ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

ব্রি থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের অপসারণসহ ৮ দফা দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর

প্রকাশিত: ০১:০৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ব্রি থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের অপসারণসহ ৮ দফা দাবি

ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের অপসারণসহ ৮ দফা দাবি

বিগত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদেরসহ ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের অপসারণ, চাকরিচ্যুত ২৮ কর্মকর্তা কর্মচারীকে আত্তীকরণ, বৈষম্যের শিকার বিজ্ঞানী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূতাপেক্ষা পদোন্নতি প্রদানসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মজীবীরা। সোমবার দুপুরে ব্রি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ঐক্য পরিষদের ব্যানারে গাজীপুর জেলা শহরের একটি অফিসে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। 
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের আহ্বায়ক মো. তোফাজ্জল হোসেন ভূইয়া বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্রির তৎকালীন মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবিরের নেতৃত্বে একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট ৯ জন নিয়মিত শ্রমিকসহ প্রায় ৫৫ জন শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করে। ব্রি বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট অনুমোদিত বদলি নীতিমালা লঙ্ঘন করে ৫০ জনকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়।

৩০ জন বিজ্ঞানী কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সরাসরি পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়। এ ছাড়া প্রায় ২শ’ উর্ধ্ব পদে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ, জালিয়াতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, কোটা জালিয়াতি, এমনকি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা সত্ত্বেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ব্রি’র প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করলে শূন্য পদে বর্তমান ডিজি ড. মো. খালেদুজ্জামানকে মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল পূর্বের সব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিগত আমলের বৈষম্যের শিকার বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকের বৈষম্য নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু বর্তমান ডিজি বৈষম্যের বিষয়গুলোকে অস্বীকার করে পূর্বের পথে আওয়ামী অনুসারীদের নিয়ে ব্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ করা হয়। 
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আব্দুর রউফ প্রাক্তন ডিজির দুর্নীতির ওপর তদন্ত রিপোর্টে ব্রিতে সংঘটিত অনিয়ম এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করলেও বর্তমান ডিজি এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। উপরন্তু দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এখনো চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছে। 
নতুন শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বিধি-বিধান অনুসরণ না করে ১৫৮ জন অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করে নিয়োগ-বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। 
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিগত ১৫ বছরের চাকরিচ্যুত ৯ জন শ্রমিককে পুনর্নিয়োগের প্রেক্ষিতে তাদের পুনর্বহালের তারিখ থেকে বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ বিষয়ে এবং বিগত ১৫ বছরে ১৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অমানবিক নির্যাতন নিপীড়ন এবং বৈষম্যের শিকার হয়। 
তাদের ৮ বছরের বেতন ভাতাদি প্রদান না করায় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশায় জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তাদের বেতন ভাতাদি পরিশোধের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির ইতিবাচক সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। 
অনতিবিলম্বে বৈষম্য মুক্তির কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে শীঘ্রই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে। এ সময় তারা জুলাই-আগস্ট চেতনা ধারণকারী ব্রির বৈষম্যের শিক্ষার বিজ্ঞানীদের মধ্য থেকে একজনকে ডিজি পদে পদায়নের দাবি জানান। 
সংবাদ সম্মেলনে যে ৮ দফা দাবি জানানো হয় তা হলো, ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের অপসারণ করা, বিগত ১৫ বছরে ২৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে আত্তীকরণ করা, বিগত ১৫ বছরে বৈষম্যের শিকার বিজ্ঞানী কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদান করা, ৯ শ্রমিকের বিগত ১৫ বছরের বকেয়া বেতন ভাতা প্রদান করা,  ১৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাড়ে ৮ বছরের বকেয়া বেতন প্রদান করা, শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজের ভাতা প্রদান করা, দলীয় বিবেচনায় বঞ্চিতদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান করা, ১৫ বছরের দুর্নীতি ও অপশাসনের তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণ করা। 
এ সময় মহানগর বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি আহমদ আলী রুশদী ও মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মাহমুদ হাসান রাজুসহ বিএনপি’র কয়েক নেতা উপস্থিত থেকে ব্রি’র কর্মজীবীদের ওই দাবি সমূহের প্রতি সমর্থন জানান। সংবাদ সম্মেলনে ব্রি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ রমজান আলী, আলফাজ উদ্দিনসহ বঞ্চিত বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকরাউপস্থিত ছিলেন।

×