
ছবি : সংগৃহীত
উচ্চশিক্ষিত বেকারদের ৬২ শতাংশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী। আবার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে অনেকে সরকারি চাকরির জন্য স্বেচ্ছায় তিন-চার বছর বেকার থাকেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘রিকমেন্ডেশনস বাই দ্য টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজাইজিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনের মূল প্রবন্ধে এ তথ্য দেওয়া হয়। এ অধিবেশনে ‘শিক্ষা, তরুণদের বেকারত্ব ও তরুণদের উন্নয়ন’ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
ওই অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডিজবসডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাসরুর ও টাস্কফোর্সের সদস্য রুমানা হক। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
ফাহিম মাসরুর বলেন, উচ্চশিক্ষিত বেকারের প্রায় ৬২ শতাংশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী। এর অন্যতম কারণ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বা কলার মতো বিভিন্ন বিষয়ে পড়েন, যার বাজার চাহিদা কম।
ফাহিম মাসরুর আরও বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এমন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ স্বেচ্ছায় বেকার থাকেন; তাঁরা মূলত সরকারি চাকরির জন্য তিন-চার বছর অপেক্ষা করেন। এর পেছনে শুধু বেতন নয়; ক্ষমতায় কেন্দ্রে যাওয়ার লক্ষ্যও থাকে তাঁদের মধ্যে; যা উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকার বৃদ্ধির কারণ।
টাস্কফোর্সের সদস্য রুমানা হক দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার মান, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, লিঙ্গবৈষম্য, নীতিগত সমস্যা প্রভৃতি দূর করতে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ রয়েছে টাস্কফোর্সে।
বিভাজিত শিক্ষাব্যবস্থা বৈষম্য বাড়াচ্ছে
ওই অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সিপিডির ট্রাস্টি রাশেদা কে চৌধূরী।
রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বেশ কটি স্তরে বিভাজিত। অনেক ক্ষেত্রে কোনো জবাবদিহি ও নিয়ন্ত্রণ নেই। শিক্ষাকাঠামোতে থাকা বিদ্যমান উপধারাগুলো বৈষম্য বাড়ানোর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। তাঁর মতে, ‘কওমি মাদ্রাসায় কোনো নিয়ন্ত্রণকাঠামো নেই। আমার দেশে আমার সন্তানেরা কোথায় পড়ছে, কী পড়ছে, তাদের আয়ের উৎস কী—এসব আমরা জানব না, সেটি কীভাবে হয়। এমন বাস্তবতায় আমাদের একটি সমন্বিত কাঠামো প্রয়োজন, যেখানে সবাই দায়বদ্ধ থাকবে। বিভাজিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের সূত্র ধরেই অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে এসেছে। কিন্তু এই সরকারের নানা সংস্কার আলাপের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে আলাপ-আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়নি।
এলোমেলো অবস্থা
অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবছর আমরা ১০ লাখ স্নাতক ডিগ্রিধারী তৈরি করি। তবে এত বিপুল স্নাতকধারী কোনো কাজে আসছে না। কারণ, তারা কী পড়ছে, কোন সিলেবাসে পড়ছে, কেন পড়ছে—এর কোনো জবাবদিহি নেই। পুরোপুরি একটা এলোমেলো অবস্থা।
এ এস এম আমানুল্লাহ জানান, গত ৩২ বছরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র ১০টি বই প্রকাশ করেছে; যার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় প্রায় আড়াই হাজার কলেজ রয়েছে। প্রতিটি কলেজে পরিচালনা পর্ষদ রাজনীতিকরণ হয়েছে, শিক্ষকদের মধ্যে ১০-১২টি পক্ষ।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, বিশ্বব্যাংকের আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এসেছিল, যা বাস্তবায়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আওতায় কিছু ক্লাসে ১০-১২ লাখ টাকার স্মার্ট বোর্ড লাগানো হয়েছে, অথচ অন্যান্য ক্লাসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কথাই শুনতে পায় না, সাউন্ড সিস্টেম নেই। এভাবে প্রকল্পের সব টাকা জলে গেছে।
আমানুল্লাহ বলেন, ‘আমরা এখন সংস্কার উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে পরিবর্তন আনা হচ্ছে; এর মাধ্যমে কারিগরি কোর্স করানো হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পরে আমাদের প্রত্যাশা ছিল অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষা সংস্কার নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেবে। কিন্তু সেটি হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, একটা নির্দিষ্ট সময়, অন্তত তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সবার জন্য একটি সাধারণ শিক্ষাকাঠামো প্রয়োজন। এরপর যে যার চাহিদা অনুসারে আলাদা হয়ে যাবে।’
ফয়সাল