ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১

গাজীপুরে জামিনপ্রাপ্ত দুইভাইকে আদালত চত্বর থেকে তুলে নিয়ে গেল বাদীপক্ষ, আহত ১৩

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গাজীপুরে জামিনপ্রাপ্ত দুইভাইকে আদালত চত্বর থেকে তুলে নিয়ে গেল বাদীপক্ষ, আহত ১৩

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

গাজীপুরে জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় প্রকাশ্য দিবালোকে জনাকীর্ণ আদালত এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে জামিনপ্রাপ্ত বিবাদী দুই ভাইকে অপহরণ করে (তুলে) নিয়ে যায় বাদী পক্ষের সন্ত্রাসীরা। ঘটনার প্রায় সাড়ে তিনঘন্টা পর অপহৃত ওই দুইজনকে গুরুতর আহতাবস্থায় আদালতের গেইটের সামনে রেখে যায় তারা। হামলায় আইনজীবির কর্মচারী ও নারীসহ অন্তত ১৫জন আহত হয়েছেন। বুধবার বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বিচারপ্রার্থী এনামুল হক জানান, জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় জানুয়ারি মাসে শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন স্থানীয় তেলিহাটি এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে এস এম নাজমুল হক। ওই মামলার বিবাদী ১৩জন ইতোপূর্বে জামিনে ছিলেন। বুধবার আদালতে মামলার চার্জশীট জমা হলে বিবাদীরা নির্ধারিত তারিখ বুধবার আদালতে উপস্থিত হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে স্থায়ী জামিন প্রার্থনা করেন। এসময় বাদী পক্ষের আইনজীবী জামিন বাতিলের প্রার্থনা করলে আদালত বিবাদীদের জামিন বহাল রাখার আদেশ দেন। জামিন পেয়ে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় দা, চাকু, চাপাতি ও লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাদী ও তার লোকজন বিবাদীদের পথরোধ করে। বিষয়টি বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ও আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে জানালে তিনি তার কক্ষে বিবাদীদের আনতে দুই কর্মচারীকে পাঠান। কিন্তু আদালতের পশ্চিম পাশে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়ের সামনে তাদের সামনেই বিবাদীদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আইয়ুব আলী (২২) সহ আইনজীবীর দুই সহকারি আহত হন। এছাড়াও জামিনপ্রাপ্ত বিবাদী মিলন মিয়া, বাবুল মিয়া, আলমগীর মৃধা, দোলেনা বেগম, মমতাজ উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন রানা, খোকন মিয়া সহ অপর ১৩জন আহত হন। এসময় হামলাকারীরা জনাকীর্ণ আদালত এলাকা থেকে ওই মামলার বিবাদী শ্রীপুর থানার তেলিহাটি এলাকার আব্দুল মালেকের দুই ছেলে মিলন মিয়া (৩৫) ও বাবুল মিয়াকে (৪০) অপহরণ করে নিয়ে যায়।

গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জামিন নিয়ে বের হওয়ার পরপরই আদালত চত্বরে বিবাদী পক্ষের ওপর হামলা চালায় বাদীপক্ষ। হামলায় ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আইনজীবির দুই সহকারি ও নারীসহ ১৩ জন আহত হন। এসময় হামলাকারীরা দুই বিবাদীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে অপহৃত ওই দুইজনকে গুরুতর আহতাবস্থায় একটি অটো রিকশাযোগে আদালতের প্রধান ফটকের সামনে ফেলে রেখে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এসময় তাদের গায়ে যে জামা কাপড় ছিল তা রেখে দিয়ে অন্য জামা কাপড় পড়িয়ে দেয়।

তিনি আরো জানান, আদালত এলাকার এ ঘটনায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বুধবারের এ ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে দুইজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। তবে তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। বিষয়টি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয়েছে এবং আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভায় আলোচনার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

তিনি জানান, জামিনের পর আদালত থেকে বের হয়ে আসার সময় বিবাদীরা বাদীপক্ষের ৩০/৩৫জন অস্ত্রধারীকে দেখে ভয় পেয়ে বিষয়টি জানালে আমি তাদের নিরাপদে নিয়ে আসতে কর্মচারী পাঠাই। কিন্তু আদালত চত্বরেই তাদের ওপর হামলা চালায় বাদীপক্ষ। এতে আইনজীবী সমিতির দুই কর্মচারীও গুরুতর আহত হন। কর্মচারী আইয়ুব আলীর মাথায় সাতটি সেলাই দিতে হয়েছে।

জিএমপি’র সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, আদালত চত্বরে হামলার ঘটনায় কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাজীপুর আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসিনা আক্তার জাহান বীথি এবং সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম জানান, আদালত এলাকায় সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণ ও নানা হুমকির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আইনজীবীরা। তারা দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানিয়েছেন, আদালত এলাকায় এমন সন্ত্রাসী হামলা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। হামলাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।

আবীর

×