
গৌরনদী উপজেলার বার্থী এলাকায় পুনর্খনন করা খাল
দখল-দূষণ আর দীর্ঘদিন যাবত খনন না করায় মৃতপ্রায় খালগুলো পুনর্খননের ফলে জোয়ারের পানি ঢুকে খালগুলো নব যৌবন ফিরে পেয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। জেলার গৌরনদী উপজেলার বার্থী, সরিকল ও মাহিলাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে খাল পুনর্খননের বাস্তব চিত্র।
সূত্রমতে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, ফসল উৎপাদন ও কৃষকদের সেচ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৃতপ্রায় ২০ কিলোমিটার খাল পুনর্খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসন, বিএডিসি ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের মাধ্যমে ইতোমধ্যে অধিকাংশ খালের খনন কাজ শেষ করা হয়েছে।
এরমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিএডিসির মাধ্যমে সাড়ে ছয় এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাড়ে বারো কিলোমিটার খাল পুনর্খনন সম্পন্ন হওয়ার শেষপর্যায়ে রয়েছে।
বার্থী এলাকার একাধিক কৃষকরা জানান, পশ্চিম বার্থী খালটি দীর্ঘ ২০ বছরেও পুনর্খনন হয়নি। যে কারণে খালটি মরা খালে পরিণত হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য পূর্বে বোরো মৌসুমে সঠিক সময়ে খেতে পানি সরবরাহ করা যেত না এবং কৃষকদের দ্বিগুণ অর্থ খরচ করতে হতো। বর্তমানে বিএডিসি খালটি পুনর্খনন করার ফলে সেচ সংকট কমে গিয়েছে। এতে উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি খরচ কমে যাবে।
একই কথা জানিয়েছেন, সরিকলের আধুনা ও হোসনাবাদ গ্রামের কৃষকরা। মাহিলাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম শরিফাবাদ গ্রামের একাধিক কৃষকরা জানান, পশ্চিম শরিফাবাদ খালটি দীর্ঘবছর যাবত খনন না করায় জোয়ারের পানি উঠতে পারত না। বর্তমানে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে খালটি পুনর্খনন করায় প্রায় পাঁচ সহ¯্র্রাধিক কৃষক উপকৃত হবে।
বিএডিসির বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ ওয়াহিদ মুরাদ জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৌরনদীতে সাড়ে ছয় কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে খনন কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। সঠিক নিয়মে খনন কাজ সার্বক্ষণিক পরিদর্শনের জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএডিসির গৌরনদী অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আলম চৌধুরী বলেন, ডিজাইন অনুযায়ী খালগুলো পুনর্খননের জন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে। খালের পুনর্খনন কাজ সম্পন্ন হলে দুই হাজার একশ’ একর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। তিনি আরও জানান, বর্ষার শেষ সময়ে কৃষকদের জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রতি কিলোমিটার খালে চারটি করে ওয়াটার পাস আউটলেট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী অহিদুর রহমান জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ‘টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় মাহিলাড়া ও সরিকলে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে বারো কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করা হয়েছে। খালগুলো পুনর্খননের ফলে কয়েক হাজার কৃষক সেচ সুবিধা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, পূর্বে বোরো মৌসুমে পানির জন্য কৃষকদের বেগ পেতে হতো। যেই এলাকায় খালগুলো পুনর্খনন করা হয়েছে সেই এলাকায় এখন আর সেচ সংকট নেই। যে কারণে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, খালগুলো খননের ফলে পরিবেশ সুরক্ষা বৃদ্ধির পাশাপাশি জীব বৈচিত্র্য রক্ষা ও দেশীয় প্রজাতের মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভরাট হওয়া খালগুলো খনন করায় কৃষির প্রসার যেমন ঘটবে, তেমনি কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, দখলের কারণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল টরকী-সাউদের খালের এক কিলোমিটার এলাকা। ওইসব দখলদারদের উচ্ছেদ করে সেই এক কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করা হয়েছে। উপজেলার অন্যান্য মরা খালগুলো চিহ্নিত করে পুনর্খননের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।