
ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসসহ ৬ দফা দাবিতে বুধবার কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
দাবি পূরণ না হওয়ায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্র কল্যাণবিষয়ক পরিচালককে (ডিএসএ) বর্জন করে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনকে বুধবার বেলা একটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার পরও তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বুধবার অনলাইনে সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় গত বছরের ১১ আগস্ট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল, বিশ^বিদ্যালয় আইন অনুযায়ী সকল শিক্ষক ও কর্মচারীকে সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধকরণ, আইন অমান্যকারীদের চাকরিচ্যুতসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সভায় বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সংঘর্ষে আহত সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
বিশ^বিদ্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না এবং থাকলে আজীবন বহিষ্কারের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি; ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা, বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা নেওয়া; ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাখা; আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় প্রশাসন থেকে বহন করা এবং ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবিতে স্লোগান দেয়।
দাবি পূরণ না হওয়ায় বেলা চারটার দিকে দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য প্রফেসর ড. মাছুদ, উপ-উপাচার্য উপাচার্য প্রফেসর ড. এস কে শরিফুল আলম ও ছাত্র কল্যাণবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সুলতানকে বর্জন করে। এর আগে দুপুর দেড়টায় প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা ঝুঁলিয়ে দেয়। তবে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে উত্তেজনা থাকলেও পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
এদিকে, মঙ্গলবার কুয়েটে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। গতকাল বুধবার সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রোভিসি প্রফেসর ড. এস কে শরিফুল আলম জানান, মঙ্গলবারের উদ্ভূত ঘটনায় কুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এমএমএ হাসেমকে সভাপতি করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ছাত্র বল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহ। এ ছাড়া দুজন সদস্য হলেন, শহীদ স্মৃতি হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ আবু ইউসুফ ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবু জাকির মোর্শেদ।
কুয়েট সূত্র জানায়, জরুরি সিন্ডিকেট সভায় গত বছরের ১১ আগস্ট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল, বিশ^বিদ্যালয় আইন অনুযায়ী সকল শিক্ষক ও কর্মচারীকে সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধকরণ, আইন অমান্যকারীদের চাকরিচ্যুতিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ছাড়া সভায় সংঘর্ষে আহত সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মাছুদ।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বুধবার সকাল থেকেই কিছু শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করে। ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে যারা ভাড়া রয়েছেন তাদের ভেতর ভয় এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা রয়েছেন উদ্বিগ্ন।
যুবদল নেতাকে বহিষ্কার ॥ কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নগরীর দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। গতকাল বুধবার যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল ইসলাম নয়ন তাকে বহিষ্কার করেন। যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নূরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বহিষ্কৃত ব্যক্তির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকা-ে জড়িত থাকার দায়-দায়িত্ব দল নেবে না।
ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন ॥ কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মতো কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ করেন।
তারা বলেন, কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির ছাত্ররা রাজনীতি করলে কোনো দোষ নেই। আর ছাত্রদল বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও, তাদের ফরম বিক্রি করতে গেলে হামলা চালানো হয়েছে।
ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, কুয়েটের ছাত্রদলের কর্মীদের উপরে প্রথমে হামলা করেছিল ওই ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির মধ্যে গুপ্তভাবে থাকা একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্ররা।
এ ছাড়া লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে রাহুল জাবেদ, ইফাজ ও ইউসুফ নামক তিন জন ছাত্রদল সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। এ কারণে সেই দোকান মালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সশস্ত্র হামলা চালায় সেই মিছিলকারীদের উপর। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া চলে।
তারা বলেন, ওই সহিংসতায় ছাত্রদলের সমর্থকরা কেবল ভুক্তভোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী। যেহেতু কুয়েটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি এবং এখন পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তারা তিনজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন।
তারা আরও বলেন, এসব ঘটনা চলাকালে এবং পরবর্তীতে কোনোরূপ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সঙ্গে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এই ন্যক্কারজনক সহিংসতাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ছাত্রদলের হামল’ বলে পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার ও সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ খুলনার ছাত্রদলের নেতারা।
মামলা হয়নি ॥ খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, পুলিশের অভিযান অব্যাহ রয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) মো. নাজমুল হাসান রাজীব জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। তবে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। ক্যাম্পাসের গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ সময় তিনি আরও বলেন যে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে এর মধ্যে তিনজন বছরের নিচে তবে তাদের বিরুদ্ধে কেউ যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করে তাহলে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে ঘটনার পর কুয়েতের প্রধান ফটকের সামনেই প্রশাসনের শক্ত প্রহরা ছিল যা বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা গেছে।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষেধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করলে বহিরাগতরা তাদের ওপর আক্রমণ করে বলে অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা এতে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলেও তারা দাবি করে।
এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি আদায় সোচ্চার হয়। দাবিগুলোর মধ্যে কুয়েটে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধ, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ডিএসএ পরিচালকের পদত্যাগ, আহতদের সুচিকিৎসা, অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যারাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের ছাত্রত্ব বাতিল, একইসঙ্গে আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের অন্য দাবির মধ্যে ছিল এই ঘটনায় প্রশাসন তাদের সামনে এসে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
হামলাকারী সবাই শিবিরের-ছাত্রদল সভাপতি ॥ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রকিব বলেছেন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থগিত কমিটির আহ্বায়ক ওমর ফারুকের নেতৃত্বে প্রথমে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে।
আর ওমর ফারুককে আমরা ছাত্রশিবিরের নেতা বলেই জানি। কুয়েট ক্যাম্পাসে যারা হামলা করেছে তাদের সবাইকে শিবিরের নেতা হিসেবে জানি। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢা) টিএসসিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদল সভাপতি রাকিব বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি সাড়া দেয়, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না। কিন্তু পরবর্তীতে শিবির যখন আত্মপ্রকাশ করে কমিটি গঠন করে। সেখানে দেখা যায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অর্থাৎ যারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকবে না বলছে তারাই শিবিরের নেতাকর্মী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আমরা এমন বেশ কিছু ক্যাম্পাসের নাম পেয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের এত বোকা ভাবা ঠিক না। শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট মেধাবী ও রাজনীতি সচেতন রয়েছে বিধায় জুলাই-আগস্ট সফল হয়েছে। তাহলে এভাবে যারা গুপ্ত ও গোপনীয়ভাবে যেভাবে অপরাপর ছাত্রসংগঠনকে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করতে না পারে, সে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমরা শিবিরকে দায়ী করব।
তিনি আরও বলেন, কুয়েটে সাত জানুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটি দিয়েছে এবং শিবিরের কমিটিও রয়েছে। এই শিবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যদি রাজনীতি করতে পারে, আমার ছাত্রদলের সমর্থকরা যদি একটা সমর্থক ফর্ম নিয়ে থাকে তাহলে কি তারা অপরাধ করেছে?
ছাত্রদল সভাপতি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরে সকল ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়ে আমরা যে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার করেছি তা আমরা রক্ষা করতে চাই। কিন্তু এই বৈষম্যবিরোধী নামধারী অল্পকিছু সংখ্যক ক্যাম্পাসে গুপ্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাত্র রাজনীতি থাকবে না বলে যে অপপ্রচার চালায় এবং সেজন্য যে গ্রাউন্ড ওয়ার্কগুলো করে এবং যখন ব্যর্থ হয় তখন তারা শিবির হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারেন তিতুমীর কলেজের শিবিরের সাধারণ সম্পাদক।
আপনারা লক্ষ্য করবেন ৭ আগস্ট থেকে কলেজের যে শিবিরের সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন তিনি গ্রুপগুলোতে প্রতিদিন প্রচুর প্রচারণা চালাতেন যে, তিতুমীরে ছাত্র রাজনীতি চলবে না। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই রাজু ভাস্কর্যে বেশ কিছু কর্মসূচি করার চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমন কিছুতে সাড়া দেয়নি। পরবর্তীতে শিবিরের যখন কমিটি প্রকাশ করা হলো সেখানে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি চাইবে না তারাই নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, বৈষমবিরধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েট কমিটির আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক এ হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের যারা আত্মপ্রকাশ করতে ভয় পেয়েছে, সেই শিবির কাল ছাত্রদলের ওপর হামলা চালায়।
তাদের নির্যাতনের মাত্রা এতই ছিল যে, আহত শিক্ষার্থীরা দোকানে আশ্রয় নিলে দোকানিকেও কথিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী ও শিবির হামলা করে। পরে গ্রামবাসীর সঙ্গে হামলার ঘটনা ঘটে। এর পর ছাত্রদলের নামে এক ধরনের মব তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, কথিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা যদি হামলায় অংশ না নিত সংঘাত এত বড় হতো না। প্রকাশ্যে সবারই রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। খুলনায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে চায়।’ নাসির উদ্দিন নাসির আরও বলেন, বাংলাদেশের বড় বড় যত অগ্নিকা- হয়েছে, সেগুলো ছোট ছোট শর্ট সার্কিট থেকে তৈরি হয়েছে। গতকাল সেই কাজ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশৃঙ্খল মব।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরে বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ ॥ স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস থেকে জানান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে যশোরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার বিকেলে প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ওই শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি শহরের মুজিব সড়ক, ভোলা ট্যাংক রোড, রেলরোড হয়ে চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে তারা হামলার প্রতিবাদে ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের বিচার করো, করতে হবে’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘শিক্ষা ও সন্ত্রাস একসাথে চলে না’, ‘অবিলম্বে হামলাকারীদের বিচার করো, করতে হবে’-এমন নানা স্লোগান দেন।
সমাবেশে কুয়েটে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে যে নির্মম নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আমাদের লড়াই করতে হয়েছে সেই নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়ন আবার ফেরত এসেছে। ছাত্রলীগের স্টাইলে হামলাকে জায়েজ করছে অনেকে।
৫ আগস্টের পরে আমরা আর জাহেলি আমলে ফেরত যেতে চাই না। যারা আবার ছাত্রলীগের মতো হতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়াব। এ দেশে স্ট্যাম্প ও লাঠির, রামদার রাজনীতি চলবে না। প্রয়োজনে আমরা আবার একটি জুলাই বরণ করতে প্রস্তুত আছি।’ এ সময় বক্তব্য রাখেন যুগ্ম সদস্য সচিব জান্নাতুল ফুয়ারা অন্তরা, নাগরিক কমিটি যশোরের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সোয়েব আক্তার প্রমুখ।