ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

আঞ্জুমান জে. আর টাওয়ার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা

আমরা চাই কারও লাশ যেন বেওয়ারিশ হিসেবে না থাকে

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:০৮, ৪ মার্চ ২০২৫

আমরা চাই কারও লাশ যেন বেওয়ারিশ হিসেবে না থাকে

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা চাই, বেওয়ারিশ লাশ যেন না থাকে, এটা আমরা কামনা করি। আমরা এমন একটা সমাজ বানাই যেখানে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাজ আর নাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য। কারও লাশ যেন বেওয়ারিশ হিসেবে না থাকে।’

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের নতুন ভবন ‘আঞ্জুমান জে আর টাওয়ারের’ উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আলী ইমাম মজুমদার, আঞ্জুমানে মফিদুলের সভাপতি মুফলেহ আর ওসমানী এবং সহ-সভাপতি গোলাম রহমান। নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে এতিম শিশুদের সঙ্গে ইফতার করেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা যার যার জায়গায় বেওয়ারিশ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি, যাতে তার আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব কাছে থাকে। তাকে যেন সম্মানজনকভাবে দাফন করা যায়। এতে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কর্মকাণ্ডের কোনো ব্যাঘাত হবে না। বরং আমরা তাদের সম্মান জানাব, এই জিনিসগুলো তুলে ধরার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমার সৌভাগ্য এখানে উপস্থিত থাকা। ছোটবেলা থেকেই নাম শুনে আসছি। অদ্ভুত এক নাম, এই নামের কোনো ব্যাখ্যা জানতাম না।  তার সঙ্গে একটা জিনিস জড়িত, শুধু জানি  ‘বেওয়ারিশ লাশ’। এরা কারা কোনো দিন জানি নাই, আজকে চাক্ষুস দেখলাম। এরা এমন এক জগত থেকে ভেসে আসে, একটা লাশ পড়ে থাকলে উঠায়ে নিয়ে যায়। স্বপ্নিল একটা জিনিস।

যত দুর্গম হোক, যত কঠিন পরিস্থিতি হোক, ওই নামটি আসে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। এটা আমার কাছে খুব অবাক লাগত। যার পরিচয় জানা নেই, কিন্তু প্রতিদিন খবর আসছে। এখন জানলাম সারা দেশজুড়ে আছে। তাদের কোনো বক্তব্য কখনো কোনো পত্রিকায় দেখি নাই। আমার নজরে আসে নাই যে, এই কাজে কোনো বাহবা নিচ্ছেন। কিচ্ছু করে নাই, একেবারে চুপচাপ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘করোনার সময় এই নাম বারেবারে এসেছে। কাজেই দেখছি যে, চারদিকে ছড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে, মুসলমান সমাজের সঙ্গে যাদের স্মৃতি আছে, তাদের সবাই এটার সঙ্গে জড়িত ছিল। এটা একটা ঐতিহ্য বহন করে যাচ্ছে। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম নামের ব্যাখ্যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় বলে মনে হয় না। নামটা শুনলেই সঙ্গে সঙ্গে মনে আসে কাজের কথা। এই নামটা সেই কাজের অর্থ-বাহক। নামটি একটি নতুন অর্থ ধারণ করেছে। বহু দিন থেকে এটি অনন্য একটি প্রতিষ্ঠান।’
ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘বাংলাদেশে বহু প্রতিষ্ঠান আছে। কেউ ৬ মাস, কেউ ১০ বছর টিকে। এত দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রতিষ্ঠান টিকে আছে শুধু নয়, শক্ত আছে, মজবুত আছে, কার্যক্রম পরিচালনা করছে, নানাদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে, এতিমদের দিকে নজর দিচ্ছে। এটা অবাককাণ্ড। এ রকম আরও প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্ত উপমহাদেশে আছে কিনা আমার জানা নেই।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে আমরা গৌরববোধ করি যে, এ রকম একটা প্রতিষ্ঠান যারা চালিয়েছে, সময় দিয়েছে, মেধা দিয়েছে, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম না থাকলে আমরা জানতামও না যে, এই লাশের কী হয়েছিল। এটা একটি প্রতীক মনে হোক, যেসব দুর্বলতা সমাজের মধ্যে আছে সেগুলো যেন আমরা দূর করতে পারি। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মতো মনোযোগ দিলে বহু সমস্যার সমাধান আমরা নিজেরাই করে ফেলতে পারি।’

×