ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

রোজায় বদলে গেছে রোজনামচা

খেজুর ছোলা মুড়ি জিলাপি হালিমের পসরা শহরজুড়ে

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ০০:০১, ৪ মার্চ ২০২৫

খেজুর ছোলা মুড়ি জিলাপি হালিমের পসরা শহরজুড়ে

রাজধানীর ফুটপাতে বাহারি ইফতার সামগ্রী। দেদার বেচাকেনা

রমজান সবে শুরু। এরই মাঝে বদলে গেছে প্রতিদিনের জীবন। এখন ভোর রাতে বাড়িসুদ্ধ মানুষ জেগে উঠছে। ঘুম ঘুম চোখে বসছে খাবার টেবিলে। তড়িঘড়ি করে খাচ্ছে। ওইটুকুন খেয়েই পার করে দিচ্ছে গোটা দিন । সকালের নাস্তা বা দুপুরে খাবার গ্রহণের চেনা দৃশ্য উধাও হয়ে গেছে। তবে বিকেলের পর থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে মুখ রোচক খাবারের প্রস্তুতি।

বাসা বাড়িতে তো বটেই, রেস্তোরাঁ-ফুটপাত সর্বত্রই তৈরি হচ্ছে শরবত খেজুর ছোলা মুড়ি পেঁয়াজি জিলাপি হালিম- আরও কত কী! এসব খাবারের এত চাহিদা যে, বাঙালির নিয়মিত খাদ্যাভাস শিকেয় উঠেছে!
বাসাবাড়িতে দুপুরের পর থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে ইফতারের প্রস্তুতি। দুপুরের পর ব্যবস্থা আরও বেড়ে যায়। ইফতারের টেবিল সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে সাজাতে হবে- এই চিন্তা মাথায় নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে পড়েন পরিবারের নারী সদস্যরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষ সদস্যরাও হাত লাগান কাজে।
তবে ইফতারকেন্দ্রীক বেশি ব্যস্ততা চোখে পড়ছে বাইরেই। রেস্তোরাঁগুলোর সামনে ইতোমধ্যে বিশাল কড়াই বসানো হয়েছে। ডুবো তেলে ভাজা হচ্ছে পেঁয়াজু ছোলা বেগুনি জিলাপি। বিশাল বিশাল পাতিলে হালিম রান্না করা হচ্ছে। শেষ হতেও সময় লাগছে না।
ঢাকার ফুটপাতগুলোও এখন ইফতার বাজারে পরিণত হয়েছে। যে ফুটপাত ধরেই হাঁটা যায় সেখানেই ছোলা মুড়ি পেঁয়াজু বেগুনির অস্থায়ী পসরা। মজার ব্যাপার হলো কদিন আগেও যারা পিঠা বা সেদ্ধ ডিম বিক্রি করতেন তারা সবাই এখন ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছেন। এমনকি গণপরিবহনে উঠে পানি বা ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছেন হকাররা।
অবশ্য রাজধানীতে বিশেষ বিখ্যাত চকের ইফতার। এই ইফতারের আছে আলাদা ইতিহাস ও ঐতিহ্য। মোগলদের ভোজন বিলাসের সংস্কৃতি কিছুটা হলেও ধরে রেখেছে চক। চকের ইফতার ছাড়া চলেই না স্থানীয়দের। ভোজন রসিকরা দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন। দুপুর থেকেই চলে বিক্রি। চক সার্কুলার রোডে শতাধিক দোকানি ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছেন। কতশত খাবার! তবে চকবাজারের মূল আকর্ষণ কাবাব।

সুতি কাবাব, জালি কাবাব, মুঠি জালি কাবাব, টিকা কাবাব, নারগিস চাপ- সব পাওয়া যাচ্ছে। ‘বড়বাপের পোলায় খায়’ নামের একটি কাবাব দেদার বিক্রি হয়। বিক্রি হচ্ছে হালিম, শাহি জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, ডিম চপ, দইবড়া, লাচ্ছি, পনির, পেস্তা বাদামের শরবত, ফালুদা। সব মিলিয়ে মোগলদের ইফতার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ।
বলার অপেক্ষা রাখে না, রমজানের প্রথম দিন শুরু হওয়া ইফতার বাজার শেষদিন পর্যন্ত চালু থাকবে। তবে মনে রাখা চাই সংযমই রোজার মূল শিক্ষা। পানাহার থেকে বিরত থেকে ক্ষুধা বাড়িয়ে পরে কয়েকগুণ খেয়ে ফেলা সংযমের বিপরীত। তাছাড়া ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট রোজা রাখার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করা যায়। এই উপলব্ধি ক্ষুধার্তদের পাশে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করে।

×