ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

দ্রুত সময়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে ॥ উপাচার্য

কুয়েট প্রশাসন, ছাত্র সংগঠন ও সন্ত্রাসীদের লাল কার্ড

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস

প্রকাশিত: ০০:০৪, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কুয়েট প্রশাসন, ছাত্র সংগঠন ও সন্ত্রাসীদের লাল কার্ড

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)

এখনো থমথমে অবস্থা কাটেনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। উপচার্য, উপ-উপাচার্য, ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ এবং ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রীসহ সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং সন্ত্রাসীদের লাল কার্ড দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

অপরদিকে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। তবে উপাচার্য বলছেন, পদত্যাগ ছাড়া ছাত্রদের সকল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে।  শিক্ষার্থীরাও দ্রুত ক্লাসে ফিরে যাবে। সব  স্বাভাবিক হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে এসে ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলার নিচে সমবেত হতে থাকে।

বেলা ১২টার দিকে তারা জড়ো হয়। ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা এই কুয়েটে হবে না’, ‘নো ছাত্রদল, নো ছাত্রশিবির, নো বৈবিছাআ, অনলি ছাত্র’; ‘রক্ত যখন ঝরছিল প্রশাসন তখন কই ছিল?, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘উই ওয়ান্ট নলেজ নো পলিটিকাল ড্যামেজ’, ‘শিক্ষার্থীর রক্ত ঝরে, প্রশাসন তামাশা করে’, ‘ছাত্র রাজনীতি রেড কার্ড’, ‘বহিষ্কার বহিষ্কার জড়িতদের বহিষ্কার’, ‘দালালি না রাজপথ রাজপথ রাজপথ’, ‘তুমি কে আমি কে আবরার আবরার, ‘দড়ি ধরে মারো টান ভিসি হবে খান খান’- লেখা এসব প্ল্যাকার্ডের সঙ্গে লাল কার্ড  প্রদর্শন করে। এ সময় মুহুর্মুহু স্লোগানে ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা হচ্ছে আমাদের মূল দাবি। এখন যারা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন, তাদের বহিষ্কার করতে হবে। ভিসি স্যারকে পদত্যাগ করতে হবে। উনি আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখিয়ে বয়কট ও বর্জন করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
লাল কার্ড দেখানোর সময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় ৬ দফা দাবি দেওয়া হলেও কুয়েট প্রশাসন সেটা মানেনি। সে কারণে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্রবিষয়ক পরিচালককে বর্জন করা হয়েছে। আমাদের ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আন্দোলন ভিসিবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।

আমরা গত পরশু (১৮ ফেব্রুয়ারি) যখন প্রশাসনিক ভবনে যাই, তখন ভিসিবিরোধী আন্দোলন ছিল না। আমরা যখন চার ঘণ্টা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, তখন সেটা পরিণত হয় ভিসিবিরোধী আন্দোলন। প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এজন্য আমরা নতুন প্রশাসন চাই।
এদিকে, গত মঙ্গলবারে কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮তম বিশেষ সিন্ডিকেট
সভায় গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান কুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম এ হাসেম বলেন, আমরা তদন্তের কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আমাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। অনেক কিছু জোগাড় করতে হবে।

কিন্তু একাডেমিক ভবন তালাবদ্ধ থাকায় আমরা সেই সুযোগটা পাচ্ছি না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা যদি আমাদের সঠিকভাবে সহযোগিতা না করে, তাহলে আমরা সময় মতো রিপোর্ট দিতে পারব না। তিনি সুষ্ঠু তদন্তে সকলের সহযোগিতা চান। 
এ বিষয়ে কুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, পদত্যাগ ছাড়া ছাত্রদের সকল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরসহ গ্রহণযোগ্য সবটাই করা হয়েছে। আশা করছি, ছাত্ররা সকলেই দ্রুত ক্লাসে ফিরবে। যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, তার অবসান হবে।

আর সরকার যদি মনে করে আমরা দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ, তাহলে তারাই আমাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের বিশ^বিদ্যালয়কে ঠিকভাবে পরিচালনা করছি। নিয়োগ থেকে শুরু করে যত অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে- আমরা সব ঠিক করার চেষ্টা করছি। আমরা চাচ্ছি বিশ^বিদ্যালয় একটা নিয়মের মধ্যে আসুক। বিশ^বিদ্যালয়কে ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য সরকার আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা যদি বিশ^বিদ্যালয়কে ভালোভাবে চালাই, তাহলে কেন পদত্যাগ করব? 
কুয়েটের ঘটনাটি একেবারেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের -শিবির সভাপতি ॥ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, কুয়েটে সেই ছাত্ররাজনীতিকে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে, যে ছাত্ররাজনীতি বুয়েটের আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে লিয়াকত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, কুয়েটের ঘটনাটি একেবারেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের। এর সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা এটিকে শিবিরের সঙ্গে মেলাতে চাচ্ছেন, তাদের হীন উদ্দেশ্য রয়েছে। বরং যারাই ‘শিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দাও’ রাজনীতি করেন এটি তাদেরই অপপ্রচার। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন খুলনা মহানগর ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন। 
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের তদন্তসহ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত বুধবার রাতে কুয়েটে সন্ত্রাসী কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান লিটন।

×