
ছবি: সংগৃহিত
দখল বাণিজ্যে মরে যাচ্ছে কুমার নদ। দেখার কেউ নেই। মাঝে মাঝে জেলা প্রশাসন কুমার নদটি বাঁচানোর চেষ্টা করলেও কেউ মানে না আইন।
কুমার নদের নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল ফরিদপুর শহর। সময়ের বিবর্তনে সেই শহরই এখন নদটিকে প্রতিনিয়ত দূষিত করে চলেছে। দূষণ আর অবৈধ দখলের কারণে নদটির এখন আর আগের রূপ নেই। নদের বেশকিছু অংশ এতটাই দূষিত হয়েছে যে, দুর্গন্ধে পশু-পাখিরাও এর পানি পান করতে পারে না।
এদিকে, ফরিদপুরের পরিবেশ রক্ষায় কুমার নদের দূষণরোধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল। তা না হলে আর কয়েক বছর পর চেষ্টা করেও কুমার নদকে বাঁচানো সম্ভব হবে না বলেই অভিমত তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুরের হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারের সিংহভাগ, বড় বাজারের সব আবর্জনা ফেলা হয় নদীর পানিতে। পূর্ব পাশে নিউমার্কেট এলাকার মিষ্টি কারখানা ও খাবার হোটেলের সমস্ত বর্জ্র্য, পঁচাবাসি থালা-বাটি ধোয়ার সমস্ত আবর্জনা ফেলা হয় নদীর পানিতে। পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের ড্রেনও নদ'টিতে এসে শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন স্থানের আবর্জনাও নদের পাশে স্তূপ করে ফেলা হয়েছে। ফলে আবর্জনাগুলো নদের পানিতে মিশে জীবাণু ও দুর্গন্ধ সৃষ্টি করছে।
শুধু দূষণই নয়, ফরিদপুর কুমার নদের দুই তীরবর্তী স্থান দখল হয়ে গড়ে উঠছে বড় বড় দালান। তবে প্রশাসন নদটির বিষয়ে যেন একেবারেই উদাসীন।
ফরিদপুর কুমার নদ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতা মো. মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠ কে বলেন, নদটির পানি দূষণমুক্ত রাখতে আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছি এবং এখনো চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা একাধিকবার বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছি, তাতে কোনো কাজ হয়নি। প্রশাসন শুধু আশ্বাস দিয়ে চলেছে দূষণ-দখল মুক্ত হবে, কিন্তু বাস্তবে তা পূরণ হয়নি। দিনদিন দূষণ বাড়ছে, একইসঙ্গে বাড়ছে দখল।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ রক্ষা করতে হলে নদী-নদ বাঁচাতে হবে। তাই প্রশাসন যদি এগিয়ে আসে মাথাভাঙ্গা নদীও বাঁচানো সম্ভব।
নদের তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা জনাব রহিম ইসলাম জনকণ্ঠ কে বলেন, এই নদের পানি আগে সব কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হওয়ায় পানি ব্যবহার করা যায় না। নদটিতে এখন গোসল করা তো দূরের কথা, পানির দুর্গন্ধের কারণে কাছেই যাওয়া যায় না। নদের পাড়ের আরেক বাসিন্দা তানিয়া বেগম বলেন, “আগে আমরা এই নদের পানি দিয়ে রান্নার কাজ করতাম। আর এখন তো গোসলেই করা যায় না”।
কুমার নদে আর্বজনা ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক (ডিডিএলজি) চৌধুরী রওশন ইসলাম জনকণ্ঠ কে বলেন, আমাদের পৌর শহরের যত ময়লা-আর্বজনা ড্রেনের মাধ্যমে কুমার নদে যায়। আসলে আমাদের এ আবর্জনার জন্য নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় এমনটা হয়ে থাকে। তবে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। আমরা পৌর শহরের আর্বজনা ও ড্রেনের ময়লা পানি যেন কুমার নদে না যায় সেজন্য ড্রেনের মুখে নেট দেবো। এতে কিছুটা হলেও পানি দূষণ থেকে বাচাঁতে পারবো।
নদী সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জনকণ্ঠ কে বলেন, নানাভাবে এখন কুমার নদের পানি দূষিত হচ্ছে। একইসঙ্গে হচ্ছে দখল। এই নদ আর আগের মতো নেই। এজন্য আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। যতটুকু সম্ভব আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তারপরও সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই কেবল নদটি আগের রূপে ফিরে আসা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ফরিদপুর কুমার নদটি প্রমত্তা পদ্মার ফরিদপুর জেলার প্রধান শাখা নদ। এই নদটি বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলাতেই বিস্তৃত। ২০ বছর আগেও ফরিদপুর জেলা থেকে বৃহত্তর জেলায় নৌকায় করে ব্যবসা বাণিজ্য চলতো হরদম। ৪০ বছর আগে এই নদ দিয়ে রীতিমত লঞ্চ চলাচল করতো।
ফরিদপুর-গোপালগঞ্জ, টেকেরহাট, মুকসুদপুর, কাশিয়ানি, মাদারীপুর, ডাসা, ডাম্যুইডা, নশরীয়তপুরের সাথেও ছিল নৌকা। সেই যৌবন ভরা ও ব্যবসাবান্ধব নদটি আজ দখল ও ভরাট হয়ে কালের সাক্ষী হতে চলেছে। জরুরি ভিত্তিতে সরকারি হস্তক্ষেপ চান বৃহত্তর ফরিদপুরের মানুষ।
মায়মুনা