ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

সংস্কারের গল্প বলে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই-আমীর খসরু মাহমুদ

গিয়াসউদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী 

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সংস্কারের গল্প বলে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই-আমীর খসরু মাহমুদ

সংস্কারের গল্প বলে সময় সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও এখন মানুষের মনে সন্দেহ ঢুকে গেছে, নতুন নতুন যেসব কথা শুনছি। কখনো বলে আনুপাতিক হারে নির্বাচন, কখনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন, এরপরে জাতীয় নির্বাচন। তারপর তারা সংস্কার করে যাবে, শেখ হাসিনার বিচার শেষ করে যাবে। এ সমস্ত কথা বলার সুযোগ নেই। তাদেরকে সেই জায়গায়, সেই দায়িত্ব কেউ দেয় নাই।        

 

বুধবার ফাল্গুনের এ পড়ন্ত বিকেলে নোয়াখালী মাইজদীর জেলা জজকোর্ট সড়কে আয়োজিত স্বরণকালের বহত্তম সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন ও দ্রুত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে নোয়াখালী জেলা বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকে জেলার ভিআইপি আসনখ্যাত কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট আসনে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব প্রাপ্ত বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের নেতৃত্বে বিশাল বিশাল মিছিল সমাবেশস্থলে যোগ দেয়। এছাড়াও জেলার সবকয়টি উপজেলা ও সকল পৌরসভা এবং এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় থেকেও তৃণমূল নেতৃবৃন্দ বিশাল মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হয়। 

 

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ ঢুকে গেছে। আপনাদের কথাবার্তায়, আপনাদের উপদেষ্টাদের কথাবার্তায় মনে হয় তারা কোন এক দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। সেই সন্দেহের উদ্বেগ যদি হয় বাংলাদেশের জনগণের কাছে আপনাদের আর কোনো গ্রহণ যোগ্যতা থাকবে না।  এ দেশ পরিচালনা করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে।

 

সমসাময়িক রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যারা দীর্ঘায়িত করে লাভবান হবেন, হচ্ছেন তাদেরকে বলছি আপনারা মনে করছেন আপনারা এ সরকারের একটা অংশ হয়ে গেছেন। এ সরকারকে যতদিন রাখা যাবে তত দিনই আপনারা লাভবান থাকবেন, সরকারের অংশ হয়ে থাকবেন, এটা হওয়া সম্ভব না। যারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকেছেন। তাদেরকে বলছি পরিষ্কার করে সেই যেই হোক তাদের সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মানুষ ১৬ বছর ত্যাগ স্বীকার করেছে।  

 

তিনি আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশ এক এক দিন যাচ্ছে, এক এক দিন গণতন্ত্র বিহীন ভাবে অতিবাহিত হচ্ছে। এক এক দিন  যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ক্ষমতা বাহিরে থেকে এক এক দিন যাচ্ছে। আমরা ভোট দিয়ে আমাদের সরকার দেখতে চাই। যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকবে। গণতন্ত্রে জবাবদিহিতায় নির্বাচন ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।  

 

আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, বিএনপি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করতে বদ্ধ পরিকর। বিএনপির রাজনীতি এদেশের মানুষের ওপর নির্ভরশীল। তাদের একমাত্র পবিত্র দায়িত্ব আগামী দিনে দেশে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আর তাদের যদি সংস্কারের খুব বেশি ইচ্ছা থাকে, তাহলে তারা যে কমিশনের রিপোর্ট গুলো তৈরী করেছে সেগুলো আমরা আগামী নির্বাচত সংসদে পেশ করতে রাজি আছি। সংসদে আলোচনা করে সবাই মিলে যেখানে সংস্কার প্রয়োজন সেটা করবে। সব চেয়ে বড় কথা হলে আমরাতো আমাদের ৩১দফা বাস্তবায়ন করব। আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। সংস্কারের ব্যাপারে কারো কোনো মাথা ব্যাথার প্রয়োজন নেই।    

 

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলোর সভাপতিত্বে সদস্য-সচিব হারুনুর রশিদ আজাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক বানিজ্য উপদেষ্ঠা বরকত উল্লাহ বুলু। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক বিরোধী দলীয় চীফ হুইফ জননেতা জয়নুল আবেদিন ফারুক, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি সাবেক এমপি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক এডভোকেট এবিএম জাকারিয়া প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।  

 

এ সময় নোয়াখালী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আবু নাছের, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাবের আহমেদ, কৃষকদলের সভাপতি ফজলে এলাহী পলাশ, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, জেলা মহিলা দলের সভাপতি শাহানাজ পারভিন, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য গোলাম মোমিত ফয়সাল, সাবেক সদস্য শামিমা বরকত লাকি উপস্থিত ছিলেন।  

 

‘ক্ষমা চেয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন’, অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার এমন মন্তব্য নিয়ে সন্দেহ, সংশয় জানিয়েছেন তিনি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নিজেদের স্বার্থে ফ্যাসিস্টদের জায়গা করে দিলে বিএনপি তা মানবে না। তিনি এও বলেন, সরকারে থেকে সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে রাজনৈতিক দল গোছালে জনগণও মেনে নেবে না।

 

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, পলাতকদের পুনর্বাসনের চেষ্টা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। আবারও ১/১১ এর মতো কিছু ঘটানোর চেষ্টা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। নিরপেক্ষতা হারালে দরকার হতে পারে আরও একটি নিরপেক্ষ সরকার। চলমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার আহবানও জানান।

 

এদিকে সভায় নেতারা অভিযোগ করেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ইন্ধনে গুপ্ত হামলা করে বিভিন্ন জায়গায় দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী নামধারী একটি মহল।পাঁচ আগস্টের পর পলাতক আওয়ামী নেতা-কর্মীরা দলসহ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে দাবি করে, শিক্ষাঙ্গনে নতুন ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে দাবি করেন দলের নেতারা।

আফরোজা

×