
ছবি: নির্মাণাধীন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রায় এক লাখ দশ হাজার মানুষের বসবাস থাকলেও নেই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু করলেও মাঝপথে অদৃশ্য কারণে ৯ মাস ধরে থেমে আছে কাজ। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন দুর্গম দ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দারা। দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, স্বাধীনতার ৫৬ বছরেও রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষ রয়েছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। কেউ অসুস্থ হলে নদী ও সমুদ্র বেষ্টিত এই অঞ্চল থেকে রোগী নিয়ে পটুয়াখালীর মূল ভূখণ্ডে আসতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। বিশেষ করে রাতের বেলা ওই অঞ্চলের মানুষের নদী পার হওয়া প্রায় অসম্ভব। এছাড়া বৈরী আবহাওয়া কিংবা বর্ষার মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের সাথে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকে। এমন বাস্তবতায় এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ একর জমির উপর একটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তৈরির টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের তথ্য মতে, দুটি লটের মধ্যে প্রথম লটের কার্যাদেশ মূল্য ১২ কোটি ৬৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা, দ্বিতীয় লটের কার্যাদেশ মূল্য ৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এই প্রকল্প প্রায় ২১ কোটি টাকার কাজ। প্রথম লটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একেএ-পিসি (জেভি) আবুল কালাম আজাদ, প্রাইম কনস্ট্রাকশন। দ্বিতীয় লটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একেএ-পিসি-এমএই (জেভি) আবুল কালাম আজাদ, প্রাইম কনস্ট্রাকশন, মেসার্স আয়ান এন্টারপ্রাইজ । ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল কার্যাদেশ পাওয়া কাজ দুটির মেয়াদ ছিল এক বছর। কিন্তু ২০২৪ এর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরের সময়সীমায় প্রথম লটের ভৌত কাজ ৫৩.৬০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় লটের ভৌত কাজ ৫৭.৬৩ শতাংশের অনুকূলে সমপরিমাণ অর্থ তুলে নেয়।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, দৃশ্যমান কাজের মধ্যে চারতলা হাসপাতাল ভবনের তিনটি ছাদ এবং নিচতলার আংশিক কিছু দেয়ালের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও দুটি কোয়ার্টার ভবন ও একটি সাব-স্টেশন, চলাচলের পথ, বাউন্ডারি ওয়ালসহ বেশ কিছু কাজ আংশিক করে বাকিটা বন্ধ রয়েছে। বহিরাংশের সকল রডগুলো মরিচা পরে কালো হয়ে ক্ষয় হতে শুরু করেছে। প্রতিটি তলায় ভীম-কলামের ঢালাই কাজে পরিপূর্ণ ভাইব্রেশন না হওয়ায় ফাঁকা স্থানে পরবর্তীতে প্লাস্টার করা হয়। দৃশ্যমান ইটের গাঁথুনিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহৃত হয়েছে। ভবনের নীচে পাইলিং থেকে প্রথম তলার ফ্লোর পর্যন্ত ফাঁকা জায়গায় বালু ভরাট হয়নি। এছাড়াও সাব স্টেশন ও কোয়ার্টার ভবনের শুধুমাত্র সিঁড়িসহ কিছু আংশিক কাজ করে বাকিটা অসম্পূর্ণ রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, “রাঙ্গাবালীতে একটা হাসপাতাল নাই, আমাদের খুবই দুর্গতি। চারপাশে নদীর জন্য আমরা বিপদগ্রস্ত মানুষ, একটা মানুষ অসুস্থ হইয়া মরে গেলেও নদীর জন্য আমরা পটুয়াখালীর ওপার উঠতে পারি না। এই হাসপাতালটা আমাদের খুবই প্রয়োজন। এইটা চালু হলেই আমাদের দুরবস্থা আর থাকবে না। কাজ কেন থেমে রয়েছে জানি না। তবে সরকারের কাছে অনুরোধ হাসপাতাল যেন দ্রুত চালু করে।”
মাঝপথে কাজটি এভাবে পড়ে থাকলে বাহিরে প্লাস্টার রং না থাকায় রোদ বৃষ্টিতে ফেলে রাখা মাল ও বিল্ডিংয়ের গুনাগুণ আরও খারাপ হবে। রড গুলোও বাজেভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন। তিনি সরকারের কাছে দ্রুত এই হাসপাতালের কাজ শেষ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠকে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবি হাসান বলেন, “রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালুর লক্ষ্যে নির্মাণাধীন কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এটি যাতে দ্রুত চালু করা হয় এজন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদফতরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।”
তিনি আরও জানান, ভবন বুঝে পেলে তারা মালামাল এবং জনবল সরবরাহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চালু করতে পারবেন।
এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠকে পটুয়াখালী স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলতাব হোসেন বলেন, “স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে চতুর্থ ধাপের অপারেশন প্লানের মেয়াদ ছিল ২০১৯-২৩ সাল অর্থাৎ পাঁচ বছরের জন্য। এর মধ্যে যতটুকু সম্ভব কাজ করানো হয়েছে। পঞ্চম মেয়াদের অপারেশন প্ল্যান চালু না হওয়ায় কাজটি স্থগিত রয়েছে।”
এই কর্মকর্তা আরও জানান, সরকার চাইলে অপারেশন প্ল্যানের বাহিরে যেসব ফান্ড রয়েছে সেখান থেকে ফান্ড দিয়ে স্থগিত রাখা কাজ পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে।
এমটি