
ইঞ্জিনসংকটে কনটেইনার জট। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা আইসিডিগামী কনটেইনার পরিবহনে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ইঞ্জিন সংকটে আমদানি করা পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহনে তৈরি হয়েছে লেজেগোবরে অবস্থা। তৈরি হয়েছে ঢাকা-কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনারের জট। এতে নির্ধারিত সময়ে আমদানি-রপ্তানির পণ্য কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। বন্দরের ধারণক্ষমতার প্রায় সোয়া দুই গুণ বেশি কনটেইনার জমে গেছে। বর্তমানে ১ হাজার ৮১১টি কনটেইনার ঢাকার কমলাপুরে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও বন্দরের মোট ধারণক্ষমতা ৮২৫ একক কনটেইনার। তবুও ৯৮৬টি কনটেইনার অতিরিক্ত হয়ে সেখানে জমে রয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলপথে পণ্য পরিবহন কমে যাওয়ায় এ অবস্থা। এতে ব্যাহত হচ্ছে বন্দর ও কমলাপুর আইসিডির স্বাভাবিক কার্যক্রম। আগে তিন জোড়া ট্রেন চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকা কমলাপুর আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) পণ্য পরিবহন করত। সেখানে এখন চলছে দুই জোড়া। কখনো কখনো তা একটিতে নেমে আসে।
বন্দর সূত্র জানায়, বর্তমানে আইসিডিগামী আমদানি পণ্যভর্তি প্রায় দুই হাজার কনটেইনার আটকা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
শিপিং এজেন্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আইসিডিগামী কনটেইনার বন্দরে আটকে থাকায় বন্দরের অতিরিক্ত স্টোর রেন্ট আরোপের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে শিপিং এবং ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার ব্যবসাও। মূলত রেলের পণ্য পরিবহনের জন্য নির্ধারিত ইঞ্জিনগুলো সরিয়ে নেওয়ায় বন্দর থেকে কনটেইনারবাহী ট্রেনের জন্য ইঞ্জিনের সংকট তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হওয়া কনটেইনারের ৯৬ শতাংশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহার করে আনা-নেওয়া হয়। বাকি ৩ শতাংশ রেলপথে ও ১ শতাংশের কম নৌপথে পরিবহন হয়। সাধারণত বছরে ১ লাখ টিইইউএস (২০ ফুট সমমান) কনটেইনার আনা-নেওয়া হয় রেলপথে। আগে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০টি কনটেইনার ট্রেনযোগে ডেলিভারি হতো। এখন তা নেমে এসেছে অর্ধেকে। ফলে জাহাজ থেকে খালাস নেওয়ার পরও ডেলিভারি নিতে না পারায় জমছে কনটেইনারের স্তূপ।
আমদানিকারকেরা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুরগামী কনটেইনারবাহী ট্রেন দুটি চলে। যদিও এ সংখ্যাটি চার থেকে পাঁচটির মধ্যে থাকা প্রয়োজন। ট্রেনের অভাবে বন্দরের কনটেইনার ১৫ থেকে ১৬ দিন অপেক্ষা করার পরও ঢাকায় পৌঁছাতে পারছে না। এ পরিস্থিতি বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসের আগে আমদানিকারকদের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। কনটেইনার পরিবহন বিলম্বিত হলে বন্দরের মাশুল চার্জ বাড়বে। যা অবশেষে ভোক্তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে, জট কমাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত বন্দর ও কমলাপুর আইসিডি থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে আমদানিকারকদের নোটিস দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকাস্থ কমলাপুর আইসিডি থেকে কনটেইনার ডেলিভারিতে অত্যন্ত ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোনো কোনো আমদানিকারক তাদের কনটেইনার ২১ দিন বা তারও বেশি সময় ডেলিভারি না নিয়ে বন্দর অভ্যন্তর এবং আইসিডিতে সংরক্ষণ করছেন। এতে চট্টগ্রাম বন্দর ও কমলাপুর আইসিডির স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। এতে বন্দরে কন্টেইনার জট ও পণ্য নিয়ে বিপাকে আমদানি-রপ্তানিকারকরা।
শম্পা