ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

মাথায় ঋণের বোঝা

ঘাটাইলে সবজি চাষিরা দেউলিয়ার পথে

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঘাটাইলে সবজি চাষিরা দেউলিয়ার পথে

নীরবে কাঁদছে কৃষক। শুরু থেকেই সবজির দাম নেই

নীরবে কাঁদছে কৃষক। শুরু থেকেই সবজির দাম নেই। খেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে সবজি। কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। অন্যের পুষ্টির চাহিদা মিটলেও বিক্রির টাকায় দুইবেলা দুমুঠো ডাল-ভাত জুটছে না। উল্টো ঘাড়ে চেপেছে ঋণের বোঝা। মানুষের থেকে সুদে আনা টাকা, ব্যবসায়ীর দেওয়া দাদন, সার ও কীটনাশকের দোকান বাকি এবং এনজিওর কিস্তির চাপে দেউলিয়া হওয়ার পথে হাজারো কৃষক।

এ যেন আঁধার দূর করতে অন্ধকারের পথে তারা। ভাবাচ্ছে চাষিদের। চাষে ভাটা পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন চিত্র টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার। কৃষকদের অভিযাগ খোঁজ নেওয়া তো দূরের কথা কৃষি অফিসের কাউকে তারা চিনেন না। 
জানা গেছে, স্থানীয় হাট এবং বাজারের জায়গা সংকটের কথা বিবেচনা করে ফুলকপি ও বাঁধাকপি নিয়ে আসায় এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ঘাটাইল উপজেলার গারোবাজার ও সাগরদীঘি বাজারে গিয়ে সিম এবং বেগুনের দেখা মেলে। পাইকারি প্রতি মণ শিম ১৫০ এবং বেগুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। অর্থাৎ শিমের কেজি পৌঁনে চার টাকা এবং বেগুন পাঁচ টাকা। অথচ ক্ষেত থেকে সবজি তুলতে কেজি প্রতি শ্রমিক খরচ দাঁড়ায় পাঁচ টাকা। 
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছর সবজির আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন হয়েছে বেশ ভালো। সবচেয়ে বেশি সবজির চাষ হয়েছে সাগরদীঘি ও লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নে। স্থানীয় কৃষকদের দেওয়া তথ্যমতে দুই ইউনিয়নে সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত কৃষকের সংখ্যা এক হাজারের উপরে। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বছরজুড়েই চলে সবজির আবাদ।

অধিকাংশ কৃষকের নেই নিজস্ব জমি। লিজ নিয়ে অন্যের জমিতে ফলান সবজি। হাত ঘুরে এই সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ধার-দেনা আর কষ্টে ফলানো এই ফসলই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকের জন্য। লাভ তা দূরে থাক সবজি চাষ করে খরচের অর্ধেক টাকা ঘরে তুলছেন এমন একজন কৃষকও পাওয়া যাবে না বলে জানান কৃষক নাসির উদ্দিন সিকদার।

একজন শ্রমিক সারাদিন কাজ করে ক্ষেত থেকে সর্বোচ্চ দুই মণ সবজি তুলতে পারেন। মজুরি হিসেবে দিতে হয় চারশ’ টাকা। আর দুই মণ সবজি শিম বা বেগুনে ভ্যানভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে কৃষক পান তিনশ’ টাকা। তার ভাষ্য, ঋণের চাপে অল্প কিছুদিনের মধ্যে অনেক কৃষক ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাবেন। 
উপজেলার মনতলা গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, জমি লিজ নিয়ে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে শিমের আবাদ দিয়েছিলাম। খরচ সাত লাখ টাকা। বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার টাকা। কিছু টাকা নিজের ছিল আর বাকি টাকা এনজিও এবং মানুষের থেকে সুদে ঋণ করে আনা। 
কৃষক আনিছ মিয়া বলেন, শত শত মণ শিম ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে। যেখানে ৩ লাখ টাকার মতো শিম বিক্রি করার কথা সেখানে পাঁচ হাজার টাকাও পাই নাই। ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, তুলনামূলকভাবে গত বছরের চেয়ে সবজির দাম কম। সব সবজি চাষিরা এবার ক্ষতিগ্রস্ত।

×