
.
মেঘনায় চালিভাঙ্গা, রামপ্রসাদের চর, নলচরসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে রাতভর বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদী ভাঙনের আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হচ্ছে নদীপাড়বাসী বাসিন্দাদের।
জানা যায়, উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নটি একটি দ্বীপের মতো, চারদিকে নদী বেষ্টিত। সড়কপথে সেখানে পৌঁছানোর কোনো ব্যবস্থা নেই, একমাত্র নৌযানই যাতায়াতের মাধ্যম। এর ফলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্রের জন্য এটি সুবিধাজনক জায়গায় পরিণত হয়েছে। রাত বাড়লেই রামপ্রসাদের চরসহ আশপাশের চরগুলোতে শুরু হয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত নদীর বুক চিরে চলে এই তৎপরতা, আর ভোর হওয়ার আগেই চক্রটি উধাও হয়ে যায়। নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে রামপ্রসাদের চর এলাকার প্রায় ১০০ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। এতে তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা ধসে যাচ্ছে, বাড়ছে ভাঙনের ঝুঁকি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান বলেন, নদীর পাড় ঘেঁষে বসবাসরত মানুষের মনে আতঙ্ক-আজ না হয় কাল, তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি সব নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে। দেশে আইনি কাঠামোর দুর্বলতার কারণেই বালুখেকোরা ভয় পায় না। নিয়মিত মামলা হলেও তারা সহজেই জামিন নিয়ে ফিরে আসে। গভীর রাতে লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে তারা। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তার।
চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বালুখেকোদের দৌরাত্ম্যে এলাকার কৃষিজমি ও বসতভিটা হারিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বালু উত্তোলনকারীরা কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর প্রায় ২০ দিন কাজ বন্ধও ছিল, তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও শুরু হয়েছে রাতভর বালু উত্তোলন। তারা জানান, বালুখেকোরা বাল্কহেডগুলো দিনের বেলা নলচর ট্রলারঘাটে রাখে, আর পার্শ^বর্তী সোনারগাঁ ও গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার লুকিয়ে রাখা হয়। বালুবাহী বাল্কহেডগুলো আড়াইহাজার ও বৈদ্যেরবাজার হয়ে মেঘনা সেতুর নিচ দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছায়। বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দিতে গেলে বা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের অবগত করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। ফলে আতঙ্কিত হয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
কুমিল্লা জেলা যুবদলের সদস্য ও মেঘনা থানা যুবদলের সভাপতি পদপ্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ মহসিন মিয়া বলেন, নলচর গ্রামের চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল্লাহ রবি ও তার সহযোগীরা এই অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। এসব অপকর্মের অভিযোগে আগেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে অভিযুক্ত মেঘনা থানা যুবদলের আহ্বায়ক রবিউল্লাহ রবির মুঠোফোনের ০১৭৩৬-৭৫৫১১৫ নম্বরে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজমগীর হোসাইন বলেন, ‘আমি অনেকবার অভিযান চালিয়েছি, কিন্তু তারা রাতের আঁধারে কাজ করে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতা ছাড়া এটি বন্ধ করা কঠিন।
চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রতিদিন বালু উত্তোলন করা হয়। বাধা দেওয়া সম্ভব নয়। যারা বালু উত্তোলন করে, তারাই নদীপথ থেকে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকা চাঁদা ওঠায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যাপী দাস বলেন, কিছুদিন পূর্বে অফিসে ডেকে এনে তাদের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকারপত্র নেওয়া হয়, যাতে তারা ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কার্যক্রমে জড়িত না হন। যেহেতু তারা আইনের তোয়াক্কা না করে আবারও অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে তাই আমি সেনাবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। শীঘ্রই এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।