
উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে সোমবার রাতে জনসম্মুখে দম্পতিকে রামদা দিয়ে কোপায় দুই যুবক
রাজধানীসহ দেশজুড়ে চলছে অপারেশন ডেভিল হান্ট। স্বভাবতই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকাটাই হচ্ছে নাগরিকের প্রত্যাশা। কিন্তু যেভাবে এমন অভিযানের মুখেও কিশোর গ্যাংয়ের দাপট চলছে তাতে মানুষ চরম নিরাপত্তা আতঙ্কে পড়েছে। সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরায় জনসমক্ষেই এক দম্পতির ওপর কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ংকর হামলায় আশপাশের মানুষজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
তারা এখন ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছে। অবশ্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, উত্তরায় দম্পতিকে রামদা দিয়ে প্রকাশ্যে কোপানোর ঘটনায় অপরাধীদের সঙ্গে সঙ্গেই আইনের আওতায় এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার পরেও আতঙ্ক কাটছে না।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে সোমবার রাতে মার্কেট থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন এক দম্পতি। হঠাৎই কিশোর গ্যাংয়ের খপ্পরে পড়েন তারা। এ সময় ওই ব্যক্তিকে রামদা দিয়ে কোপাতে আসে হামলাকারীরা। নিজের জীবন বাজি রেখে স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে সামনে দাঁড়ান তার স্ত্রী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় সেই ভয়াবহ মুহূর্ত। ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষিপ্ত হয়ে দুই সন্ত্রাসী ওই দম্পতিকে রামদা দিয়ে হামলা করছে। এ সময় ওই নারীকে হাতজোড় করে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চাইতে দেখা যায়। ওই নারীর আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। পরে ভুক্তভোগী ওই দম্পতিকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কিশোর গ্যাং চক্রটির সদস্যরা উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ভেতরে উচ্চশব্দে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে দ্রুতগতিতে চালাচ্ছিল। এ সময় তাদের মোটরসাইকেল একটি শিশুকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। পাশ দিয়ে যাওয়া আরেকটি মোটরসাইকেলে ভুক্তভোগী দম্পতি এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের লোকজন ডেকে রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে।
এ সময় ভুক্তভোগী নারীর চিৎকারে জড়ো হন লোকজন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তারা হলেন মো. মোবারক হোসেন (২৫) ও রবি রায় (২২)। গ্রেপ্তার মোবারকের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায়। তিনি গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকায় ভাড়া থাকেন। আর রবি রায়ের বাড়ি টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন হাজীর মাজার এলাকায়।
এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, মোটরসাইকেলে উচ্চ শব্দ করে দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা একটি শিশুকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। পাশ দিয়ে আরেকটি মোটরসাইকেলে যাওয়া দম্পতি প্রতিবাদ করে। এরপর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের লোকজন ডেকে দম্পতির ওপর রামদা দিয়ে হামলা চালায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজধানীতে হেন কোনো অপরাধ নেই যা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা করছে না। চুরি, ছিনতাই, দিনে-দুপুরে হামলার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং দেদারছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ও মানিব্যাগ, সোনা-গয়না ছিনিয়ে নেয়।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে কি না, এটা তো আপনারাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। উত্তরায় যে ঘটনা ঘটেছে, সঙ্গে সঙ্গেই তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে সঙ্গেই অ্যারেস্ট করা হয়েছে।
কিশোর গ্যাং, ছিনতাই আগের থেকে অনেক কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, কিন্তু তাও এখনো সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। প্লাস আরেকটা জিনিস আপনি খেয়াল করবেন, আমাদের আইন-শৃঙ্খলার সঙ্গে সঙ্গে দাবি-দাওয়া শুনতে শুনতে আমাদের বাহিনীটা যে কাজে ইউজ হবে, ওই কাজ না করে অন্য কাজে তাদের চলে যেতে হচ্ছে। দাবি-দাওয়া থাকবে। ইনস্টিটিউটের সামনে গিয়ে বলুক। যদি এরকম বক্তৃতা দিয়ে বলতে হয়, তাহলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে বলুক। তারা জনগণের ভোগান্তি কেন করবে।