
চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের দুর্ভোগের
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর একটি সেতুর অভাবে চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। প্রতিদিন নৌকা কিংবা ট্রলারে করে ঝুঁকি নিয়ে খরস্রোতা নদ পাড়ি দিচ্ছে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষসহ হাজারো মানুষ। সন্ধ্যার পর খেয়া না চলায় সকাল পর্যন্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে বাসিন্দারা। ফলে এ সময় জরুরি রোগীরা পড়েন মহাবিপাকে। অথচ নদের ওপর একটি সেতু হলে ঘুচে যাবে দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তি। কিন্তু কবে হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই সেতুটি তা জানে না এলাকাবাসী। সদরপুর উপজেলার স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সদরপুর উপজেলা চরমানাইর ও চরনাসিরপুর ইউনিয়ন, ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়ন ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীর চর ইউনিয়ন থেকে দরগাবাজার ঘাট হয়ে ভাঙ্গা ও সদরপুর উপজেলাসহ নানা জায়গায় যেতে পাড়ি দিতে হয় আড়িয়াল খাঁ নদ। চরের হাজারো মানুষ ভোগান্তি থেকে নিস্তার পেতে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এখানে সেতু নির্মাণ হলে অতিরিক্ত ট্রলার ভাড়া না গুনেই সহজেই স্কুল-কলেজে যেতে পারবে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি এই অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না কৃষকদের। এই অঞ্চলে সেতু না থাকার ফলে স্বাস্থ্য সেবা, আইনি সেবা, ফায়ার সার্ভিস সেবাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার মানুষ। এই ইউনিয়নগুলো নদীর কারণে উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাদক, জুয়া, চুরি ডাকাতিসহ অনেক অনৈতিক কর্মকাণ্ড। দরগাবাজার ঘাটে সেতু হলেই সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হতে পারবে এই চরাঞ্চলটি। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলের সড়ক ব্যবহার করে সদরপুর ও ভাঙ্গার অনেক যাত্রী পদ্মাসেতু হয়ে কম সময়ে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে। সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ইউনিয়নের ভ্যানচালক সালাউদ্দিন মুন্সি বলেন, এখানে সেতু হলে আমাদের রাস্তাঘাটও উন্নত হবে। চলাফেরা করে অনেক শান্তি পাব। এলাকায় ফায়ারসার্ভিসের গাড়ি, পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্সসহ যেকোনো গাড়ি সহজে প্রবেশ করতে পারবে। চর নাসিরপুর ইউনিয়নের কৃষক বারেক মৃধা বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সময়মতো বাজারে নিতে পারি না। অনেক টাকা ট্রলার ভাড়া ও ভ্যান ভাড়া দিয়ে বাজারে নিতে হয়। এতে করে আমাদের পণ্যের যে দাম পাই তাতে পোশায় না। একটা সেতু হলে সহজে বাজারে যেতে পারতাম। ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের আছিরন নেছা বলেন, একবার গভীর রাতে আমার এক ভাবির প্রসব বেদনা উঠেছিল। সেই রাতে ঘাটে গিয়ে ট্রলার পাইনি। কত কষ্ট করেছি সেই রাতে। পরে ভোরবেলা ট্রলারচালককে খবর দিয়ে এনে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। ভাগ্য ভালো সেই ভাবি ও তার সন্তান মারা যায়নি। মাদারীপুর শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীর চর ইউনিয়নের বাসিন্দা আকিদুল হক বলেন, এই ঘাট দিয়ে ভাঙ্গা ও সদরপুরে নানা কাজে যাই। একটু রাত হলেই ট্রলার পাই না। এমনও হয়েছে রাতে ট্রলার না পেয়ে আশেপাশের কোনো বাড়িতে মিনতি করে থাকতে হয়েছে। এই এলাকায় সেতু না থাকায় পুলিশ আসতে পারে না। তাই এই এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসা বেড়ে গেছে। স্কুলশিক্ষার্থী হাসিবুল ও রুনা বলে,পরীক্ষার সময় ট্রলার মিস হয়ে যাওয়ায় সময় মতো পরীক্ষা দিতে পারি না। একটু বৃষ্টি হলেই ঘাটে ট্রলার না থাকায় স্কুলেও যেতে পারি না। এতে করে লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছি।’ দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর খান বলেন, এখানে সেতুর অভাবে রোগীরা ঠিকভাবে তাদের চিকিৎসা সেবাটা পায় না। দরগাবাজারে এই সেতুটা হলে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। সদরপুর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মমিন বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা আছে। যদি আমাদের কোনো প্রকল্প বা ডিপিপির মাধ্যমে এটা অনুমোদিত হয় তবে আগামীতে এই সেতুটা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করছি, শীঘ্রই ভালো কোনো সংবাদ জনসাধারণ পাবে।
শম্পা