ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে অর্নব, স্ত্রীর পরকীয়ার শিকার ইমন শেখ

খুলনায় খুবি শিক্ষার্থীসহ আলোচিত দুই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:০৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

খুলনায় খুবি শিক্ষার্থীসহ আলোচিত দুই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন

ছবিঃ সংগৃহীত

মহানগরীতে আলোচিত দুটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। এর মধ্যে আলামিন শেখ ওরফে ইমনকে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের কারণে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ছাত্র অর্ণব সরকারকে দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেএমপির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কুতুব উদ্দিন।

তিনি জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি আলামিন শেখ ইমন মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। এই ঘটনায় পরের দিন নিহত ইমনের ভাই রাজিবুল ইসলাম বাদী হয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। ঘটনার পর পুলিশ সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তির সহযোগিতায় নিবিড় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। পরে নগরীর বানিয়াখামার লোহার গেট থেকে বিশ্বজিৎ সাহাকে (৪৩) গ্রেপ্তার করা হয়। বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে আলামিন শেখ ওরফে ইমনের স্ত্রী লামিয়ার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার জের ধরে ইমনকে হত্যা করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, নগরীর বড় বাজারের ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে ভিকটিম ইমনের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক এবং পরে অনৈতিক সম্পর্কে রূপ নেয়। এক পর্যায়ে ইমন ঘটনাটি জেনে গিয়ে বিশ্বজিৎ সাহাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্বজিৎ সাহা ইমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মচারী নাইম ও মুন্সিকে ২০ হাজার টাকায় ভাড়া করে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি  ঘটনার দিন সকাল ৮টার সময় বিশ্বজিৎ, নাইম ও মুন্সী, ট্রাকস্ট্যান্ড কাঁচা বাজারের সামনে উপস্থিত হয়। এ সময় আল আমিন ইমন মোটরসাইকেলে সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার ২২তলা ভবনের সামনে এসে পৌঁছলে বিশ্বজিৎ সাহা ইমনকে চিনিয়ে দিলে মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় নাইম ও মুন্সি আল আমিন ইমনের কোমরে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ইমনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

অপরদিকে গত ২৪ জানুয়ারি নগরীর শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় খুবি ছাত্র অর্ণব সরকারকে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় অর্ণবের পিতা নিতীশ সরকার বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। নগরীর আলোচিত এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য কেএমপির একাধিক চৌকস টিম প্রস্তুত করা হয়। এরপর দীর্ঘ এক মাস যাবত পুলিশ ঘটনাস্থল এবং আশপাশের সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তির সহযোগিতায় নিবিড় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, মূলত সন্ত্রাসী দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে অর্ণব সরকারকে হত্যা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই হত্যা মামলার নয় জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্য শাহরিয়ার সজল ও মাহিন হোসেন শুভ, অর্ণব সরকার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। বাকি আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান না করলেও পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ ছাড়া মামলা সম্পর্কেও তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে।

আলোচিত অর্ণব সরকার হত্যা মামলার গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন, মো. গোলাম রব্বানী (২৬), রমজান শেখ (২৯), জাহিদুল ইসলাম তুরান (২০), সাইফুল গাজী (৩২), জাহিদুল ইসলাম রাজ ওরফে রাজ উজ্জামান রাজু ওরফে রিপন ইসলাম ওরফে গালকাটা রাজু (৩৫), ইনসান শরিফ (২৯), আতিক হাসান ওরফে বান্না (২৫), শাহরিয়ার সজল (২২) এবং মাহিন হোসেন শুভ (২১)।

আসিফ

×