ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

সাজেকজুড়ে পোড়া গন্ধ, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্তরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি ও সংবাদদাতা, খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সাজেকজুড়ে পোড়া গন্ধ, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্তরা

রাঙ্গামাটির সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পরিবার

পোড়া গন্ধ সাজেকজুড়ে। আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেলেও সাজেকে ঢুকতেই অনুভূত হচ্ছে সেই উত্তাপ। চারদিকে পুড়ে ছাই হওয়া মালামালের গন্ধ। পোড়া ক্ষতের মাঝেই সহায়-সম্বল হারিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্তরা। সাজেকের অগ্নিকা-ে রিসোর্ট মালিকদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্র্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী। আগুনে পুড়েছে তাদের ৩৫ বসতঘর। ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা চান এসব নিঃস্ব মানুষ। 
ফায়ার সার্ভিস বলছে, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় আগুনে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। এ অগ্নিকা-ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
সাজেকের অগ্নিকা-ের পর রুইলুই পাড়ার স্টোন গার্ডেনে রাত কাটিয়েছে স্থানীয় লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ। আগুনে লুসাই জনগোষ্ঠীর ১৬টি ও স্থানীয় ত্রিপুরাদের ১৯টি বসতঘর পুড়ে যায়। ঘরের সামান্য কিছু আসবাবপত্র ও লেপ তোষক রক্ষা করতে পারলেও আগুনে ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। 
সাজেকের ভয়াবহ অগ্নিকা-ে রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ও দোকানের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয়রা। আগুনে পুড়ে সহায় সম্বল হারানো মানুষগুলো তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়। এই অবস্থায় নতুন করে বাঁচতে ও নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন তারা।
এদিকে সাজেক রিসোর্ট কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন জানান, বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় কিছুই রক্ষা করতে পারেনি অনেকে। সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অনিত্য ত্রিপুরা আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানীয় মানুষের জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের  কাছে সহায়তা চেয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের রাঙামাটি সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দি জানান, রিসোর্টগুলো কাঠের তৈরি হওয়ায় বাতাসে তীব্রতায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া রিসোর্টগুলোতে অগ্নিনির্বাপণের সরঞ্জাম না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। 
সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণা দেব বর্মন জানান, আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ৩৫টি রিসোর্ট, ৩৫টি বসতবাড়ি, দোকান ১২টি ও রেস্টুরেন্ট ৭টি। তিনি জানান, এটি প্রাথমিক পরিসংখ্যান। এর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

ইতোমধ্যেই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিজিবি, খাগড়াছড়ি সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মো. আ. মোস্তাকিম, সেনাবাহিনীর বাঘাইছড়ি জোন অধিনায়ক কর্নেল খাইরুল আমিন, বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার ও দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ। 
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, অপরিকল্পিত রিসোর্ট নির্মাণ ও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকায় এ দুর্ঘটনার মূল কারণ হতে পারে। এ অগ্নিকা-ে কোনো ধরনের নাশকতা হয়নি বলে জানান বিজিবি, খাগড়াছড়ি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আ. মোস্তাকিম। সাজেকের আগুন লাগার ঘটনায় ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। 
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক, মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ জানান, সাজেকের অগ্নিকা-ে ৯৮টি প্রতিষ্ঠান ভষ্মীভূত হয়েছে। এরমধ্যে কটেজ ৩৫টি, বসতবাড়ি ৩৫টি, রেস্টুরেন্ট ৯টি ও বিভিন্ন দোকান ২০টি। সাজেকে অগ্নিকা-ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন।
এদিকে সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে মঙ্গলবার বিকেল থেকে পর্যটক ভ্রমণের নিরুৎসাহিতকরণ আদেশ তুলে নিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসক জানান। এখন থেকে সেখানে সকল ধরনের পর্যটক ভ্রমণে আর কোনো বাধা নেই।

×