ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ

কালুরঘাটে রেল কাম রোড সেতু নির্মাণ হচ্ছে

সংবাদদাতা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কালুরঘাটে রেল কাম রোড সেতু নির্মাণ হচ্ছে

কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল-কাম রোড সেতু নির্মাণ

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল-কাম রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ডিটেইল ডিজাইনের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৭-৮ মাসের মধ্যে শেষ হবে প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ, ডিটেইল ডিজাইন চূড়ান্ত এবং ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। এরপর ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে দৃশ্যমান হবে সেতু নির্মাণ কাজ।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগের উপসচিব শফিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে মুহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরীকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সেতুটিতে হবে সড়ক ও রেলের স্ট্যান্ডার্ড ডাবল লাইন। মূল সেতুটি ৬০ ফুট প্রশস্ত ও দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার। উচ্চতায় নদীর পানির সর্বোচ্চ লেভেল থেকে ১২ মিটার। উচ্চতার সঙ্গে লেভেল ঠিক রাখার জন্য এই প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে উভয়পাশে প্রায় ৫ কিলোমিটার করে ১০ কিলোমিটার সড়ক।

সেতুটি নির্মাণের জন্য ১৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসব কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ৭-৮ মাস। সেতুতে রেল চলাচলের জন্য ৩০ ফুটের মধ্যে ডাবল লাইন এবং সড়ক পরিবহন চলাচলের জন্য ৩০ ফুটের ডাবল লাইন নির্মাণ করা হবে। মূল প্রকল্পে থাকছে ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ। 
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আবুল কালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, সেতু প্রকল্পের ডিটেইল ডিজাইনের কাজ চলছে। ১৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ডিটেইল ডিজাইন চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে দরপত্র আহ্বান করা হবে। দরপত্রে শুধু কোরিয়ান ঠিকাদার বা জয়েন্ট ভেঞ্চারের (জেভি) মাধ্যমে অন্যরা অংশগ্রহণ করতে পারবে।

সবকিছু ঠিক থাকলে ২০৩০ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সেতু থেকে ৭০ মিটার উজানে কোরিয়ার আর্থিক সহায়তায় কালুরঘাট নতুন সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর ‘কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল-কাম রোড সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বছরের জুন মাসে প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থায়ন নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তি হয়েছিল।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১,৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪,৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি ৭,১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা আসবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটিজ (ইডিপিএফ) কোরিয়া। ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দরপত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

পরামর্শক নিয়োগের পরপরই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। ২০১২ সালে প্রথম কালুরঘাট সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। ওই সময় বাংলাদেশ সরকার কোরিয়া সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার অনুরোধ জানালে কোরিয়া ঋণ দিতে সম্মত হয়। ২০১৮ সালে ৭ আগস্ট প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল।

তবে অনুমোদন না দিয়ে রেল ও সড়ক সেতুর জন্য আলাদা নকশা করে পুনরায় উপস্থাপনের সুপারিশ দেয় একনেক। পরে ২০১৯ সালে বিআইডব্লিউটিএ কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট পয়েন্টে রেল কাম রোড সেতুর জন্য নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ১২ দশমিক ২ মিটার করায় কোরিয়া আবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে।

দ্রুত সেতু নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়ে বোয়ালখালী নাগরিক কমিটির সভাপতি কাজী যাবের ছাবেরী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রবীর দাশ শিমুল বলেন, কালুরঘাটে সেতু নির্মাণের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে আন্তরিকতা দেখাচ্ছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। চট্টগ্রামবাসী চায় চলতি বছরের মধ্যে সেতুটির কাজ দৃশ্যমান হোক এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অতিসত্বর এ কাজের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করুন।

×