ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১

আমতলীতে একই ঠিকাদার নির্মাণ করেন

আট মাসে ভেঙে পড়েছে ১০ সেতু

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা

প্রকাশিত: ২২:১৫, ১ মার্চ ২০২৫

আট মাসে ভেঙে পড়েছে ১০ সেতু

.

আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন খালে ২০০৮ সালে একই ঠিকাদারের নির্মিত ১০ আয়রণ সেতু আট মাসের মধ্যে ভেঙে পড়েছে। এ ১০ সেতুর মধ্যে শুক্রবার রাতে চর রাওঘা সেতু ভেঙে  গেছে। সেতুগুলো ভেঙে পড়ায় চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই ১০ সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার হলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম মৃধার শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী। 
জানা গেছে, আমতলী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০৭-০৮ অর্থবছরে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন খালে ২১টি আয়রণ সেতু নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে। প্রত্যেক সেতু নির্মাণে ২ কোটি টাকা করে বরাদ্দ হয়। ওই সেতুগুলোর কাজ পায় তৎকালীন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা। অভিযোগ রয়েছে সেতু নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা প্রভাব খাটিয়ে দায়সারা কাজ করেছেন। লোহার রেল পাতির বিম ও অ্যাঙ্গেল দেওয়ার কথা থাকলেও উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সঙ্গে আঁতাত করে নি¤œমানের লোহার বিম ও অ্যাঙ্গেল দিয়ে সেতু নির্মাণ করেছেন। সেতু নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর বিম নড়বড়ে হয়ে যায়। গত ১৩ বছর ধরে ওই নড়বড়ে সেতু দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ চলাচল করে আসছেন। গত বছর জুন মাসে সেতুগুলো ভেঙে যাওয়া শুরু হয়। ওই বছর ২২ জুন বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস নিয়ে হলদিয়া হাট সেতু ভেঙে ১০ জন নিহত হয়। শনিবার হলদিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সেতুগুলোর ভাঙা অংশ খালে পড়ে আছে। মানুষ খালের মধ্যে বিকল্প বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে পারাপার হচ্ছে। চাওড়া চন্দ্রা গ্রামের নাসির হাওলাদার বলেন, চাওড়া নদীতে নির্মিত দুটি সেতু আট মাসের মাথায় ভেঙে পড়েছে। এভাবে হলদিয়া ইউনিয়নের অনেক সেতু ভেঙে পড়েছে। নির্মাণের ১৮ বছরের মাথায় এভাবে  সেতু ভেঙে যাবে তা মেনে নেওয়া যায় না। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
জালাল মীর বলেন, পরপর হলদিয়া ইউনিয়নে সেতুগুলো ভেঙে পড়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রুত সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. হারুন অর রশিদ বলেন, আট মাস আগে সোনাউডা সেতু  ভেঙে পড়লেও উপজেলা প্রকৌশল অফিস কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে যোগাযোগ বিছিন্ন থাকায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। 
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিণ্টু মল্লিক বলেন, গত আট মাসে ১০টি সেতু ভেঙে পড়েছে। এতে হলদিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নের অন্তত ৬৫ হাজার মানুষের যোগাযোগে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছে। ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি। 
ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগস্ট  থেকে তিনি এলাকা ছাড়া। তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ওই সেতুগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভেঙে পড়েছে। সেতুর মেয়াদকাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত কিছু আমি জানি না। তবে না জেনে কিভাবে মন্তব্য করলেন এমন প্রশ্নের সদুত্তর না দিয়ে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন। 
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে সেতু নির্মাণের অনিয়ম তুলে ধরে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 
বরগুনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান বলেন, সেতু নির্মাণ কালেই ঠিকাদার  অনিয়ম করেছেন। এতে সেতুগুলো ভেঙে যাচ্ছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভাঙ্গুরায় আট বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ

সংবাদদাতা, ভাঙ্গুরা, পাবনা থেকে জানান, ভাঙ্গুড়া উপজেলার মন্ডতোষ ইউনিয়নের খালপাট কুঠিপাড়া বড়াল নদীর ওপর হালুয়াঘাটা সেতু নির্মাণ ৮ বছরেও শেষ হয়নি। দুইবার দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার পরিবর্তন হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
জানা যায়, বড়াল নদীর দুই পারে ভাঙ্গুড়া বাজার অবস্থিত। পশ্চিম পারে ভাঙ্গুড়া বাজার ও পূর্ব পারে শরৎনগর বাজার। 
শরৎনগর বাজারে রয়েছে উপজেলা পরিষদ, পৌর সভা কার্যালয়, সদর ইউনিয়ন, খানমরিচ ইউনিয়ন ও দিলপাশার ইউনিয়ন পরিষদ , অষ্টমনীষা ইউনিয়ন পরিষদ  সরকারি বেসরকারি একাধিক ব্যংক, পশু হাট, ধান, গম, সরিষাসহ পাটের বড় হাট। এ হাঠে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর জেলার বিভিন্ন মানুষ ট্রাক বোঝাই করে মালামাল কেনাবেচা করে। এ সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে এসব প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে।
এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে এ নদীর ওপর একটি সেতু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নে স্থানীয় এমপি মকবুল হোসেন ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং কাজও শুরু হয়। কিছু কাজ করেই ঠিকাদার চলে যায়।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৯৬ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ৩৮ লক্ষ ৯৪ হাজার ৬শ’ ৮৮ টাকা। প্রথম দফায় পাবনার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ নিয়েছিল। তারা ৪টি ‘বডার গ্রাড করে চলে যায়। ২ বছর কাজ বন্ধ থাকে। ২য় দফায় দরপত্র আহ্বান করেন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকার। কাজটি পান চট্টগ্রাম নাছিরাবাদের ইউনুস এন্ড বাদ্রার্স।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই পারের অ্যাপ্রোচ সড়ক ও সব স্লাব ঢালাইয়ের কাজ শেষের দিকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮/১০ জন শ্রমিক কাজ করছে। প্রায় ৯০% কাজ হয়েছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হারুন অর রশিদ জানান, সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক ও সব স্লাব ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ হবে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামানিক বলেন, প্রথম ঠিকাদার কাজ না করে চলে যায়। এতে সময় লেগে যায়। বর্তমান ঠিকাদারের কাজের গতি ভালো। ধারণা করছি অল্প দিনের মধ্যে কাজ বুঝে পাবে কর্তৃপক্ষ।

×