ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

শোক ও শ্রদ্ধায় জাতীয় শহীদ সেনা দিবস পালন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শোক ও শ্রদ্ধায় জাতীয় শহীদ সেনা দিবস পালন

বনানী সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকা-ের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোনাজাত করেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা

শ্রদ্ধা ও শোকের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস। মঙ্গলবার যথাযথ মর্যাদায় এ দিবসটি পালিত হয়। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারিতে বিজিপি (তৎকালীন বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এবারই প্রথম অন্তর্বর্তী সরকার দিবসটিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
দিনটি উপলক্ষে এদিন বনানীস্থ সামরিক কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শাহাদাত বরণকারী সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী , তিন বাহিনী প্রধান ও নিহতদের স্বজনরা। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র
সচিব ও বিজিবির পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বনানী সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, শহীদ পরিবারের দাবি ছিল দ্রুত বিচার ও শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা। আমরা কিন্তু দুটোই করছি। শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করেছি, আর সঠিক বিচারের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। সকালে বনানীতে সামরিক কবরস্থানে শায়িত পিলখানায় শহীদ সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।  
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পিলখানায় শহীদ সেনাসদস্য ও কর্মকর্তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এখানে এসেছিলাম। প্রতিবছরই এখানে আসা হয়। এবার থেকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। শহীদ সেনা দিবস হিসেবেই এখানে এসেছি। শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যরাও এখানে এসেছেন।
তিনি জানান, শহীদ পরিবারের দাবি ছিল দ্রুত বিচার ও শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা। আমরা কিন্তু দুটোই করছি। শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে, আজকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবেই পালিত হচ্ছে। আর বিচারের দাবিতে কিন্তু তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাদের তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে তারা কাজ শুরু করেছে। কমিশনের তদন্তে যারা যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। 
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়, হত্যা মামলার রায় হয়ে গেছে। সেই মামলায় যারা খালাস পেয়েছেন তাদের অনেকে বিস্ফোরক মামলার আসামি। হত্যা মামলা এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন। কিন্তু বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত ছিল। সেটি শুরু করা হবে কিনা? জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটা তো আমাদের হাতে নেই। এটা কোর্টের হাতে। কোর্ট চাইলে জামিন দিতেই পারে। 
গত ১৫ বছর কেন শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা হয়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, গত ১৫ বছর তারা কেন ঘোষণা করেনি সেটা তো আমি বলতে পারব না। আমরা কিন্তু সঠিক বিচার যাতে হয় সেজন্য তদন্ত কমিশন গঠন করেছি। এটা তদন্ত কমিশন, ইনকোয়ারি কমিটি না। কমিশন প্রধান মর্যাদায় এপিলেট ডিভিশনের জাজের মর্যাদার সমান। কমিশন সদস্যরা হাইকোর্টের জাজের মর্যাদার সমতুল্য। একটাই উদ্দেশ্য সঠিক তদন্ত ও সঠিক বিচার। তারা যেন ভালোভাবে কাজ করেন।
এখন তো বিচারের কথাই বেশি আসছে। সঠিক বিচারের নামে যেন টালবাহানা বা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া না যায় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গত ১৫ বছরের বিষয়ে তো ১৫ বছরে প্রশ্ন করতে পারতেন। এখন তো স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেন। গত ১৫ বছরের বিষয়ে তো আমি উত্তর দিতে পারব না।

এখন যে হারে প্রশ্ন করতে পারছেন, গত ১৫ বছর কি করতে পারছিলেন? এখন তো স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেন। আগে গত ১৫ বছরে তো কত ঘটনা ঘটে গেছে, তখন তো বুক ফেটে গেছে। প্রকাশ করতে পারেননি।
এরপর বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। পরে মোনাজাত শেষে সাংবাদিকদের গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে শহীদ পরিবারের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে আস্থার সংকট ছিল। বর্তমান সরকার পুনরায় তদন্ত করছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে তদন্ত ও বিচার কাজ সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যেখানে বিগত সরকারের ভালো সিদ্ধান্তকে খারাপ এবং খারাপ সিদ্ধান্তকে ভালো বলা হচ্ছে। বিগত সরকার যেটাকে হ্যাঁ বলেছে, এখন সেটাকে না বলছে এবং যেটাকে না বলেছে, এখন সেটাকে হ্যাঁ বলা হচ্ছে, ঢালাওভাবে।

নিজের পরিবারের একজন সদস্যকে হারানোর ব্যথা উল্লেখ করে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, আমিও শহীদ পরিবারের সদস্য বলা যায়। আমার ভাগ্নে, শহীদ কর্নেল কুদরত-ই-এলাহী রহমান শফিক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতির সময় হয়েছিল। কিন্তু সেই মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞে তিনি শহীদ হয়েছেন। তার জন্য সবসময় অন্তরে ব্যথা অনুভব করি।

×