
গাবতলী-চাষাঢ়া রুটে চালু হলো ঢাকা নগর পরিবহনের এসি বাস সার্ভিস।
রাজধানীর গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া পর্যন্ত সবুজ রঙের (সংশোধিত) ২১ রুট চালু হলো ঢাকা নগর পরিবহনের সাদা রঙের এসি বাস সার্ভিস। বাসটি গাবতলী থেকে শুরু হয়ে শ্যামলী, কলাবাগান, সাইন্স ল্যাব, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান, হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে কাজলা, সাইন বোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া চলাচল করবে।
‘বাস রুট রেশনালাইজেশনের কমিটির রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি আইন অনুযায়ী আগে গ্রিন ক্লাস্টারের ২১ নম্বর রুটটি ছিলো-ঘাটারচর, বসিলা, মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড, শংকর, ঝিগাতলা, সাইন্স ল্যাব, কাঁটাবন, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কাকরাইল, পল্টন, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, হানিফ ফ্লাইওভার, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর।
এই রুটের সঙ্গে রেড (লাল) ক্লাস্টারের ১১ নম্বর রুটের কিছু অংশ যুক্ত করে সংশোধিত গ্রিন ক্লাস্টারের ২১ নম্বর রুটে বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। গাবতলী-চাষাঢ়া পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার পথে ২০ বাস স্টপিজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বাস সার্ভিসে সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ টাকা। প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর আসাদ গেট এলাকায় এই বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক। ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) জনাব মো. সরওয়ার, যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক জনাব মো. সাইফুল আলম প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, গণপরিবহন একটি শহরের মেরুদ-। এটি শুধু যাত্রীদের জন্য নয়, শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত কয়েক বছরে ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থা নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। যানজট, পুরনো বাস, অব্যবস্থাপনা এবং যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল নিত্যদিনের চিত্র।
এই পরিস্থিতিতে আমরা ঢাকা নগর পরিবহন এর মাধ্যমে একটি আধুনিক ও টেকসই গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। ২১নং (সংশোধিত) রুটে এসি বাস পরিষেবা চালু করা আমাদের সেই লক্ষ্যেরই একটি অংশ। এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো অত্যাধুনিক, আরামদায়ক এবং যাত্রীবান্ধব হবে। যাত্রীদের জন্য নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা হবে। আমরা আশা করি, এই পরিষেবা যাত্রীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হবে এবং তারা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।
তিনি বলেন, কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার জরিপে দেখা যায়, যেখানে ঢাকার বাস সেক্টর ২০১৪-১৫ সালে ২৩ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করত, সেখানে তা ২০২৩ সাথে মাত্র ৯ শতাংশ এ নেমে এসেছে। আবার মোটরসাইকেল ট্রিপ ৩ শতাংশ থেকে তিনগুণ বেড়ে ৯ শতাংশ হয়েছে ও ব্যক্তিগত গাড়ি যথাক্রমে ৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে রিক্সার যাত্রীও বেড়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পিক আওয়ারে প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গড়ে গতি প্রায় ৫ কিলোমিটারা, তার মানে হাঁটার গতির সমান। যানজটের কারণে আমাদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, এতে জিডিপির প্রায় ৭-৮ শতাংশ লস হচ্ছে। তাই আমরা গণপরিবহনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি যাতে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও অবৈধ যানবাহনে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা কমে যায় এবং যানজট কমে আসে। এতে আমাদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হবার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
আমরা সড়ক উন্নয়ন নির্ভর উচ্চ বিনিয়োগের উন্নয়ন পরিকল্পনার বদলে গণপরিবহন উন্নয়ন নির্ভর সরকারি বিনিয়োগের দিকে যেতে চাই। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা হালনাগাদ করতে যাচ্ছে। তিনি ডিটিসিএকে বিআরটিসি ও ঢাকা বিআরটি কোম্পানিসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রে নিয়ে ঢাকার বাস সেক্টর সংস্কার করে কিভাবে উন্নত গণপরিবহন সেবা প্রদান করা যায় সেভাবে পরিকল্পনা সাজানোর নির্দেশনা প্রদান করেন।
মো. এহছানুল হক বলেন, আমরা ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থাকে একটি প্রকৃত সেবা খাত হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। বর্তমানে যারা বাস চালক ও শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাস পরিচালনা ও উন্নত যাত্রী সেবা প্রদানের উপযোগী করে তুলতে হবে। এছাড়া এই সেক্টরে বেকার ও শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
সমগ্র ঢাকার বাস সেক্টর ফ্রাঞ্চাইজ সিস্টেমের আওতায় এলে বাস অপারেটররা শুধু মানসম্মত বাস পরিচালনা ও যাত্রী পরিষেবা নিয়ে ভাববে, তাদের রেভিনিউ নিয়ে ভাবতে হবে না। টিকিট থেকে প্রাপ্ত আয় সরাসরি সরকারি খাতে জমা হবে। আর অপারেটররা প্রতি কিলোমিটার বাস পরিচালনার জন্য পেমেন্ট পাবেন।
সিনিয়র সচিব জানান, সরকার পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহযোগিতায় সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নে উন্নত যাত্রীসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ৫০০টি বৈদ্যুতিক বাস নামাতে যাচ্ছে।
এ ছাড়া গণপরিবহন ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল ও আরও উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ১. প্রতিটি রুটে একক কোম্পানির অধীনে বাস পরিচালনা ব্যবস্থা চালু করা। এর ফলে যাত্রীরা একটি সুসংহত এবং নির্ভরযোগ্য সেবা পাবেন। ২. ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করা এবং পর্যায়ক্রমে বাসে র্যাপিড পাসের মাধ্যমে ভাড়া আদায়ের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
এর মাধ্যমে যাত্রীরা সহজেই টিকিট কিনতে পারবে ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা বন্ধ হবে। ৩. বৈদ্যুতিক বাস প্রবর্তন করা। এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমানো এবং জ্বালানি দক্ষতা বাড়বে। ৪. বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশুদের জন্য প্রবেশগম্য গণপরিবহন নিশ্চিত করা।