ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

রমজানকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিকভাবে আগাম জাতের তরমুজ চাষ,বাম্পার ফলন 

নিজস্ব সংবাদদাতা বাকেরগঞ্জ বরিশাল। 

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২১:৫৬, ২ মার্চ ২০২৫

রমজানকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিকভাবে আগাম জাতের তরমুজ চাষ,বাম্পার ফলন 

বাকেরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ। ছবি - জনকণ্ঠ।

প্রতিবছরের ন্যায় এই বছর ও বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে রমজানকে কেন্দ্র করে কৃষকরা আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। অনেক তরমুজ চাষিরা রমজানের প্রথম দিনে তাদের উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি শুরু করেছে। তাই বাজারে তরমুজ তুলতে অনেকেই এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। চলিত মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে ও গাছে রোগবালাই আক্রমণ কম থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে তরমুজ চাষিরা। জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলাতে এই বছর সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের তরমুজের চাষ হয়েছে। আগাম জাতের মধ্যে গ্রেটওয়ান জাতের বীজটি সবচেয়ে জনপ্রিয় কৃষকদের কাছে। এছাড়াও বিগ ফ্যামিলি, সুইট ফ্যামিলি, লাকী ড্রাগন, এশিয়ান-৩ ও ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে।

সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি ও বাজারজাতকরণে সুবিধাজনক স্থান নির্ধারণ করে এই বছরও পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের শতাধিক তরমুজ চাষীরা উপজেলার ভরপাশা,গারুড়িয়ার, ফরিদপুর, দুর্গাপাশা ইউনিয়নের নদীর চরাঞ্চলের জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন।

জানা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে আগে কখনো তরমুজ চাষ হয়নি। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে পটুয়াখালী জেলা থেকে আগত শতাধিক কৃষক পরীক্ষামূলক তরমুজ চাষ করে বাকেরগঞ্জ। প্রথম বছরই তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হওয়ায় তরমুজ চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষে বাকেরগঞ্জের নদীর চরাঞ্চলের এলাকায় বেছে নিয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চরাঞ্চলে যুগের পর যুগ অনাবাদি অবস্থায় থাকা জনমানবশূন্য বিস্তীর্ণ ভূমি এখন তরমুজ চাষে সবুজে পরিণত হয়েছে। উপজেলার তুলাতলী, পায়রা, কারখানা, পান্ডব নদীর চরাঞ্চলে যতদূর চোখ যাবে, দেখা মেলবে তরমুজের আবাদ। 

গারুড়িয়া ইউনিয়নের সাহেবেরহাট এলাকায় কথা হয় গলাচিপার আমখোলা ইউনিয়নের তরমুজ চাষি শাহিন মাহমুদের সাথে তিনি বলেন, গারুড়িয়া ইউনিয়নে তুলাতলা নদীর চড়ে নগদ টাকায় জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। এই বছর ফলন ভালো তার ক্ষেত ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের তরমুজ রয়েছে। ১০ রোজার মধ্যে তার ক্ষেত থেকে তরমুজ বিক্রয় শুরু করবেন। পাইকারদের মাধ্যমে এই তরমুজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাটবাজারে বিক্রয় করা হবে। 

তাছাড়া পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাকেরগঞ্জের চরাঞ্চলে উৎপাদিত তরমুজ রমজান মাসে বাজারজাত করনের চাহিদা বেড়েছে। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বাকেরগঞ্জ থেকে সংগৃহীত তরমুজ সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে খুব সহজে। 

পটুয়াখালী জেলা থেকে তরমুজ চাষ করতে আসা কৃষক খেতের মাঝেই ‘টংঘর’ স্থাপন করে থাকা-খাওয়া আর বিশ্রাম করছেন। চরাঞ্চলে তরমুজের মাঠে  রোদের উত্তাপ এড়িয়ে কৃষক এখন তরমুজ খেতে আগাছা ও পোকা দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পড়ন্ত বিকেলে নদী থেকে পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে ড্রেনের মাধ্যমে শ্রমিকেরা বালতি দিয়ে তরমুজ খেতে পানি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তরমুজ চাষের পরিবেশ ভালো হওয়ায় কিছু কিছু খেতে খুচরা পর্যায়ে তরমুজ বিক্রি শুরু হলেও আগামী ১৫ দিন পরে জমে উঠবে তরমুজের পাইকারি বেচাকেনা।

গলাচিপা আমখোলা থেকে আসা তরমুজ চাষি বারেক  জানান, তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে পায়রা নদীর চরে পাঁচ মাসের জন্য প্রায় ৫০ একর জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। প্রতি একরে উৎপাদন ও পরিচর্যা ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি একর থেকে তিনি দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করেন।

তিনি আরও জানান, তরমুজ চাষে ক্ষতির আশঙ্কা তেমন নেই। সময় কম লাগে। লাভও ভালো। এই বছর তিনি প্রথম বাকেরগঞ্জের স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। তরমুজ বিক্রি শেষে তিনি আবার নিজ এলাকায় চলে যাবেন। তবে সঠিক সময়ে সার ও ঔষধ পেলে ফলন আরো ভালো হতো। তরমুজ চাষিরা অভিযোগ করে বলেন সরকারি কোন সহযোগিতা আমরা পাই না। যদি সরকার আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের উৎপাদিত তরমুজ বিদেশে বিক্রি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তারা সরকারের উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন। 

বাকেরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুনীতি কুমার সাহা বলেন, মাঠ পর্যায়ে তরমুজ চাষীদের কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তারা তরমুজ চাষে পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। প্রতিবছরের তুলনায় এই বছর তরমুজ চাষে কৃষকরা আরো বেশি আগ্রহী হয়েছে। আগামীতে এই অঞ্চলে আরো বেশি তরমুজ চাষ হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে তরমুজ চাষিরা বাজারজাতকরণ করে লাভবান হবেন। 


 

ফয়সাল

×