ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

বেতন পাচ্ছেন না সিএইচসিপিরা

বাগেরহাটের কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা ব্যহত 

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট 

প্রকাশিত: ০১:৫৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাগেরহাটের কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা ব্যহত 

কমিউনিটি ক্লিনিক

বাগেরহাটে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবাদান প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) দীর্ঘ সাত মাসের অধিক বেতন পাচ্ছেন না। জেলায় ২১৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৩ টিতে কোন সিএইচসিপি নেই। বাকী ২১১ টির সিএইচসিপিরা বেতন না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

তাছাড়া অনেক কমিউনিটি ক্লিনিকে ঠিকমত ঔষুধ সরবরাহ নেই। ফলে তৃণমূলের সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দৃশ্যত: যথাযথ চলছেনা। এসব ক্লিনিকে আসা সেবা প্রত্যাশিরা প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে জেলার ২১১ টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সমসংখ্যক সিএইচসিপি বেতন পাচ্ছেন না। এতে তারা চরম আর্থিক কষ্টে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া এসব কর্মীরা। কোথাও কোথাও আবার নিয়মিত ওষুধ বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো কোনো কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত প্রদান করা ওষুধের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ।

বাগেরহাট সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন সিএইচসিপিরা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই ক্লিনিকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারাচ্ছেন। কেউ আবার তুলনামূলক কম সেবা দিচ্ছেন। অনেকে আবার নিয়মিত অফিস করছেন না।

বাগেরহাট সদর উপজেলা, কচুয়া ও শরণখোলার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও বাদো খালিসহ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ পাওয়া গেছে। ভোগান্তির শিকার সেবা গ্রহীতারা তাই সিএইচসিপিদের বেতন দ্রুত নিয়মিত করার দাবি করেন।

বাগেরহাট সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মোল্লা মনির হোসেন বলেন, এলাকার লোকজন প্রায়ই ছোট ছোট অসুস্থতাজনিত কারণে এ কমিউনিটি ক্লিনিকে আসেন। এখানকার সেবাদানকারী (সিএইচসিপি) নাকি অনেকদিন বেতন পায় না। এরকম হলে তো আমাদের সেবা দেবে না।’

রহিমাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা জোহরা বেগম নামে এক রোগী বলেন, জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়াসহ যেকোনো সমস্যায় আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকে যাই। তবে চুলকানির ওষুধ এখন আর আগের মতো পাই না। ক্লিনিকের সিএইচসিপি বলেছেন, ওষুধ সরবরাহ কমে গেছে।

সদর উপজেলার রহিমাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, প্রায় ৮ মাস বেতন পাই না। খুবই কষ্টে সংসার চলছে। তারপরও রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

একই উপজেলার সাবেকডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সৈয়দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়া, খুবই কষ্টের। এটা কাউকে বলা যায় না। আর আগে ৩২ প্রকারের ওষুধ দিত, এখন দেয় মাত্র ২০ প্রকার। রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে অতি দ্রুত বেতন ও প্রয়োজনীয় ঔষুধ চালু করার দাবি জানান তিনি।

রাজাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সুবর্না বলেন, জুলাই মাস থেকে আমাদের বেতন হচ্ছে না। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ৭০-৮০ টাকা ব্যয় করে ক্লিনিকে আসি রোগীদের সেবা দিতে। বেতন না পাওয়ার কারণে খুবই হতাশ হয়ে যাচ্ছি। মানসিকতাও ভালো নেই। আমাদের মানসিকতা যদি ভালো থাকে তাহলে রোগীদের আরও বেশি সেবা দিতে পারব। এছাড়া নিয়মিত ওষুধ সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের নির্দিষ্ট নিয়ম করে রোগীদের সেবা দেওয়া উপসহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অনুপম রানী দাস বলেন, আমরা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের পাশাপাশি রোগীদের সেবা দিই। কিন্তু নিয়মিত বেতন পাই। সেখানে সহকর্মীরা যদি বেতন না পায়, তাহলে আমাদেরও খারাপ লাগে। ক্লিনিকের সেবা নিশ্চিত করতে সিএইচসিপিদের বেতন চালু করার দাবি জানান এই কর্মকর্তাও। 

বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক আগে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে চলত। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে একটি ট্রাস্টের আওতায় নেওয়া হয়। এ জন্য সিএইচসিপিদের নিয়োগপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ট্রাস্টের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করিছি, দ্রুত সকল সমস্যার সমাধান হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ আবারও আগের মতো সেবা পাবেন।

শহীদ

×