ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১

পঞ্চগড়ে ডা. শফিকুর

বাংলাদেশে মেজরিটি মাইনোরিটি মানি না

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ও নীলফামারী

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশে মেজরিটি মাইনোরিটি মানি না

পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান

আমরা বাংলাদেশে মেজরিটি মাইনোরিটি মানি না। যারা এদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন তারা সবাই দেশের সম্মানিত  নাগরিক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বুধবার দুপুরে পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে আয়োজিত জেলা জামায়াতের জনসভায় এই কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমরা নারগরিকদের কোনো দলের বা ধর্মের ভাগবাটোয়ারা করার পক্ষে নই।

এটা করত অতীতের পতিত স্বৈরাচার সরকার। তারা এই জাতীকে টুকরা টুকরা করে মুখোমুখি লাগিয়ে রেখেছিল। যে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে না। সে দেশের মানুষ, মাথা সোজা করে বিশ্বের দরবারে দাঁড়াতেও পারে না। তিনি  বলেন বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর হয়ে গেল, আর কত বছর? এ রকম আমাদের টুকরা টুকরা করে রাখা হবে। আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা আমরা কোন মেজরিটি ও মাইনরিটি মানি না।

আমরা সবাই মিলে ইউনিটি। একটাই জাতি আমরা। আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশী। হ্যাঁ, তার পরেও আমাদের একটা পরিচয় থাকবে আমরা মুসলমান, তিনি একজন হিন্দু, বৈদ্ধ ও খ্রিস্টান। আমরা সবাইকে নিয়ে চলার পক্ষে। এটা সত্য, কেউ যেন কারও ধর্মকে নিয়ে খোঁচাখুঁচি না করেন, শুরশুরি না দেন। বিশেষ করে আমরা মুসলমান ভাইদের বলব আপনারা অন্য ধর্মের ভাই বোনদের কষ্ট দেবেন না। এটাকে আমরা ঘৃণা করি। আমরা সবাই এক হয়ে থাকতে চাই।
আরও বলেন, ভারতসহ সকল দেশ আমরা একি বিশ্বসভার সদস্য। জাতিসংঘের সদস্য আমরা সবাই। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। আমরা অহেতু তাদের আমাদের প্রতিবেশীদের কষ্ট দিতে চাই না। তবে আমাদের প্রতিবেশীরা এমন কিছু আমাদের ওপর চাপিয়ে না দেন, যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য অপমানজনক হয়। যদি এ রকম কিছু যদি তারা করে, দেশের স্বার্থে ভূমিকা পালন করতে সেদিন আমরা কারো চোখের দিকে তাকাবো না।

আমরা বিবেকের দিকে তাকিয়ে বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে আমরা আমাদের দায়বদ্ধতা পালন করতে বাধ্য হোব। পঞ্চগড়ের ন্যায্য অনেকগুলো দাবি এখানো তোলা হয়েছে। তবে সবগুলোর পক্ষে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার কথা রয়েছে। যেহেতু পঞ্চগড় একটি কৃষিপ্রধান জেলা তাই, কৃষি বিদ্যালয় গড়ে উঠলে শিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংখ্যান তৈরি হবে। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বেকারের মালা গলায় না নিয়ে কৃষিতে শিক্ষা নেওয়া ভালো। কারণ একজন কৃষিবিদ এক সেকেন্ড বসে থাকার সুযোগ নেই।

আগামী দিনের বৈষম্যহীন, দুর্নীতি-দুশাসন মুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য তোমাদের আরেকবার গর্জে উঠতে হবে, জেগে উঠতে হবে। আমরা যদি এমন একটি বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারি দেশে কিংবা প্রবাসে বলতে পারি। আমরা গর্বিত, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। পরে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকলকে জামায়াতে ইসলামীর পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় পঞ্চগড় জেলা আমির অধ্যাপক মাওলানা ইকবাল হোসাইনের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিধি সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, শিবিরের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, জাগপা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানসহ জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীসহ অন্তত ৫০ কর্মী সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। 
নীলফামারী ॥ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, আমি ছাত্র ভাইদের বলছি। একদিনের জন্য তোমাদের বেকারত্বের অভিশাপের বোঝা বহন করতে হবে না। পড়াশোনা শেষ করে তরুণরা সার্টিফিকেট নিয়ে বের হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাজের ব্যবস্থা হবে।

নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মা-বোনেরা সমাজের উন্নয়নে সব জায়গায় ইনশাআল্লাহ গর্বের সঙ্গে আপনারাও ভূমিকা রাখবেন। যে দুটো জিনিস এখন পান না, সেই দুটো জিনিসও আপনারা পাবেন। একটি হচ্ছে মর্যাদা আর অন্যটি নিরাপত্তা। এই মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে আপনারা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবেন।
বুধবার বিকেলে নীলফামারীর ডোমার উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে ডোমার উপজেলা পরিষদ মাঠে এক পথসভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। ডোমার উপজেলা জামায়াতের আমির খন্দকার মো. আহমাদুল হক মানিকের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আন্তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রংপুর দিনাজপুর অঞ্চল জামায়াতের পরিচালক ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, অঞ্চল টিম সদস্য মো. আব্দুর রশীদ, নীলফামারী জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার। 
এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা নায়েবে আমির ড. মো. খাইরুল আনাম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, অ্যাড. আল ফারুক আব্দুল লতিফ, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মনিরুজ্জামান মন্টু, প্রভাষক মনিরুজ্জামান জুয়েল, প্রভাষক মো. আব্দুল কাদিম, প্রভাষক মো. ছাদের হোসেন, মাওলানা আবু হানিফা শাহ্, সাবেক ডোমার উপজেলা আমির ও জেলা ইউনিট সদস্য মাওলানা আব্দুল হাকিম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জেলা শাখার সভাপতি তাজমুল হোসেন সাগর, জেলা মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফি, ডিমলা উপজেলা আমির মাওলানা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, জলঢাকা উপজেলা আমির মোখলেছুর রহমান, সৈয়দপুর উপজেলা আমির হাফেজ আব্দুল মুনতাকিম, সৈয়দপুর শহর শাখার আমির শরফুদ্দীন আহমেদ, কিশোরীগঞ্জ উপজেলা আমির মুহাঃ আব্দুর রশীদ শাহ্ সহ বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা। 
জামায়াতে আমির সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও অত্যাচারের অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়ে  বলেন, যারা এই দেশে মেজরিটি (সংখ্যাগরিষ্ঠ) আর মাইনরিটির (সংখ্যালঘু) জিকির তুলে রেখেছিলেন, আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করে বুকে হাত দিয়ে বলছি, তারা যাদের মাইনরিটি বলতেন, এই ভাইদের স¤পদ, ইজ্জত এবং তাদের জীবনের ওপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সাধন করেছেন তারাই। 
অতীতের পতিত স্বৈরাচারী জাতিকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে মুখোমুখি লাগিয়ে রেখেছিল। যে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে না, সে দেশের মানুষ মাথা সোজা করে বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে দাঁড়াতে পারে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর গেল, আর কতদিন আমাদের টুকরা টুকরা করা হবে। আমাদের ¯পষ্ট ঘোষণা আমরা কোনো মেজরিটি বা মাইনরিটি মানি না।

আমরা বাংলাদেশকে গডফাদার, গডমাদারদের বাংলাদেশ, মাফিয়া তন্ত্রের বাংলাদেশ দেখতে চাই না, দেখতে চাই না ফ্যাসিবাদদের বাংলাদেশ। ভারতকে উদ্দেশ করে শফিকুর রহমান বলেন, ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। প্রতিবেশীকে অহেতুক উষ্টা দিতে চাই না। তবে প্রতিবেশীও যেন আমাদের ওপর অসম্মানজনক ও অপমানজনক কোনো কিছু চাপিয়ে না দেয়। যদি তারা এমন কিছু করেন, তা হলে দেশের স্বার্থে আমরা ভূমিকা পালন করতে কারও চোখের দিকে তাকাব না। আমরা বিবেকের দিকে তাকিয়ে বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হব।
মানবিক দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে আর গডফাদারদের বাংলাদেশ দেখতে চাই না, গডফাদারদের বাংলাদেশ দেখতে চাই না, মাফিয়াতন্ত্রের বাংলাদেশ দেখতে চাই না, ফ্যাসিবাদের বাংলাদেশ দেখতে চাই না।

×