
অমর একুশে বইমেলার শিশু চত্বরে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বই সংগ্রহ করছে খুদে পাঠকরা
অমর একুশে বইমেলা শেষ হচ্ছে। ২৮ দিনের মেলার ২৫ দিন ইতোমধ্যে গত হয়েছে। আজ বুধবার ২৬তম দিন। ২৮তম দিনে শুক্রবার মেলা শেষ হবে। বিদায়বেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। বই কেনার আগ্রহ এবং অভ্যাস যাদের আছে তারা বেশি আসছেন মেলায়। যার যে বই পছন্দ চটপট কিনে ফেলছেন। মঙ্গলবার হাতে বই নিয়ে মেলা থেকে ফিরতে দেখা গেছে অনেককে। বিক্রি বাড়বে এমন আশায় শেষ বেলায়ও আনা হচ্ছে নতুন বই।
মেলার শেষ বেলায় এসে দেখা যাচ্ছে, এবারও বিচিত্র বিষয়ের ওপর বই লেখা হয়েছে। আবার এমন কিছু বইকেও নতুন বলে প্রচার করা হয়েছে যেগুলো আসলে নতুন নয়। আগে হয়তো এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাপা হয়েছে। এবারের মেলায় এসেছে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে। বিভিন্ন সময়ে জনপ্রিয় লেখকদের লেখা গল্প বা উপন্যাস এক মলাটে এনে সেটির গায়ে ‘নির্বাচিত’ ‘শ্রেষ্ঠ’ ইত্যাদি লিখে বিক্রির তথ্যও ঢের পাওয়া গেছে।
প্রকাশনাগুলো হাতে নিয়ে দেখা গেছে প্রকৃত অর্থে ‘শ্রেষ্ঠ’ বা ‘নির্বচাতি’ বিবেচনায় এসব বের করা হয়নি। বিক্রির তথ্য সেভাবে পাওয়া না গেলেও, উপন্যাসের কাটতি বেশি বলে জানা গেছে। গত কয়েক দশক ধরে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা কথাসাহিত্যিকদের বই এবারও আগ্রহ নিয়ে সংগ্রহ করেছেন পাঠক। না বললেই নয়, প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের প্রায় সব ধরনের রচনা বিপুল পরিমাণে বিক্রি হয়েছে। যে স্টলে এই লেখকের বই আছে সে স্টলেই ভিড় করতে দেখা গেছে ভক্তদের।
অন্যপ্রকাশ কাকলী অনন্যা বা সময়’র মতো প্যাভিলিয়নে হুমায়ূনকেই বেশি খোঁজা হয়েছে। নতুন সময়ের ঔপন্যাসিকদের মধ্যে সাদাত হোসাইনের কাটতি বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া কোনো কোনো ব্যক্তির লেখা বইও লাইন দিয়ে কিনতে দেখা গেছে। ভালো চাহিদা ছিল অনুবাদ গ্রন্থের। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করা বা বড় পুরস্কার জেতা লেখকদের বই নিয়মিত বিক্রি হয়েছে। সায়েন্স ফিকশনের দিকে ঝোঁক ছিল ছোটদের।
এ ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তার লেখা সায়েরন্স ফিকশন মেলায় এবার কম প্রদর্শন করা হলেও, পাঠক নিত্যদিন খোঁজ করেছেন। শিশুদের বইও ভালো বিক্রি হয়েছে মেলায়। মজার গল্প রঙিন ছবি আকর্ষণীয় ইলাস্ট্রেশন আকৃষ্ট করেছে বাচ্চাদের। কাব্যগ্রন্থ প্রচুর প্রকাশিত হলেও বিক্রি কম ছিল।
আলাদা করে বলা যায় সেবা প্রকাশনীর কথা। সেবার বই শৈশবের রোমাঞ্চ নিয়েই কিনছেন পাঠক। এসবের বাইরে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা ও তাদের মতাদর্শ প্রচারের বই ব্যাপকভাবে সামনে রাখা হয়েছে।
তবে এবারের প্রকাশনার যে দিকটি সবচেয়ে হতাশার সেটি হচ্ছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বইয়ের সংখ্যা হঠাৎ কমে গেছে। বায়ান্নোর রক্তবীজ থেকেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। তাই অমর একুশে বইমলো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে গভীরভাবে ধারন করে। কিন্তু এবারের মেলার নতুন প্রকাশনার ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যায়নি। বরং বাঙালির রাজনীতি এবং মুক্তিসংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস নিয়ে লেখা অনেক আকর গ্রন্থ সংশ্লিষ্ট স্টলে গিয়ে পাওয়া যায়নি। এই দৈন্য কার? কেন? প্রশ্ন উঠতেই পারে।
গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা ॥ বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে মঙ্গলবার। ২০২৪ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছে কথাপ্রকাশ।
গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশ (প্লেটো : জীবন ও দর্শন-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া), ঐতিহ্য (ভাষাশহীদ আবুল বরকত : নেপথ্য-কথা- বদরুদ্দোজা হারুন) এবং কথাপ্রকাশ-কে (গোরস্তানের পদ্য : স্মৃতি ও জীবনস্বপ্ন-সিরাজ সালেকীন) মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ প্রদান করা হয়েছে। গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কাকাতুয়া-কে দেয়া হয়েছে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫।