ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে একুশের আবেগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, সৈয়দপুর

প্রকাশিত: ১০:১১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে একুশের আবেগ

ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ২১ শে ফেব্রুয়ারী দিবসটি ইতিহাসের পাতায় আর সিমাবদ্ধ নেই। এখন নতুন প্রজন্মরাও প্রভাত ফেরিতে অংশ নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করছে। এমনি এক দৃশ্য দেখা গেছে সৈয়দপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ১০ টায় ‘নবদিগন্ত' নামে একটি ক্রীড়া সংগঠনের ব্যানারে ফুলের মালা নিয়ে পাড়া মহল্লার অর্ধ নগ্ন শিশুরা ভাষা শহীদদের স্মরনে ফুলের মালা প্রদান করছে সৈয়দপুর সরকারী কলেজের শহীদ মিনারের বেদীতে।

তারা মাইকের বাজানো একুশের গানের সাথে ঠোট মিলিয়ে নগ্নপায়ে উঠছে শহীদ বেদীতে। তাদের চোখে মুখে ভাষা শহীদদের প্রতি হৃদয়ে জমানো এক অকৃত্রিম ভালবাসা। শ্রদ্ধার আবেগে বিলিন হয়ে নতুন প্রজন্মের শিশুরা জানান দিচ্ছে এই ভাষার প্রতি তাদের অকুন্ঠ ভালবাসা। চেতনায় ধারণ করে বার্তা দিচ্ছে মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের প্রতীক।

বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে এমন বয়ষী শিশুরা পিতা বা বাড়ির অভিভাবকদের কোলে চেপে শহীদ মিনারে গিয়ে সুন্দর একটি ফুল আনতে ব্যাস্ত থাকে। তবে এবারের ভিন্ন দৃশ্য মুগ্ধ করেছে সকরকে। শহীদ মিনারের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত সৈয়দপুর থানার পুলিশ সদস্যরাও এমন দৃশ্য দেখে হতবাক বনেছেন। মাত্র কয়েক বছর আগে স্থানীয় শিশুরা এ মিনারের শ্রদ্ধা নিবেদনের দিনই মালা ও ফুল বাড়িতে নিয়ে যেত । এবার ঘটেছে ব্যাতিক্রম। ওই শিশুরা সকলের পয়সা একত্রিত করে মালা কিনে শ্রদ্ধায় অর্পণ করেছে শহীদ বেদীতে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোরের কুয়াশার চাদর ভেদ করে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশুরা গিয়েছিল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। ভাষা শহীদদের ভালবাসায় হাতে ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে রেখে আসেন। শহরের ইমরান নামে যুবক জানান, আমার নবদিগন্ত নামে ক্লাব আছে। রাতে মালা কিনে রেখেছিলাম। প্রভাত ফেরিতে যাওয়ার সময় কাউকে খুজে পাইনি। শেষে কোলে সন্তান আর মালা রিক্সায় নিয়ে স্থানীয় কুন্দল কলেজপাড়ার শিশুদের ডাক দেই। তারা ছুটে এসে শৃঙ্খলার সাথে সারিবদ্ধ হয়ে শহীদ মিনারে ফুলের মালা অর্পন করি। এতে তারাও খুশি। তবে এ সকল শিশু এর মমার্থ বুঝে না। তাই এর ইতিহাস জানানো দরকার। তাদের হৃদয়ে গেঁথে দিতে হবে শহীদদের আত্মত্যাগের কাহিনী।

সৈয়দপুর আল ফারুক একাডেমির পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষা সাফিন বলে, বাড়ির পাশে শহীদ মিনার। দাড়িয়ে দেখি। কেউ ডাকে না। এবার আমাদেরকে ডেকেছে। আমরাও মালা দিয়েছি। খুব ভাল লাগছে।  কয়া নং-১ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আদিবা বলে, আমি দাদুর সাথে মালা দিতে এসেছি। শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ায় আনন্দ লাগছে।

'নীরফামারী চিত্র’ নামে সাপ্তাহিক পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মেজবাহুল মিশু বলেন, বাড়ির সকল শিশুকে নিয়ে শহীদ মিনারে এসেছি। তাদেরকে বলেছি, এই দিবসের গুরুত্ব ও এর ইতিহাস। শুনে তারা শ্রদ্ধার সাথে মিনারে উঠে বাজার কেনা ফুল অর্পন করেছে। তারা বইয়ে পড়েছে। তবে বাস্তবে উপস্থিত থেকে উদযাপন করা ভিন্ন এক অনুভুতি তাদের স্পর্শ করেছে।

তবে ভাষা সৈনিক হাবিবুর রহমান বলেন, রক্ত দিয়ে ভিক্তি দেয়া সৈয়দপুরের এই  শহীদ মিনার। শিশুরা এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। এর মাধ্যমে তাদের কাছে ইতিহাস হস্তান্ত করা হচ্ছে। এর চেতনা নতুন একটি দিক নির্দেশনা দিয়েছে। যার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ভাষা মত স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি।

এ দিবসের প্রথম প্রহরে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো: নুর ই আরম সিদ্দিকী পুস্পমাল্য অর্পনে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সাথে সৈয়দপুর থানা পুলিশসহ বিভিন্ন রাজনৈতীক দল ও বিভিন্ন পেশাজীবি, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যন্য শ্রেণী পেশার মানুষজন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

নুসরাত

×