
ছবি:সংগৃহীত
জামাল নজরুল ইসলাম গবেষণা ও উদ্ভাবন মেলা অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো “চট্টগ্রাম গবেষণা ও উদ্ভাবন মেলা ২০২৫”। চট্টগ্রামের সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাকর্ম ও উদ্ভাবনকে এক প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে এটি দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হয়। মেলার সার্বিক সহযোগিতায় ছিল চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ এন্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি (সিইউআরএইচএস)।
গবেষণা মেলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ চট্টগ্রাম বিভাগের ভেতরে ও বাইরে প্রায় শতাধিক স্টলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ, গবেষণাগার এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট তাদের গবেষণাকর্ম ও বিগত বছরের গবেষণায় অবদান সমূহ তুলে ধরেন। এ আয়োজনের মাধ্যমে গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রচার-প্রসার এবং শিক্ষার্থী ও গবেষকদের গবেষণা এবং উদ্ভাবনে আগ্রহী করবে বলে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ মনে করেন।
মেলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি অনুষদের ৪৭টি বিভাগ, ৩৪ টি ল্যাবরেটরি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫টি গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের মধ্যে কিভাবে বিদ্যমান রিসোর্স এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে আলোকপাত করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ উইমেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও গবেষণা ল্যাবরেটরি এবং চিটাগাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন সার্জারি এতে অংশ নেয়। গবেষণা মেলায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত "ক্ষুদে গবেষক" পর্বে অংশগ্রহণ করে চট্টগ্রামের স্কুলসমূহ। ফ্রোবেল একাডেমি, ফুলকি এবং লিডার’স স্কুল ও কলেজের ক্ষুদে গবেষকদল তাদের গবেষণাকর্ম উপস্থাপনা করে এ মেলায়।
গবেষণা ও উদ্ভাবন মেলার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গবেষণা মেলা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমিন, এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশন এর ট্রাস্টি জনাব এম নুরুল আলম এবং জামাল নজরুল গবেষণা কেন্দ্র পরিচালনা পরিষদের সদস্য সাদাফ সাজ সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “গবেষণা যেন শুধু বিজ্ঞান নির্ভর না হয়ে সমাজ নির্ভর, বাস্তভিত্তিক এবং টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়।”
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার প্রশ্ন রাখেন, “আমাদের গবেষণায় আরো গুরুত্ব দেয়া উচিত। বই মেলা যদি মাসব্যাপী হতে পারে, তাহলে গবেষণা মেলা কেন শুধু একদিন হবে?”
উপ উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, “আমরা এখন ৫ম শিল্প বিপ্লবের যুগে বাস করছি। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমাদের এখনও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারছিনা। সেই ব্যাপারে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।”
মঞ্চে “হাইলাইটেড রিসার্চ টক” শিরোনামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষকগণ তাদের উদ্ভাবন ও গবেষণার গল্প উপস্থিত শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের সামনে তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে অধ্যাপক ড. এস. এম. আবে কাউসার, অধ্যাপক ড. আমীর মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ, অধ্যাপক ড. লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাত হোসেন, অধ্যাপক ড. সাবিনা নার্গিস লিপি, অধ্যাপক ড. এস. এম. সোহরাব উদ্দিন। “প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনা: সম্ভাবনাময় গবেষণা” শীর্ষক সেশনে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি, চুয়েট, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চিটাগাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন সার্জারি (ক্রিকস) এর সংশ্লিষ্ট গবেষকগণ তাদের গবেষণা কার্যক্রম উপস্থাপন করেন এবং কিভাবে আন্তঃপ্রতিষ্ঠানিক রিসোর্স এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করেন।
গবেষণা মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল শিশু-কিশোরদের রোবট-শো ও বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্ভাবনা পরিবেশনা। উক্ত আয়োজনে “জামাল নজরুল ইসলাম স্মারক বক্তৃতা”য় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন এবং বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তারিক আরাফাত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুগলের সেরা বিজ্ঞানী পদকপ্রাপ্ত গবেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইয়াসির খান। বিশেষ বক্তা ছিলেন লন্ডনের ওডিয়াই ইন্টারন্যাশনাল এর প্রধান গবেষক ড. নিকোলা জোনস|
এ বছর প্রবর্তিত "জামাল নজরুল ইসলাম গবেষণা অ্যাওয়ার্ড" পদক বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এর পদকের আওতায় গত দুই বছরের গবেষণা কার্যক্রমের ভিত্তিতে সেরা গবেষক সম্মাননা, উদীয়মান গবেষক পুরস্কার, সেরা নারী গবেষক অ্যাওয়ার্ড, সেরা গবেষণা প্রকল্প, সর্বোচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর গবেষণা, সর্বোচ্চ সাইটেশন অ্যাওয়ার্ড, সেরা গবেষণা শিক্ষার্থী, সেরা বই প্রকাশনা এবং সেরা উদ্ভাবন-সহ মোট নয়টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ এবং পুরস্কার বিতরণ করেন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)।
সেরা গবেষক সম্মাননা:
উদীয়মান গবেষক পুরস্কার পেয়েছেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের প্রফেসর ড. সাবরিনা নার্গিস লিপি, বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. এস. এম. আবে কাউসার, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অধ্যাপক ড. শান্ত বণিক, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দিন, আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক, প্রকৌশল অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল আলীম, বিজ্ঞান অনুষদের ড: এস এম আবে কাওসার, জীববিজ্ঞান অনুষদের ফেরদৌসী আলী, সেরা নারী গবেষক অ্যাওয়ার্ড:
সেরা গবেষণা প্রকল্প বিজয়ী হয় শ্রাবন্তী সাহা, আফরোজা আক্তার তন্বী, মৌরি দে এবং শামীমা নাসরিন | সেরা উদীয়মান গবেষক নির্বাচিত হয় লিপন দাশ, মহব্বত হোসেন, রিফাত ইসলাম|
সেরা গবেষণা শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়: উৎপল দে, মোহাম্মদ আল বেরুনী; আঞ্জেসু পাল, সাবিরা আহমেদ সারা
আঁখি