
নিখোঁজ ব্যবসায়ী, পরিবার দাবি অপহরণ
বিগত দুই বছর পূর্বে এলাকার আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে তিন বন্ধু সাজু, রুপম ও সুমন মিলে গরুর খামারের ব্যবসা শুরু করেন।সেই ব্যবসার নিমিত্তে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একেক সময় একেক বন্ধু গরু সংগ্রহ করতে বেরিয়ে পড়ে। এবার নগদ টাকা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে উদ্দেশ্য বেরিয়েছেন তিন বন্ধুর একজন সুমন শিকদার প্রঃ ডাবলু। তবে তিনি যাওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো না ফেরায় পরিবার পরিজনদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতংক ও শংকা। এদিকে নিখোঁজের ঘটনায় পুরো এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন। অনেকে তিন বন্ধুর ব্যবসায়ীক মনমালিন্যর সন্দেহ পোষণ করতেছেন। এমনকি এলাকার কেউ কেউ প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন নিখোঁজ নাকি অপহরণ? তবে ওই ব্যবসায়ী পরিবারের স্পষ্ট দাবি তাকে নাকি অপহরণ করা হয়েছে। তাছাড়া এই বিষয়য়ে করা হয়েছে বাঁশখালী ও সাতকানিয়া থানায় পৃথক জিডি। জিডি পাওয়ার পর বাঁশখালী থানা পুলিশ নড়েচড়ে বসে শুরু করে দিয়েছেন উদ্ধার অভিযান ও তদন্ত কার্যক্রম।
জানাযায়,নিখোঁজ সুমন শিকদার প্রঃ ডাবলু উপজেলার বৈলছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব চেচুরিয়া গ্রামের আনন্দময়ী এগ্রো ফার্মের তিন স্বত্বাধিকারীর একজন। সুমন শিকদার বৈলছড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিলন শিকদারের চতুর্থ পুত্র।
অপহরণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টার দিকে অপহরণের শিকার হওয়া সুমন সিকদার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্য এবং বড় ভাই তার্জেন্ট সিকদার জানায়,গত রবিবার নগদ টাকা নিয়ে সকাল ৬টায় নিজ বাড়ি চেচুরিয়া থেকে বান্দরবান উদ্দেশ্যে রওনা দেন সুমন। এদিন রাতটা বান্দরবানের এক বন্ধুর বাসায় ছিল সুমন।পরের দিন সোমবার তার নববিবাহিত স্ত্রী রুম্পা ঘোষ শিকদারের সাথে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটেও মুঠোফোনে তার কথা হয়। এ সময় স্বামী সুমন সিকদার তাকে জানায়, বিকেলে নেটওয়ার্কের বাহিরে থাকবে এবং সন্ধ্যায় ফিরে এসেই কথা হবে। এরপর থেকে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পরিবারের সকল সদস্য নিখোঁজ নাকি অপহরণ এ নিয়ে আতংক ও শংকার মধ্যে রয়েছে । এ ব্যাপারে বাঁশখালী ও সাতকানিয়া থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি করা হলে পুলিশ উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে। তাছাড়া র্যাব-৭ চান্দগাঁও কার্যালয়েও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
অপহৃত ব্যবসায়ী সুমন শিকদারের স্ত্রী রুম্পা ঘোষ সিকদার বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছে সাত মাস। হঠাৎ এই ঘটনা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি আমার স্বামীকে যেকোনোভাবেই উদ্ধার করা হোক। সে ব্যবসার কাজে বান্দরবান যাওয়ার কথা বলে গত রবিবার ঘর থেকে বের হয়। এরপর বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা ২০ মিনেটে সাদিয়া আক্তার নামে এক আইডি থেকে অজ্ঞাতনামা এক যুবক মেসেঞ্জারে আমাকে ফোন দেয়। ফোনটি আমার ননদ রিসিভ করলে অপর প্রান্তের যুবকটির কথা না বলেই রেখে দেয়। আবার কল করে আমি রিসিভ করি, আমার সাথে কথা না বলেই ফোন আবার কেটে দেয়। পরে জানতে পারি মোবাইল ফোন কল করা আইডিটা ফেইক আইডি।
আনন্দময়ী এগ্রো ফার্মের আরেক অংশীদার সাজু তালুকদার বলেন, আমাদের ব্যবসার মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব ছিল না। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গরুর কেনার জন্য বান্দরবানে যায় সুমন। তার এক আত্মীয় বন্ধুর বাসায় রাত যাপন করেছেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি সুমন সিকদার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমরা বন্ধুরা মিলে সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেছি। তার খোঁজে এখনো বিভিন্ন জায়গায় মানুষ রয়েছে বলেও তিনি জানান।
বান্দরবানে অবস্থানকারী সুমনের মামাতো ভাই আরেক ব্যবসায়িক পার্টনার পুলিশ কনেসটবল রূপম দেবদাসের মুঠোফোনে ও হুয়াটসপে একাধিক কল ও ক্ষুধে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাডা দেয়নি।
বৈলছড়ি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিকাশ দত্ত বলেন, অপহরণে শিকার হওয়া সুমন শিকদার আমার আত্মীয়। দুই বছর ধরে তারা তিনজন মিলে গরুর ফার্মের ব্যবসা করছে। এ ধরনের ঘটনা ন্যাক্কারজনক। আমরা চাই যে যেকোন মূল্যে সুমন শিকদারকে উদ্ধার করে এলাকায় ফিরিয় আনা হউক। বিয়ে করেছে মাত্র সাত মাস হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের মাঝে দিনরাত চলছে কান্না। প্রশাসন তৎপর হলেই মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। সুমন ফিরে আসবে তার বাড়িতে।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, বৈলছড়ি এলাকার যুবকটির নিখোঁজের ব্যাপারে বাঁশখালী থানার সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। সেই সূত্র ধরে তদন্ত শুরু হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। উদ্ধারে পুলিশ মাঠে রয়েছে বলে ও তিনি জানান।
শম্পা