জনগণকে বলব আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, জনগণকে বলব আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। পুলিশকে বলব আরও বেশি অ্যাক্টিভ হওয়ার জন্য। যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। এখানে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। কিছুদিনের মধ্যে শুধু পুলিশ নয়, অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও বাড়াব।

বুধবার দুপুরে সাভারের রাজালাখ এলাকায় হর্টিকালচার সেন্টারে কৃষকের মিনি কোল্ডস্টোরেজ কার্যক্রম ও বিএআরসির তৈরি করা খামারি মোবাইল অ্যাপের উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা অপকর্ম করছে তারা আমাদেরই পোলাপান, ওদের বোঝাতে হবে তারা যেন অপকর্ম থেকে বিরত থাকে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শেষ রাতের দিকে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখার জন্য গিয়েছিলাম, সাধারণত আপনারা জানেন শেষ রাতের দিকে ছিনতাই বেশি হয়। এ সময়টায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন কি না এটা দেখার জন্য। আমি দেখেছি, মোটামুটি তারা ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, এই এলাকা যেহেতু শিল্প এলাকা। এখানে কিন্তু অনেক দিন ধরে শিল্পেরও একটা সমস্যা ছিল। গার্মেন্টস নিয়ে আমরা বড় একটা সমস্যা ফেস করেছি। এটা কিন্তু মোটামুটি একটা কন্ট্রোলে আসছে। এজন্য এখানে তৎপরতাও কিন্তু বেশি। এখানে শিল্প পুলিশ আছে, এখানে কিন্তু সেনাবাহিনী আছে, এখানে র‌্যাব আছে, এখানে বিজিবি আছে, আর পুলিশ তো তার দায়িত্ব পালন করেই যাচ্ছে।

যেসব ঘটনা ঘটছে, আমি অস্বীকার করব না যে, ঘটনা ঘটছে না। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু আমরা অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। সবার কাছে অনুরোধ আপনাদের জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।  
কৃষি সম্পর্কে তিনি বলেন, আজ আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি কৃষকদের জন্য মিনি কোল্ড স্টোরেজ উদ্বোধন করার জন্য। আপনারা জানেন শীতের সময়ের সবজিতে কৃষকরা দাম পায় না। ফুল-বাঁধাকপি, গাজর-শালগম এগুলোর দাম অনেক কমে যায়।

এসব সবজি কৃষকরা যেন কিছুদিন রাখতে পারে এবং কিছুদিন পরে বিক্রি করলে একটু ভালো দাম পেতে পারে। শীত থেকে গ্রীষ্মকালে যাওয়ার মাঝামাঝি সময়ে সবজির দুষ্প্রাপ্যতা দেখা যায়। এই সময়টায় কৃষকদের মিনি কোল্ড স্টোরেজ খুব উপকারী হবে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টার আইডিয়া থেকে কৃষকদের জন্য এটা করা হচ্ছে। এবার প্রায় ১শ’ কোল্ড স্টোরেজ করার চিন্তা-ভাবনা আছে। যেসব এলাকায় সবজি বেশি হয় আমরা সেসব এলাকাতেই করব। যেন কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দামটা পায়।
এ সময় রাজধানীর উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা অবনতির বিষয়ে সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘জনগণকে বলব আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আর পুলিশকে বলব আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার জন্য, যেন এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জনবল বাড়ানো হবে।

অপকর্মকারীদের একটু বোঝাতে হবে’ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আমি অস্বীকার করব না যে, ঘটনাগুলো ঘটছে না। কিন্তু ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা লোকজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। যারা এসব (অপরাধ) করছে, এরা আমাদেরই পোলাপান, ওদের একটু বোঝাতে হবে, যেন অপকর্ম থেকে সরে আসে। আরেকটা বিষয়- আমাদের যে স্ট্যাটিসটিকস আছে, এর আগেও কিন্তু এ রকম ঘটনা ঘটেছে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি জমির টপ সয়েল ধ্বংস করে ইটভাঁটিতে মাটি নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কৃষি জমি রক্ষায় ‘কৃষি জমি সুরক্ষা আইন’ করতে যাচ্ছেন তারা। এদিন কৃষকের মিনি কোল্ড স্টোরেজ ও খামারি অ্যাপ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। সাভারের রাজালাখ এলাকায় হর্টিকালচার সেন্টারে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ইটের ভাঁটিতে কৃষি জমির টপ সয়েল নিয়ে কৃষি জমি নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এটা যদি হতে থাকে তাহলে ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য অন্ধকার হয়ে যাবে। এটি যেন না হয় সে কারণে কৃষি জমি রক্ষায় আমরা কৃষি জমি সুরক্ষা আইন করতে যাচ্ছি।

একটা সময় জনসংখ্যার চেয়ে কৃষি জমির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। এখন কৃষি জমি কমেছে, জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। এরপরও কৃষকেরা ভালো উৎপাদনের মধ্য দিয়ে আমাদের একটি সন্তোষজনক পর্যায়ে রেখেছেন।’ 
সাভার ও ধামরাই উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কোনো দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সাভারে গার্মেন্টস সেক্টরের সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম, টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক তালহা জুবাইর মাসরুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ভোরে উপদেষ্টা তার বারিধারা ডিওএইচএসের বাসভবন থেকে বের হয়ে বনানী মোড়, বিজয় সরণি (নভোথিয়েটার), মানিক মিয়া এভিনিউ, কলাবাগান, ইডেন কলেজ হয়ে নিউমার্কেট থানা পরিদর্শন করেন। পরে নিউমার্কেট থানা থেকে শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন, মগবাজার, হাতিরঝিল, পুলিশ প্লাজা হয়ে গুলশান থানায় যান তিনি।
জানা গেছে, গুলশান থানা থেকে ইউনাইটেড হাসপাতাল হয়ে বারিধারার বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। পথে কিছু অলিগলিও ঘুরে দেখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি থানা ও চেকপোস্টে দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি রাজধানীসহ সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকারও নির্দেশনা দেন।