ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

৩৫ বছর আগে হারানো মাকে খুঁজে পেলো সাংবাদিক আশিক 

কাজী খলিলুর রহমান, নিজস্ব সংবাদদাতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৫:১৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৩৫ বছর আগে হারানো মাকে খুঁজে পেলো সাংবাদিক আশিক 

হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা যে কতটা কষ্টকর, তা জানেন কেবল সেই মানুষগুলো, যারা বছরের পর বছর প্রিয় মুখের দেখা পান না। এমনই এক গল্প আশিকুর রহমান জামালের, যিনি ৩৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তার মাকে খুঁজে পেয়েছেন ফেসবুকের মাধ্যমে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর গ্রামের মো. আক্কাস মিয়ার স্ত্রী ঝরনা বেগম নিখোঁজ হন ১৯৮৮ সালে। 

মাত্র তিন বছরের ছোট্ট ছেলে আশিকুর রহমান জামালকে রেখে অজানা এক ভবিষ্যতের দিকে চলে যান তিনি। আত্মীয় স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি।পরবর্তী সময়ে জানা যায়, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কারা এই ঘটনার পেছনে ছিল, তা জানা যায়নি। সেই ছোট্ট ছেলেটি আজ ৪০ বছর বয়সী একজন সাংবাদিক, যিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তার মাকে খুঁজছেন। পাকিস্তান থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে তিনি যোগাযোগ করতেন, আশা করতেন কোনো সূত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেছে, কোনো খোঁজ মেলেনি।

আলো আসলো ফেসবুক থেকেঅবশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ‘দেশ ফেরা’ গ্রুপে পোস্ট দেখেন আশিকুর রহমান জামালের এক খালাতো বোন। পোস্টে এক নারীর আকুতি তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান, তার সন্তান ও পরিবারের কাছে যেতে চান। ভিডিওটি আশিককে দেখানো হলে তিনি নিশ্চিত হন, এটাই তার মা। এরপর যোগাযোগ শুরু হয় এবং একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে মায়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন আশিক ও তার পরিবার।

৩৫ বছরের অপেক্ষার পর পুনর্মিলন৩৫ বছর পর মাকে খুঁজে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি আশিক। তার ভাষায়, ‘মাকে খুঁজে পেয়ে মনে হচ্ছে আমি নতুন একটা পৃথিবী ফিরে পেয়েছি। জন্মের পর থেকেই আমি এতিমের মতো বড় হয়েছি। আজ সেই শূন্যতা পূরণ হলো। ’তবে দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার ফলে ঝরনা বেগম বাংলা ভুলে গেছেন, তিনি এখন হিন্দি ও উর্দুতে কথা বলেন। অন্যদিকে আশিক বাংলা ও ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ, তবে হিন্দি-উর্দু তেমন বোঝেন না। ফলে ভাষার ব্যবধান সাময়িকভাবে বাধা সৃষ্টি করলেও আবেগের বাঁধ ভাঙতে পারেনি। 

আশিকের ছেলে হিমেল ও অন্যরা অনুবাদের মাধ্যমে মা-ছেলের কথোপকথন সহজ করে তুলেছেন।দেশে ফিরতে চান ঝরনা বেগম' ঝরনা বেগম বা বর্তমানে জরিনা বেগম নামেই পরিচিত এই নারী এখন বাংলাদেশে ফিরতে চান। তার স্বজনরা এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।একটি অনন্য দৃষ্টান্তএই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে কীভাবে মানুষ নতুন করে জীবনের মানে খুঁজে নিতে পারে। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, এটি হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের খুঁজে পাওয়ারও মাধ্যম হতে পারে।ঝরনা বেগম ও আশিকের এই পুনর্মিলন যেন আরও অনেক পরিবারের জন্য আশার আলো হয়ে থাকে।

মুমু

×