ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হাঁটু পানিতে নেমে প্রতিবাদ

তিস্তা বাঁচাতে মানুষের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তিস্তা বাঁচাতে মানুষের ঢল

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা

উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীর পাড়ে পাঁচটি জেলার ১১টি পয়েন্টে তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা ও মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির শেষদিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন রংপুরে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিস্তায় হাঁটু  পানিতে নেমে  হাজারো মানুষ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে।

কুড়িগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের বিভিন্ন নদনদীতে পানির অভাবে প্রায় ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন চাল কম উৎপাদন হচ্ছে। তিস্তা আমাদের আবেগ। নীলফামারীতেও কর্মসূচির সমর্থনে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। 
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাও’ কর্মসূচি। এর আগে গত সোমবার বিকালে এই কর্মসূচির উদ্ধোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর।

তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটির ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও অংশগ্রহণ দেখা যায়। যার নেতৃত্ব দেন বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু। 
প্রায় ২৪০ বছরের পুরোনো নদী তিস্তা। এর সঙ্গে রয়েছে উত্তরের ২৫টি নদীর প্রবাহ। ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা অববাহিকার ১১৫ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে। তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও ভারত এক তরফা বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রায় ছয় লাখ হেক্টর জমিতে সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য পানি ছাড়ে।

যে পানি আশীর্বাদ না হয়ে বেশির ভাগ সময়ে এ দেশের মানুষের জন্য বয়ে আনছে অভিশাপ। ফলে, অসময়ে তিস্তাপাড়ের লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা এই পাঁচ জেলায় বন্যা দেখা দিচ্ছে, বছর বছর বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। 
কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশের জনগণকে মনে রাখেনি, শুধু স্বৈরাচারকে মনে রেখেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ মনে করে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের যে অন্যায্য চুক্তি আছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবেশী দেশ থেকে আরও অন্যায্যতা দেখতে চায় না, ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ আর দেখতে চায় না।
উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীর পাড়ে পাঁচটি জেলার ১১টি পয়েন্টে তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা ও মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আগস্টে খুনি স্বৈরাচারী দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। এ স্বৈরাচার একদিন একটি কথা বলেছিল, ভারতকে যা দিয়েছি তা সারাজীবন মনে রাখবে। তাই এ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত শুধু স্বৈরাচারকে মনে রেখেছে, বাংলার মানুষকে মনে রাখেনি।

প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে কিছু দেয় নাই, শুধু দিয়েছে স্বৈরাচারকে। প্রতিটি দেশেরই তাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বা ঝামেলা থাকে। কিন্তু সেগুলোকে কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা হয়। যেটা আমাদের এখানে এতদিন হয়নি।  
তারেক রহমান বলেন, প্রতিবেশী দেশ যদি আমাদের তিস্তার ন্যায্যতা না দেয়, তাহলে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না। আমাদেরটা আমাদেরই চিন্তা করতে হবে। দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, তিস্তার ন্যায্য পানি আদায়ের জন্য আজকে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। এ পানি বণ্টন নিয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশ অপ্রতিবেশীমূলক আচরণ করছে। ৫০ বছর ধরে ফারাক্কার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাই নাই। এখন আবার এসেছে তিস্তার অভিশাপ।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশের অপ্রতিবেশীমূলক আচরণের কারণে আজকে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষ বন্যায় এবং খরায় জীবন যাপন করছে। এর ফলে লাখ লাখ টাকার শর্ষের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসবে তখন এ তিস্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, পাশাপাশি দেশের অন্য যেসব নদী আছে, সেগুলোকে আমাদের পুনরায় সংস্কার এবং খনন করতে হবে। শহীদ জিয়ার সেই খাল খনন কর্মসূচি আমাদের পুনরায় হাতে নিতে হবে।
স্বৈরাচার সরকার গত ১৫টি বছর নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষের সম্ভাবনা এবং সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকারের কোনো হটকারী সিদ্ধান্তে বা আমাদের অসতর্কতায় যেন খুনি ফ্যাসিস্ট সরকারের কেউ পুনর্বাসন হওয়ার সুযোগ না পায়, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
দুইদিন ধরে তিস্তাপাড়ের মানুষ যে আন্দোলন করছে, এটা বৃথা যাবে না জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, তিস্তাকে রক্ষা করতে হলে তিস্তাবাসীকে একটি দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর সেটি হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আপনাদের পছন্দের দলে ভোট দিতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেখেছে মানুষের ঐক্যবদ্ধতা। কীভাবে তারা একটি সংকটে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করেছে। আপনারা যেভাবে বলেছেন ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও’। একইভাবে আমাদের দেশের সবাইকে বলতে হবে ‘জাগো বাহে বাংলাদেশ বাঁচাও’।
রংপুরে তিস্তায় হাঁটু পানিতে নেমে  কর্মসূচি পালন ॥ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে উত্তরের ৫ জেলায় টানা ৪৮ ঘণ্টার আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে তিস্তা নদীতে নেমে  বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর নেতৃত্বে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। 
লালমনিরহাট ও রংপুরের তিস্তা রেলসেতু প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ তিস্তা নদীর হাঁটু পানিতে নামে। ভারতের পানি আগ্রাসন বন্ধ করা, মরুকরণ থেকে নদী রক্ষায় তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা প্রদান এবং বন্যার ভাঙন থেকে তিস্তাপাড়ের মানুষকে রক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। এ সময় ‘তিস্তা নদী আমার মা, মরতে আমরা দিব না’, ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। 
লালমনিরহাট সদরের  সাইফুল  ইসলাম বলেন, ‘আগের সরকার হামাক আশায় আশায় ঘুরাইছে, কিন্তু হামার কোনো কাজ করি দেয় নাই। এই সরকার এবার কি করে সেটা দেখার আশায় বসি আছি’। 
কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘হামরা গ্রামের মানুষ আইনের কোনো কিছু বুঝি না, হামরা চাই সঠিকভাবে আবাদ করিবার। হামরা বুঝি না পানির আইন, বুঝি না কোনো নিয়ম কানুন। হামরা পানি চাই, মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই’।  
হাজারো কৃষকের একই অভিযোগ। তাদের সকলের চাওয়া অবিলম্বে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হোক।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিস্তা রেলসেতু লালমনিরহাট পয়েন্ট থেকে গণপদযাত্রা শুরু হয়। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর নেতৃত্বে পদযাত্রাটি তিস্তা সড়ক সেতু হয়ে তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। 
কুড়িগ্রাম ॥ জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও পাকার মাতায় অবস্থান কর্মসূচিতে থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তিস্তা পাড়ের শত শত মানুষ। আন্দোলনকারীদের দাবি, দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রক্ষা হবে তাদের ঘর-বাড়িসহ ফসলি জমি। পানির ন্যায্য হিস্যা পেলে চাষাবাদ করতে পারবেন ফসল।

দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। অনেকেই সোমবার থেকে এ অবস্থান কর্মসূচিতে অবস্থান করলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে যোগ দেয় অনেকে। এছাড়াও প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জন্য সকাল ও দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।  এদিকে জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই এলাকায় তিস্তার অববাহিকায় দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। 
এসময় তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন নদনদীতে পানির অভাবে প্রায় ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন চাল কম উৎপাদন হচ্ছে। তিস্তা আমাদের আবেগ। এই নদীর কারণে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখব। 
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি ১ নং যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি ২ নং যুগ্ম আহবায়ক হাসিবুর রহমান হাসিব, সদস্য সচিব সোহেল হোসাইন কায়কোবাদ, আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। সভাপতিত্ব করেন উলিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ।
নীলফামারী ॥ গত দুইদিন ধরে চলা অবস্থান কর্মসূচি ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক স¤পাদক আসাদুল হাবীব দুলু বলেছেন, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র চীন ২০১৬ সালে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে নকশা প্রণয়ন করেছে। ৮ কিলোমিটার প্রস্থ তিস্তা নদীকে দেড় কিলোমিটার করা হবে।

নদীর দুই ধারে প্রশস্ত রাস্তা, গাইড বাঁধ, স্যাটেলাইট শহর, অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাউজিং ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান হবে। রংপুরের মানুষ আশাবাদী ছিল এক সময়ের প্রমত্তা তিস্তা নদী তার যৌবন ফিরে পাবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা হবে নদীপাড়ের মানুষের জীবন রক্ষার প্রকল্প। কিন্তু সেই প্রকল্প পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বাস্তবায়ন করেনি। 
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা বাক্স্বাধীনতা পেয়েছি। রংপুরের মানুষ তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে জেগে উঠেছে। এ লক্ষ্যে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি রংপুরের ৫ জেলার তিস্তা নদীর ১১টি পয়েন্টে লক্ষাধিক মানুষ নিয়ে টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচির মাধ্যমে তিস্তা পানি নিয়ে বৈষম্যের বিষয়টি গোটা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছি। 
আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, সম্প্রতি সরকারের দুইজন উপদেষ্টা রংপুরে তিস্তা নদী গণশুনানিতে বলে গেছেন, তারা এ বছর তিস্তা নদীতে কিছু কাজ করতে চান। এ বিষয়ে তিস্তাপাড়ের মানুষের মাঝে আপত্তি রয়েছে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে তিস্তায় বিক্ষিপ্ত কাজ করে জনগণের ট্যাক্সের টাকা অপচয় করার প্রয়োজনীয়তা নেই। তিস্তাপাড়ের মানুষ অনেক কষ্ট স্বীকার করেছে।

বিলম্ব হলেও পরিকল্পিতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তাই দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হলে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে দ্রুত তিস্তা বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
লালমনিরহাট  ॥ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভাটির দেশ নদীর পানির মালিক। ভারতের আগ্রাসনে তিস্তা এখন আর নদী নেই, খাল বলা যায়। মঙ্গলবার বিকেলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদী রক্ষা আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 
বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সংস্কারের জারি গান মানুষ আর খায় না। সংস্কার করার ক্ষমতা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। প্রয়োজনে ঐকমত্য ভাবে গণস্বাক্ষর করে রাখা যেতে পারে। যারাই ক্ষমতায় আসবে, তারা জনগণের কাক্সিক্ষত সংস্কারগুলো করবে। এ ছাড়া সংস্কারের কোনো সুযোগ নেই অন্তর্বর্তী সরকারের। ১/১১তেও সংস্কারের আলোচনা ছিল, করতে পারেনি। কারণ, সংস্কার একমাত্র নির্বাচিত সরকারই করতে পারবে। 
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত বেইমানি করেছে উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভারতের মদতে বিনা ভোটে সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। বিদেশে টাকাও পাচার করেছে আওয়ামী লীগ। ভারতের কাছে ক্ষমতা নিলেও পানি আনতে পারেনি আওয়ামী লীগ। 
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলনের শেষদিনের অবস্থান কর্মসূচির জনসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য  হাসান রাজিব প্রধান, নীলফামারী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর সরকার, হাতীবান্ধা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন, সদস্য সচিব আফজাল হোসেন মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপ্রকল্প  বাস্তবায়নের দাবিতে মশাল প্রজ্বলন করেছে নদী তীরবর্তী রংপুরের ৫ জেলার মানুষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে গাইবান্ধা, রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের ১১টি স্থানে একযোগে এই মশাল প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়।

×