শিহাব কবির নাহিদ
কক্সবাজারে বিমানবাহিনী সদস্যদের সঙ্গে সোমবার স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বিমান বাহিনীর এক কর্মকর্তাসহ অন্তত চার বিমানসেনা রয়েছেন। এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ কক্সবাজার বিমানঘাঁটির কাছে পৌরসভার সমিতিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম শিহাব কবির নাহিদ।
৩০ বছর বয়সী এই যুবক এলাকার নাসির উদ্দিনের ছেলে এবং পেশায় ব্যবসায়ী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর বিষয়টি নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় একজন নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে তা উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত জানা যাবে।
আইএসপিআরের বিবৃতিটি হুবহু তুলে ধরা হলোÑ কক্সবাজারে অবস্থিত বিমানবাহিনীর ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।
উল্লেখ্য, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট হতে একজন স্থানীয় লোকের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমান বাহিনীর প্রভোস্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। এ সময় সমিতিপাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিক স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেয়।
পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতিপাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন যার মধ্যে বিমান বাহিনীর ৪ জন সদস্য (১ জন অফিসার ও ৩ জন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমান বাহিনীর বিধি অনুয়ায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। তবে স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোনো প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমান বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উল্লেখ্য, স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমান বাহিনীর গাড়ির কাচ ভেঙে যায়।
এ ছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি। এমতাবস্থায় একটি কুচক্রী মহল বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গুলিতে উক্ত যুবক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়, যা সত্যি নয়। এক্ষেত্রে প্রচারিত গুলির খোসার ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, উক্ত খোসাটি ফাঁকা গুলির যা প্রাণঘাতী নয় এবং শুধু শব্দ তৈরি করে।
যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, উক্ত ঘটনা প্রকাশে কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের নাম বিমান বাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করেছে- যা সত্য নয়।
উল্লেখ্য, উক্ত ঘাঁটির নাম ২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনে পরিবর্তন করে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার রাখা হয় যা বর্তমানেও বহাল রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। দেশের জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।
