ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১

কিছুসংখ্যক ছাড়তে নারাজ, নিরাপত্তার কথা ভাবা হচ্ছে ॥ ভিসি

কুয়েটের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হল ছেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস

প্রকাশিত: ০০:৩৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কুয়েটের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হল ছেড়েছে

অনির্দিষ্টকালের জন্য খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

অনির্দিষ্টকালের জন্য খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার প্রশাসনের ৯৯তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর বুধবার সকাল থেকেই হল ছাড়তে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তবে কিছ শিক্ষার্থী হলেই অবস্থান করবে বলে জানিয়েছে, তারা জানায় যে প্রশাসনকে তারা বর্জন করেছে তাদের দেওয়া সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মানতে নারাজ।

এদিকে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা হল ভ্যাকেন্ট করেছি। হলে কোনো রান্না হবে না। আশপাশের হোটেলও বন্ধ রয়েছে। কাজেই হলে যদি কোনো শিক্ষার্থী থাকতে চায় তা হলে তার নিজ দায়িত্বে থাকতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছি।
বুধবার সকালেই কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করছেন। প্রশাসনের নির্দেশে সকাল থেকেই জামা কাপড়, বই খাতাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে নিয়ে কুয়েট ক্যাম্পাস ত্যাগ করে শিক্ষার্থীরা। কেউ ভ্যানে, কেউ রিক্সায় আবার কেউ হেঁটে হেঁটেই ব্যাগ টেনে হল ত্যাগ করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত সাতটি আবাসিক হল থেকেই শিক্ষার্থীরা বের হতে থাকে। অনেক অভিভাবককে দেখা যায় ক্যাম্পাসে এসে তার সন্তানকে বাড়ি নিয়ে যেতে।

কয়েক শিক্ষার্থী জানান, যেহেতু প্রশাসন হল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে এবং একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, সেহেতু নিরাপত্তার কথা ভেবে এবং বাড়িতে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা লাঘব করতে আমরা হল ত্যাগ করছি। তবে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যের পদত্যাগসহ আমাদের যে ছয় দফা দাবি রয়েছে সেই দাবির আন্দোলন চলমান থাকবে। কেউ কেউ বলেন, সামনে ঈদ, অনেকের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়।

কেউ কেউ টিউশনির সঙ্গে জড়িত। সে কারণে নির্দেশনার পরও এসব শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে যায়নি। এখন যার অনেকেই হল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। তবে প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় পর হওয়ার পরও অনেককে হল ছাড়তে দেখা যায়। এ সময় তারা বলেন, গাড়ির টিকিট পাইনি তাই সকালে যাওয়া হয়নি।
অপরদিকে আন্দোলনের শীর্ষে থাকা কিছু শিক্ষার্থী বুধবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত হল ছেড়ে যায়নি। শিক্ষার্থীরা বলেন, সাতটি হল মিলে এখনো শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা হল ছাড়বে না। কারণ যে উপাচার্যকে আমরা বর্জন করেছি তার করা সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের আমাদের কাছে কোন দাম নেই।

এক কথায় প্রশাসেনের এই সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, আজ (বুধবার) আমরা কোনো কর্মসূচি পালন করিনি। তবে কি ধরনের কর্মসূচি আগামীতে পালন করব সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, কুয়েটের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। এর মধ্যে দুই হাজার ৭০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি হলে আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। ছাত্রীদের জন্য হল রয়েছে একটি। বাকি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেসে ও অন্যত্র থাকেন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। তবে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে কুয়েটের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সেখানেই শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়ে ছিল আমরা হল ত্যাগ করব না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বুধবার বেলা ১টার দিকে কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনে গেলে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে দপ্তরে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ তার বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, যে সব শিক্ষার্থী হলে রয়েছে- তাদের চলে যাওয়ার জন্য জোর করা হবে না; তাদের বোঝানো হবে।

তবে কুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম যেহেতু বন্ধ, প্রাচীরগুলোও ভাঙ্গা, নিরাপত্তাও নেই। ফলে নিরাপত্তার জন্যই তাদের চলে যাওয়ার জন্য বোঝানো হবে। তার পরও তারা হলে থেকে গেলে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। কোনো ধরনের জোর করা হবে না কাউকে।

×