ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

ছাত্রদলের আলোচনায় মির্জা ফখরুল

জনমনে সন্দেহ অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের বিষয়ে আন্তরিক কি না

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জনমনে সন্দেহ অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের বিষয়ে আন্তরিক কি না

রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে ঢাকা মহানগরের সদস্য সংগ্রহ, ফরম বিতরণ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে এখন জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,  সেই সন্দেহটা হচ্ছে, আদৌ তারা নির্বাচনের বিষয়ে আন্তরিক কি না।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদল আয়োজিত ঢাকা মহানগরে সদস্য ফরম বিতরণ, সদস্য নবায়ন ও ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন ধারার রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি। তারা চেষ্টা করছেন অতি দ্রুত কিছু কাজ শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার। কিন্তু এর মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থেকে কতিপয় উপদেষ্টা নতুন দল গঠনের কৌশল নিচ্ছেন। পত্রিকায় অনেকেই দেখেছেন যে, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের লোকরা যদি কেউ মাফ চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে তারা অংশ নিতে পারবেন।

এতে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা এখন নিজেদের স্বার্থে ওই ফ্যাসিস্টদের জায়গা দিতে চায়। তার মানে কি আমরা এটা মনে করব যে, তারা সরকারে থেকে তাদের দল গোছানোর জন্য বিভিন্ন রকম কৌশল নিচ্ছেন। সেই কৌশল নিলে আমরা তা হতে দেব না, দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করেই বলছি, যখন রাজনৈতিক দল গঠন হবে তাকে আমরা স্বাগত জানাব। ছাত্র সংগঠন ইতোমধ্যে করেছেন আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। যখন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন আমরা স্বাগত জানাব। তার মানে এই নয় যে, আপনারা সরকারে বসে, সরকারের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করবেন। সেটা কখনই মেনে নেওয়া হবে না। 
ফখরুল বলেন, আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং সরকারপ্রধানকে বলতে চাই, অবিলম্বে এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন। তা না হলে জনগনের যে আস্থা আপনাদের ওপর আছে সেই আস্থাও থাকবে না। আমি আগেই বলেছিলাম যদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা হারায় তাহলে আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। কেন বলেছিলাম তা এখন প্রমাণ হচ্ছে। 
ফখরুল বলেন, আবারও সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, যদি আবার কেউ এক এগারোর কথা চিন্তা করেন, গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে আবার একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকারের দিকে যেতে চান তাহলে কখনোই জনগণ তা মেনে নেবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হযেছেদেশের শিক্ষা খাত।  আমাদের ছেলে-
মেয়েরা এমবিবিএস পাস করে বিদেশে সরাসরি ভর্তি হতে পারে  না। কারণ, উন্নত দেশগুলো মনে করে যে, এখানে যে এমবিবিএস পড়াশুনা হয় সেটা সঠিক হয় না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা দেশে মাস্টার্স পাস করে উচ্চ শিক্ষায় বিদেশে গেলে তাদের আবার ল্যাংগুয়েজসহ বিভিন্ন পরীক্ষা দিতে হয়, যেটা আগে ছিল না। কারণ শিক্ষার ব্যবস্থাটা আগে এমন ছিল যে, একজন শিক্ষার্থী সর্ব বিষয়ে পারদর্শী হতে পারে তার ব্যবস্থা ছিল। 
ফখরুল বলেন, শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, যিনি সকল প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে জাহাজে সমুদ্রে দেখতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা শুধু সমুদ্র দেখার জন্য নয়, ওখানে বসে সমুদ্রের নিচে কি সম্পদ আছে, সমুদ্র যে কি একটা বিশাল সম্পদের ক্ষেত্র যেখান থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিবর্তন হতে পারে যেটাকে ব্লু ইকোনমি বলা হয় সেই বিষয়টা ৭৯-৮০ সালে দেখেছিলেন। সেজন্য আমরা জিয়াউর রহমানকে বলি একজন ক্ষনজন্মা নেতা। 
ছাত্রদের বেশি করে জ্ঞান অর্জন করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই লড়াইটা আমরা এখন একটা ক্রান্তিকালের লড়াইয়ে এসে পৌঁছেছি। এই লড়াইয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধৈর্য, টলারেন্স এবং মেধার চর্চা করা। আর সাইবার ওয়্যার, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাত্রদের সক্রিয় হতে হবে।

শুধু নিজেদের ছবি দিয়ে, একটা মিছিলের ছবি দিয়ে, পোস্টারের ছবি দিয়ে কাজ না করে আসল বিষয় নিয়ে তোমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলতে শুরু করো। এটা তোমাদের দায়িত্ব। তোমরা মোবাইল সেটটা ভালো বুঝো, ওখানে লড়াইটা চালাও, ওই জায়গায় যদি তোমরা লড়াই করতে পারো তাহলে কেউ তোমাদের বিজয় ঠেকাতে পারবে না।
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ফখরুল আরও বলেন, সবাই ডিসিপ্লিন মানতে হবে, ছাত্রদলের নেতা রাকিব, নাছিরের নেতৃত্ব মানতে হবে। অর্থাৎ একটা সুসংগঠিত ছাত্রদল গড়ে তুলতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।  শুধু আন্দোলন, শুধু সংগঠন এসব করলেই চলবে না, আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য অবশ্যই জ্ঞানচর্চাটা করতে হবে। জ্ঞানচর্চাই হবে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে মূল কেন্দ্র। তা না হলে আমরা এগেতে পারব না।
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা মেধাবী তাদের সামনে আনতে হবে। প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে, ধারণা থাকতে হবে। আমি নিজেই ছাত্র রাজনীতির প্রোডাক্ট। আমি ৬০-এর দশকে ছাত্র রাজনীতি করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সেই সময় আমাদের সংগঠন পড়াশোনার জন্য স্টাডি সেল তৈরি করত, সেখানে পড়াশোনা হতো, পরীক্ষা হতো, তার পর পদোন্নতি হতো। পদ পাওয়া নির্ভর করত আমি কতটুকু জানি তার ওপর। এই বিষয়টা যদি আমরা ছাত্র দলের মধ্যে চালু করতে পারি নিসন্দেহে ছাত্রদল হবে শক্তিশালী সংগঠন। তাই আমি অনুরোধ রাখব এ রকম চিন্তাভাবনা নিয়ে আসতে হবে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপি আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, ছাত্রদল ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি সোহাগ ভুঁইয়া, উত্তরের সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ, দক্ষিনের সভাপতি শামীম মাহমুদ, পশ্চিমের সভাপতি রবির খান প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে   ‘গুপ্ত রাজনীতি’ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যে একটি মহল ষড়যন্ত্র লিপ্ত রয়েছে ,যারা গুপ্ত রাজনীতি করে।

আমরা বার বার সভা-সমাবেশে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই গুপ্ত রাজনীতির অবসান চেয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যতবার ছাত্রদলের মিটিং হয়েছে সেখানে আমরা গুপ্ত রাজনীতি বন্ধের ব্যক্ত করেছি।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে আন্ডার গ্রাউন্ড কোনো ছাত্র রাজনীতি চলবে না। যারা আন্ডার গ্রাউন্ডে বেড়ে উঠেছে, যাদের রাজনীতি হলো আন্ডার গ্রাউন্ড এবং গোপনে ও ষড়যন্ত্রমূলক যাদের রাজনীতি তারা আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনীতি থেকে বের হতে পারছে না। তারই ধারাবাহিকতায় কুয়েটে একটি মিছিল থেকে আমাদের ছাত্রদলের সমর্থক ও কর্মীদের ওপরে হামলা চালায়।

অথচ কুয়েটে আমাদের কোনো কমিটি নেই। এই হামলার আগেরদিন সদস্য ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে দেখতে পেরেছি যে, গুপ্ত সংগঠন ও বৈষম্যবিরোধী নামধারী একজন নেতার নেতৃত্বে ছাত্রদলের ভাইদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। সেখানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ওইসব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি। 
ছাত্রদল সভাপতি আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবসহ ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট  সরকারের আমলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরই সবচেয়ে বেশি লড়াই-সংগ্রাম করেছে, হতাহত হয়েছে, লক্ষ হাজার মামলায় কারাভোগ করেছে, গুম-খুনের প্রাণ দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, কিছু কিছু ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকা চলবে না বলে কতিপয় গুপ্ত সংগঠনের নেতারা তাদের একক সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে।

আমরা উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি, তীতুমীর কলেজে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন পরবর্তিতেই যে ছেলেটি সবচেয়ে বেশি পলিটিক্স চলবে না বলে আন্দোলন করেছে, অনশন করেছে এবং শিক্ষক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে পরবর্তিতে দেখা গেলো কিছদিন আগে ছাত্রশিবিবের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে।

আমরা দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছেলেটি সবচেয়ে বেশি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকা চলবে না বলে রাজু ভাস্বর্যে আন্দোলনের ডাক দেয়, বিনা কারণে রাত ১১টার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে পরবর্তীতে দেখা গেল তাকে ছাত্রশিবিরের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। এসব কৌশল বুঝার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশে যে বৃহৎ ঐক্য গড়ে উঠেছে তা কেউ চক্রান্ত করে ভাঙতে পারবে না।

×