ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

বিদ্যুৎ সাশ্রয় ছাড়া লোডশেডিং এড়ানোর সুযোগ নেই ॥ উপদেষ্টা

বিদ্যুতের সরবরাহ ঘাটতি থাকবে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২ মার্চ ২০২৫

বিদ্যুতের সরবরাহ ঘাটতি থাকবে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট

.

শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। একমাস সিয়াম সাধনায় কাটাবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। একইসঙ্গে শুরু হয়েছে মার্চের কাঠফাটা গরমও। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে সেচ মৌসুম। সব মিলিয়ে ঊর্ধ্বমুখী বিদ্যুতের চাহিদা। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, এই মার্চেই বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা গিয়ে পৌঁছাতে পারে ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। এর বিপরীতে উৎপাদন সক্ষমতা বেশি থাকলেও সর্বোচ্চ উৎপাদন সম্ভব হবে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। ফলে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের সরবরাহ ঘাটতি থাকবে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট। এই সময়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় ছাড়া লোডশেডিং এড়ানোর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, চাহিদা বাড়লেও জ্বালানি সংকটে উৎপাদন সেই অনুপাতে হবে না। তাই সংকট কিছুটা থাকবে। তবে সাধারণ মানুষকে এ সময় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ফ্যান-লাইট জ্বালিয়ে রাখা যাবে না। তাহলে কিছুটা হলেও সংকট কমানো যাবে।
রবিবার রাজধানীর কাকরাইল সার্কিট হাউস মসজিদে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বাসাবাড়ি কিংবা অফিস-আদালতে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না নামানোর অনুরোধ আমরা করছি। আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে কিংবা আরও অন্যান্য আইনি যেসব ব্যবস্থা আছে, সেসব আমরা গ্রহণ করব। তিনি বলেন, শীতে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট। গরমকালে সেটা বেড়ে ১৭ হাজার থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াট হয়ে যায়। এই পার্থক্য মূলত দুটি কারণে হয়। একটি হলো সেচ। এখন এসি ঢাকা শহর বা জেলা শহরের নয়, সব জায়গায় পৌঁছে গেছে। আমাদের এসির লোড পাঁচ-ছয় হাজার মেগাওয়াট। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আপনি যদি ২৫ বা তার ওপরে এসি চালান, তাহলে আমরা দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট সাশ্রয় করতে পারব। আমরা উপদেষ্টা পরিষদের সবার কাছে চিঠি দিয়েছি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য। ধর্ম উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছি ইমামদের জানানোর জন্য। আজ মসজিদে সচেতনতামূলক সভা করলাম। এটি ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকবে। ‘আমি বাণিজ্য উপদেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানাব বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানাব, যেন তারা রমজান ও গ্রীষ্মে এসির বিষয়টা দেখেন।’
উপদেষ্টা বলেন, এসি ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু এটা ২৫ বা তার বেশি ডিগ্রিতে রাখতে হবে। সচিবালয়ের জন্যও একই। কেবিনেট সেক্রেটারিকে আমি আধা সরকারি চিঠি দিচ্ছি যেন সচিবালয়ে এটা করা হয়। কারণ এনফোর্সমেন্টটা শুরু হতে হবে আমাদের ঘর থেকেই।
এসির তাপমাত্রায় নজরদারির কৌশল জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও আমাদের যেসব ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আছে, প্রত্যেকটার একাধিক মনিটরিং টিম থাকবে তারা দেখবে। আমরা বুঝতে পারব কে কীভাবে ব্যবহার করছে। যেসব লাইনে আমরা দেখব বিদ্যুতের ব্যবহার অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, সেগুলোয় আমরা লোডশেডিং করব।
তিনি বলেন, কোনো কারণে লোডশেডিং দিতে বাধ্য হলে আমরা আগেই জানিয়ে দেব। লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা শহর এবং গ্রামের মধ্যে পার্থক্য করব না। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান কিংবা হাসপাতালগুলো বাদ দিয়ে অন্য সব জায়গায় আমরা সমানভাবে লোডশেডিং করব।
এ সময় অবৈধ লাইনের বিষয়ে বা যেসব গ্রাহক চুরি করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন তাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গ্যাস ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে নিরবচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে আসছি। এটি চলমান থাকবে।

×