
বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) রিপোর্টার্স ইউনিটি'র দুই যুগ পূর্তী উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে রিপোর্টার্স ইউনিটি'র কার্যালয়ে প্রাক্তন সদস্যদের বরণ করে কেক কেটে উৎসবের শুরু হয়।
এরপর রাকসু ভবনের নীচ থেকে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই জায়গায় এসে শেষ হয়। তারপর সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিডিসি গ্যালারিতে 'দ্বিযুগবার্তা' স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন ও 'সামসময়িক বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় সংকট ও সম্ভাবনা' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটি'র প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সমীর কুমার দে বলেন, আমি ইউনিভার্সিটির রিপোর্টিং থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রিপোর্ট করতে যেয়ে দেখেছি, সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো ইউনিভার্সিটিতে রিপোর্টিং করা। কারণ এখানে যাদের বিরুদ্ধে লিখা হয়, তাদের কেউ কেউ আমার শিক্ষক। আমি যাদের নিয়ে কাজ করি, তাদের সাথে প্রতিনিয়তই দেখা হয়। যে ছাত্রসংগঠনগুলো আছে, তাদের কেউ আমার বড় ভাই, ছোটো ভাই, কেউ সহকর্মী। তাদের বিরুদ্ধে লিখতে হয়। ফলে আমার এই কাজটিকে মনে হয়েছে ২৫ বছরের সাংবাদিকতায় সবথেকে কঠিন কাজ।
বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার বড় একটা চ্যালেঞ্জ হলো, ক্যাম্পাসে যখন কোনো ন্যায্য আন্দোলন হয়, সেই আন্দোলনে আপনি সাংবাদিকতার ইথিক্সের কারণে শরীক হতে পারবেন না। আমি অনেকগুলো ক্যাম্পাসে দেখেছি, জুলাইয়ের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা ছাত্রদের পক্ষে কিভাবে দাঁড়িয়েছে। জুলাই আন্দোলনে প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা সাংবাদিকের যে ভূমিকা আছে, সেটা অস্বীকার করলে বড় ভুল হবে। এই আন্দোলন বাঁচিয়ে রাখতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা বিরাট ভূমিকা রেখেছে।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আল মামুন বলেন, 'সাংবাদিকতা যে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে গেছে'- এ কথা বললে, সেটা সত্য হবে না। বরং সাংবাদিকতা এক গভীর সংকটের মধ্যে ছিল। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান, অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন এবং এক ধরনের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা; সবকিছু মিলিয়ে আমাদের সাংবাদিকতার একটা অংশ ভয়ানকভাবে আওয়ামী ফ্যাসিজমের পক্ষে দাঁড়িয়ে থেকেছে শুধুমাত্র দূর থেকে রিপোর্ট করে না বরং একসাথে হয়ে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ফ্যাসিস্টরা নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির মধ্যেই থাকতে চায়। কারণ নেটওয়ার্ক ছোট জায়গায় কাজ করে। আর ছোট জায়গা দখল করা সহজ। মহাসড়ক বা রেললাইন অবরোধ করা সহজ, কিন্তু কেউ নদী আটকানোর চেষ্টা করে না, কারণ তা বিশাল। সমাজও একটি নদীর মতো। সাংবাদিকদের বাস্তবতার মধ্যে জাগতে হবে। মিথ্যাবাদী রাখালের গল্পে সবাই রাখালের কথা শোনে, কিন্তু কেউ জানে না বাঘ কী বলছে। সাংবাদিকদের বাঘের কণ্ঠস্বর পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, এদেশে সাংবাদিকতা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি পেশা। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যে কয়টি মূল সেক্টর তারা দখল করছিল, তার ভিতরে অন্যতম একটি হল সাংবাদিকতা। আমরা লক্ষ্য করেছিলাম, বিভিন্ন টকশোতে কে যাবে, সেটাও তারা উপর পর্যন্ত তারা থেকে নিয়ন্ত্রণ করতো।
সংগঠনের সভাপতি লাবু হক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মারুফ হাসান। আলোচনা সভায় রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটি'র বর্তমান ও সাবেক শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা বিকেল তিনটায় প্রাক্তন সদস্যদের স্মৃতিচারণ, সাড়ে পাঁচটায় র্যাফেল ড্র এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হয়।
আবীর