নাজমা বেগম।
জিএমপির বাসন থানার ওসি কায়সার আহমেদ জানান, রবিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস এলাকায় প্যানারোমা অ্যাপারেলস কারখানার সাততলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন আফসানা। দাম্পত্য কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ নিহতের স্বামী অভিযুক্ত হৃদয় খানকে গ্রেপ্তার করে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ গাজীপুর-২ এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম জানান, সোমবার সকালে কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। এ সময় শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ওই নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে।
তাদের দাবি, কারখানায় কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন আফসানা। এ সময় তিনি ছুটির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। এতে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন আফসানা। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ অভিযোগে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর করে। এ সময় তারা কারখানার বিভিন্ন মালামালে অগ্নিসংযোগ করে।
একপর্যায়ে তারা কারখানা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। শ্রমিকরা কারখানা হতে একটি প্রাইভেটকার ও তিনটি মোটরসাইকেল মহাসড়কের ওপর এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য আশেপাশের কয়েকটি কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করে।
এ সময় তাদের সঙ্গে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা যোগ দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে থানা ও শিল্প পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মহাসড়কের ওপর থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়ে সকাল সাড়ে দশটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তিনি আরও জানান, ওই কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে ভাঙচুর এড়াতে আশেপাশের প্রায় অর্ধশত পোশাক কারখানা সোমবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে, মহানগরীর জরুন এলাকার কেয়া গ্রুপের নীট কম্পোজিট ডিভিশন ও এমপি সোয়েটারস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ, বন্ধ কারখানা চালু ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা। সোমবার সকালে কারখানার সামনে তারা বিক্ষোভ করেন।
কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা জানায়, গত রবিবার বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামাল অপর্যাপ্ততা ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার কারণ মহানগীর জরুন এলাকাস্থিত কেয়া গ্রুপের চারটি কারখানা ১ মে থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে কারখানার ফটকে ২ হাজার ২০৩ জন শ্রমিক ছাঁটাইয়ের একটি নোটিস টানিয়ে দেওয়া হয়।
শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে ওই নোটিস দেখতে পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ সময় তারা বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ, বন্ধ কারখানা চালু ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
কেয়া গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কেয়া কসমেটিক্স লিমিটেড (নীট কম্পোজিট ডিভিশন), এমপি সোয়েটারস লিমিটেড ১২০ দিনের নোটিস প্রদান করে ১ মে হতে স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকিং জটিলতা নিরসন না হওয়ায় দুই মাস পূর্বেই ১ মার্চ হতে ওই শ্রমিকদের স্থায়ীভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
তাদের পাওনাদি অব্যাহতির পরবর্তী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে ব্যাংক জটিলতা নিরসন হলে অব্যাহতিকৃত শ্রমিক এবং কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হবে। তবে কারখানায় কর্মরত সব প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী মহিলা এই নোটিসের বহির্ভূত থাকবেন।