ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে হেঁটে হেঁটে তিস্তা পার হলেন হাজারো মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা লালমনিরহাট 

প্রকাশিত: ২১:৩১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২১:৩২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে হেঁটে হেঁটে তিস্তা পার হলেন হাজারো মানুষ

তিস্তার হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের শিয়ালখোওয়া এলাকার বাসিন্দা আতিয়ার রহমান কাছে গিয়ে জানতে চাইলে তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে উঠল তার। অশ্রু জড়িত কন্ঠে জানান ,“ আগে হামার বাড়ি আচিল কালীগঞ্জের ভোটমারি ইউনিয়নোত। বাপের কাছ থাকি ২০ বিঘা জমি ভাগোত পাচনু । এলা মুই বউ ছাওয়া ধরি থাকোং চলবালা ইউনিয়নের শিয়াল খোয়াত । হামার অন্য শরীকরা অন্য জায়গা গেইচে। আগোত প্রত্যেকদিন  হামরা কামলা নিচনো। এলা হামরা মাইনষের বাড়িত কাম করি বেরাং। তিস্তা মোড় সবকিছু কারী নিলে বাহে।  ইন্ডিয়া হামার তিস্তার উজানত  ও বান্দ বান্ধিয়া ওমার ওত্তি পানি নিয়া গেইচে। আর হামরা গুলা শুকানোত মইরতেছি। তোমরা যদি তিস্তাত পানি আনি দিবার পান আর খুড়ি দিয়া  দুই পাড় বান্ধি দেন। তাহইলে মোড় জমিগুলা উদ্ধার হইবে,  আবাদ করি খাবার পাইনো হয় বাহে। আমার হামার হয়া  ইউনুসেক এই কথাটা এক না কন।”


তার মত তিস্তার শীর্ণজীর্ণ শরীরে পারাপার হচ্ছিলেন হাজারো মানুষ।নদীতে যে সামান্য পানি আছে তাতে কোথাও হাঁটু কোথাও হাঁটুর নিচে। পারাপারকারীদের হাতে হাতে  প্লাকাড। তাতে লেখা জাগো বাহে তিত্তা বাঁচাই। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই। ভারতীয় পানি আগ্রাসন বন্ধ করো করতে হবে। হাজারো মুখে মুখে একই স্লোগান। জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানে গগন বিদারী আওয়াজ যেন উজানে যাচ্ছিল তীব্র গতিতে। 


এমন দৃশ্য  মঙ্গলবার দিনভর ছিলো রংপুরের কাকিনা মহিপুর তিস্তা সড়ক সেতু এলাকার।  পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করা এবং  বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানে ৪৮ ঘন্টার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির এই আয়োজন করে তিস্তা নদীর রক্ষা আন্দোলন। সোমবার ( ১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই অবস্থান কর্মসূচি শেষ হবে আগামীকাল (১৯ ফেব্রুয়ারি)  বুধবার ভোরে। একই সাথে এই জনতার সমাবেশ ও জমায়েত অনুষ্ঠিত তিস্তা অববাহিকার  লালমনিরহাট কালীগঞ্জে কাকিনা রংপুরের মহিপুর তিস্তা সড়ক সেতুর দুই পাশে।


তিস্তার হাঁটু পানিতে আরো কথা হয় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে কাকিনা গ্রামের বয়োবৃদ্ধা সালমা  খাতুন। তিনিও এসেছিলেন লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে। এই বৃদ্ধা এখন বয়সের ভারে নুয্য।  জানালেন, " ইন্ডিয়ার  রাজারা ভালো নোয়ায় বাবা।  ওমরা নদীর উজাণত বান্দ বান্ধিছে। হামার দিকি তিস্তা শুকি মরি গেছে। নল্যিকোনাতোএখন আর পানি নাই।   বাবা হামরা যেদিন শ্বশুরবাড়িতে আসি। দেখি বড় বড় কুকুর আঁচিল। গইল ভর্তি গরু আচিল বাবা। বাড়িত ধানের গোলা ভরি গেছিল। খুলিত বড় বড় ফলের ফুল আঁচিল। মেলা জমি জমা আঁচিল। ভাঙ্গি দিয়ে গেছে বাহে এই তিস্তা। এলা হামরা ভিক্ষা করি খাই। একদিন মুই এমন বাড়িত গেছনু, যাইয়া দেখোম মুই যাক ভিক্ষা দিচনু।  কি হতভাগা কপাল হামার। তোমরা গুলা না ব্যবস্থা করি দাও। আমার খুড়ি দাও। পানি আনি দেও বাহে। " 


 এ কারণে উত্তরের অর্থনীতি পঙ্গু। তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তা নদীকে ঘিরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন তারা। 
 

আফরোজা

×