ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

ক্ষেতের আইলে টমেটো ও ব্রোকলির চাষ, কৃষকের মুখে হাসি

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:০৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০১:০৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ক্ষেতের আইলে টমেটো ও ব্রোকলির চাষ, কৃষকের মুখে হাসি

ক্ষেতের আইলে টমেটো, ব্রোকলির চাষ

৬০ শতক পরিমাণ ক্ষেতে ব্রোকলি চাষ হয়েছে। এ ক্ষেতের আইলে রোপণ করা হয় টমেটো গাছ। দেখতে চমৎকার। তেমনি ফলনও হয়েছে বাম্পার। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার গোপালপুর গ্রামে এক সাথে ব্রোকলি ও টমেটো চাষ করে লাভবান ফারুক আহমেদ।

তিনি বলেন, নভেম্বর মাসের শেষে ব্রোকলি ও টমেটোর চারা রোপণ করেন। প্রায় ৬০ দিনের মধ্যে এতে পূর্ণ ব্রোকলি হয়। গাছে গাছে টমেটোও। প্রতি কেজি ব্রোকলি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। এসব চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এখানে বিক্রি থেকে তিনি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পাওয়ার আশা করছেন। ক্রেতারা ক্ষেতে এসে ব্রোকলি ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে বাজারে নিয়েও বিক্রি করতে হয়। ব্রোকলির সাথে আইলে টমেটোর ভালো ফলন পেয়ে আনন্দিত ফারুক আহমেদ। 

ফারুক আহমেদ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি অফিসের মুড়ারবন্দ ব্লকে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার হিসেবে কর্মরত। অফিসের দায়িত্ব পালন শেষে তিনি নিজ বাড়ির আশপাশে জমিতে শ্রমিক নিয়ে চাষাবাদে মগ্ন থাকেন। ফসল চাষে কৃষকদের দিচ্ছেন নানা পরামর্শ। এভাবে বেশ ব্যস্ততায় তার জীবন কাটছে।  

ফারুক আহমেদ জানান, এই মৌসুমে তিন ধাপে ব্রোকলির চারা রোপণ করেন। এ পর্যন্ত তার উৎপাদিত ব্রোকলি বিক্রি থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা এসেছে। আরো ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষেতে ব্রোকলি ও আইলে টমেটো চাষে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচে ৭২ শতক জমিতে উন্নত জাতের টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, কাঁচা মরিচসহ অন্যান্য সবজি চাষ করেন। এসব সবজি বিক্রি থেকে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আসবে।

প্রায় ১৫ বছর যাবৎ তিনি গোপালপুরে হাইব্রিড জাতের ব্রোকলি চাষ করছেন। তার জমিতে এর চাষ দেখে স্থানীয় চাষিরা উৎসাহিত হয়েছেন। তারাও নিজেদের জমিতে এর চাষে এগিয়ে এসেছেন। তার থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ নিয়ে ব্রোকলি চাষ করেছেন গোপালপুরের কয়েকজন কৃষক। তারাও ব্রোকলি বিক্রি করে লাভবান। তারা (কৃষকরা) জানান, অচেনা থাকা এই সবজিটি এখন এখানের ক্রেতাদের কাছে খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছে। দেখতে যেমন সুন্দন, তেমনি খেতেও স্বাদ। 

ফারুক আহমেদ আরো বলেন, ফুলকপির মতো দেখতে গাঢ় সবুজ রংয়ের শীতকালীন এই ফসলটি হবিগঞ্জের কোথাও দেখতে পাওয়া যেত না। এখন এটি এখানে বেশ পরিচিত সবজি। পুষ্টিগুণে ভরপুর এ সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

ক্রেতারা জানান, সড়কের পাশে ক্ষেত হওয়ায় গাড়ী নিয়ে এসে ব্রোকলি ও টমেটো ক্রয় করে নিয়ে যাওয়া সহজ। আর ফারুক আহমেদের উৎপাদিত ব্রোকলি ও টমেটো বিষমুক্ত। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাহিদুল ইসলাম বলেন, ব্রোকলির সঙ্গে আইলে টমেটো চাষে ফারুক আহমেদ সফল। তার চাষাবাদে উৎসাহিত হয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তিনি প্রায় ২০ বছর যাবৎ ব্রোকলি চাষ করছেন। পাশাপাশি নানা ধরণের সবজিও চাষ করেন। এবারও ভাল ফলন হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারধ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আকতারুজ্জামান  জানান, ফারুক আহমেদের সফলতা দেখে উৎসাহিত হয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় একই সঙ্গে ব্রোকলি ও টমেটো চাষাবাদ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে অনেক কৃষক। বিশেষ করে ব্রোকলিতে ভিটামিন সি রয়েছে। এ সবজিটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণ, বয়স ঠেকায় ও ত্বক সুন্দর রাখে।

তিনি জানান, বিশেষ করে ফারুক আহমেদ কৃষি ব্লকে উপসহকারী কৃষি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বাকী সময়ে নিজ বাড়ির আশাপাশে জমি আবাদ করে বারোমাস সবজি চাষ করে আসছেন। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ। 

শহীদ

×