ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

প্রাইভেটকার, দেশীয় অস্ত্র, গাঁজা জব্দ

রাজধানীতে ভয়ংকর সন্ত্রাসী কব্জি কাটা গ্রুপের প্রধান আনোয়ার গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজধানীতে ভয়ংকর সন্ত্রাসী কব্জি কাটা গ্রুপের প্রধান আনোয়ার গ্রেপ্তার

কব্জি কাটা আনোয়ার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ভয়ংকর সন্ত্রাসী ‘কব্জি কাটা গ্রুপের প্রধান মো. আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার ওরফে কব্জি কাটা আনোয়ারকে (৩৬) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ছিনতাই চাঁদাবাজি মানুষের কব্জি কাটাসহ বহু মানুষকে কুপিয়ে আহত ও পঙ্গু করেন। শুধু তাই নয়, কব্জি কেটে টিকটকে ভিডিও করে উল্লাস করতেন আনোয়ার ও তার গ্রপের সদস্যরা। 
সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে কব্জি কাটা আনোয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-২। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছে তার দুই সহযোগী মো. ইমন (২০) ও মো. ফরিদ (২৭)। তাদের আদাবর  থেকে  গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র-সামুরাই একটি, ছুরি দুটি, গাঁজা ৮ কেজি, একটি প্রাইভেটকার ও একটি হাতঘড়ি জব্দ করা হয়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খালিদুল হক হাওলাদার। তিনি বলেন, র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর আনোয়ার স্বীকার করেছে তিনজনের কব্জি কেটেছে। কিন্তু র‌্যাবের তদন্তে আনোয়ার ৭ জনের কব্জি কেটেছে।

টার্গেট ব্যক্তির ওপর হামলা ও ছিনতাইয়ের সময়ে আনোয়ারের স্টাইল হলো- যে ব্যক্তির ওপর হামলা করা হবে তার আশপাশের রাস্তায় কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করা। এর পর তারা যানজট কমাতে সহযোগিতা করার নামে কৃত্রিম ব্যারিকেড সৃষ্টি করত। পরে আনোয়ার এসে টার্গেট ব্যক্তির ওপর হামলা করে। পাশাপাশি সে আসার আগে সামনে ও পেছনে একাধিক টিম থাকে।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর যৌথ বাহিনীর অভিযানে পাঁচ শতাধিক ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার করেছি। মোহাম্মদপুরে অপরাধের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। মোহাম্মদপুরে আগে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধ হতো। কিন্তু পরিবর্তিত সময়ে কারা অপরাধীদের মদত দিচ্ছে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, যখন সামাজিক অস্থিরতা শুরু হয়, আপনারা জানেন ৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা  তৈরি হয়। এই পরিবর্তনের জের ধরে সন্ত্রাসীরা তৎপর হয়ে ওঠে।

৫ আগস্টের পর মোহাম্মদপুরে যে পরিমাণ অপরাধ বেড়েছিল যৌথভাবে অভিযান করে জেনেভা ক্যাম্পসহ মোহাম্মদপুরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।  মোহাম্মদপুর ও আদাবর  কেন্দ্রিক কোনো সন্ত্রাসী ও গডফাদারের স্থান হবে না
আনোয়ারের মদতদাতাদের বিষয় জানতে চাইলে খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, আনোয়ারের পেছনে দীর্ঘদিন লেগেছিলাম। আমাদের কাছে তথ্য আসে মোহাম্মদপুরের এক্সেল বাবু নামে এক ব্যক্তি তাকে মদত দিচ্ছে। সে আড়ালে থেকে আনোয়ারকে ছত্রছায়া  দেয়। 
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আনোয়ার ওরফে কবজি কাটা আনোয়ার ২০০৫ সালে জীবিকার সন্ধানে বাগেরহাট জেলা থেকে ঢাকায় তার বাবার কাছে চলে আসে। ঢাকায় এসে বিশুদ্ধ খাবার পানি পরিবহন করত। প্রথম পর্যায়ে আনোয়ার অপরাধ জগতে ছিনতাই ও বাস স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি শুরু“ করলেও ২০২৪ সালে মানুষের কব্জি কেটে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে কব্জি কাটা গ্রুপের প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কব্জি কাটা ভিডিও টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
কব্জি কাটা ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে পড়লে আনোয়ার ও তার সহযোগীদের কুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে এলে ধারাবাহিক অভিযানের মুখে বাহিনীর অন্যতম সদস্য ভাগনে বিল্লালসহ আরও অনেকে গ্রেপ্তার হলে আনোয়ার নিজের পূর্বের লেবাস পরিবর্তন করে আত্মগোপনে থেকে কবজি কাটা গ্রুপের নামে দুর্ধর্ষ এক বাহিনী গড়ে তোলে।
মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, নবীনগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং ও আদাবরের শ্যামলী হাউজিং, শেখেরটেক, নবোদয় হাউজিং এলাকায় হত্যা, অস্ত্র-গুলি, মাদক কেনাবেচা, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে কব্জি কাটা আনোয়ার গ্রুপ বাহিনী।

কব্জি কাটা আনোয়ার  গ্রুপ নিজের শক্তি বৃদ্ধি এবং আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এলাকার কিশোরদের মাদক, অস্ত্র ও অর্থের প্রলোভনে  ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে তাদের ব্যবহার করে অপরাধ জগৎ থেকে উপার্জিত টাকার মাধ্যমে সে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে ওঠে।
অত্যন্ত সুকৌশলে বারবার  সে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল এবং এলাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি। কব্জি কাটা আনোয়ার বাহিনী প্রথমে যাকে টার্গেট করে তাকে যেকোনোভাবে হামলা করে। 
গ্রুপ সদস্যরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে প্রথমে রাস্তায় কৃত্রিম যানজট  তৈরি এবং সড়কে সিসি ক্যামেরা থাকলে সেগুলো ভাঙচুর করে। রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের আদলে যানজট নিয়ন্ত্রণের নাটক সাজিয়ে রাস্তা ব্লক করত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সাধারণ জনগণ বাধা দিচ্ছে কি-না নজর রাখ। এরপর তারা ফিল্মি স্টাইলে ভুক্তভোগীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।পরে হাতের কব্জি কেটে সবার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যায়। 

গত কয়েক মাসে আনোয়ারের হাতেই ৭/৮ জন হামলার শিকার হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন পা, কেউ হাত আবার কেউ পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তার হামলার শিকার ব্যক্তিদের বেশিরভাগই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তার ভয়ে মামলাও করেননি অনেকে। আবার কেউ মামলা করলে তাকে নানা ভয়ভীতি  দেখাত এই বাহিনীর  সদস্যরা।

×