
কাউনিয়ায় সোমবার ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের মূল লক্ষ্য দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। দেশে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচন দিলে তা আর হবে না। আমরা লড়াই করতে চাই লড়াই করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বাংলাদেশের আগামী দিনের কা-ারি তারেক রহমান গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য মানুষকে সংগঠিত করে যাচ্ছে। আমরা নির্বাচন দিয়ে আমাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই যারা আমাদের কথা সংসদে বলবে, পার্লামেন্টে বলবে।
তিনি সোমবার দুপুরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার তিস্তা বাঁচাও অবস্থান কর্মসূচির জনতার সমাবেশে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আপনি নিরপেক্ষ। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরপেক্ষ থাকলে হবে না, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপনার পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আমাদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে চাই আমাদের ন্যায্য হিসাব আমরা বুঝে নিতে চাই। বন্ধুত্ব থাকবে তিস্তার ন্যায্য হিস্যার ক্ষেত্রে কোনো বন্ধুত্ব নেই।
এ আন্দোলন মানুষের বেঁচে থাকার আন্দোলন। লড়াই ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না আমরা লড়াই করে তিস্তা ন্যায্য হিস্যা বাস্তবায়ন করতে চাই। বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুূুদু, কেন্দ্রীয় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
একই সময়ে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের কাকিনা মহিপুর পয়েন্টে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জুনাইদ সাকি বক্তব্য দেন।
সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই-স্লোগানে অবস্থান কর্মসূচি পালনে দলে নদী পাড়ে দলে দেশের ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদীর ১১টি পয়েন্টে এক যোগে টানা ৪৮ ঘণ্টার ওই অবস্থান কর্মসূচিতে ৫ জেলার কয়েক লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছেন। তিস্তা রেলসেতু ও তিস্তা সড়ক সেতুর মধ্যস্থানে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে নারী পুরুষ দলে দলে এসে অবস্থান নিয়েছেন।
১১টি পয়েন্টে তাবু গেড়ে ভেতরে মানুষ বিছানা পেতে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশাল বিশাল প্যান্ডেল ও শতাধিক তাবু টানানো হয়েছে। দুপুর গড়িয়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় তিস্তা নদী পাড়।
অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে নিলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি স্থানে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। শেষদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি এসব মঞ্চে দিনভর থাকবে তিস্তা পাড়ের মানুষের সুখ দুঃখের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, ভাওয়াইয়া গানের আসর, ঘুড়ি উৎসবসহ নানান গ্রামীণ খেলাধুলা।
রয়েছে স্থানীয়দের নিজেদের চাল ডাল সহায়তায় খিচুরিসহ প্রয়োজনীয় খাবার ব্যবস্থা। এভাবে টানা ৪৮ ঘণ্টা তিস্তা নদীর তীরেই অবস্থান করবেন রংপুরের ৫টি জেলার কয়েক লাখ মানুষ। ওই অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে দীর্ঘদিন ধরে করা হয়েছে প্রচারাভিযান।
তিস্তা রক্ষা আন্দোলনের প্রধান ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু বক্তব্যে বলেন, আমাদের এ আন্দোলন কোনো দল বা মতের নয়। এটি গোটা রংপুর অঞ্চলের মানুষের গণদাবি। যার মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।
আমরা চাই, তিস্তা মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে অবহেলিত এ অঞ্চলে স্যাটেলাইট ভিলেজ, অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন কেন্দ্র, গড়ে উঠুক কৃষি ও শিল্প বিপ্লব। রংপুর অংঞ্চলের মানুষ দাবি আদায়ে আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। যৌক্তিক দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলতে থাকবে। প্রথম দফায় যে ৪৮ ঘণ্টা টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে পরে কঠোর থেকে কঠোরতম আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে।
রংপুর ॥ বৃহত্তর রংপুরের পাঁচ জেলায় তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ব্যতিক্রমী বৃহৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে। তিস্তা পাড়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দাবি বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগসহ বিশ্ব পরিম-লে তিস্তার দুঃখ তুলে ধরা হবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে কাউনিয়াসহ তিস্তা বিস্তৃত রংপুর অঞ্চলের ১১টি পয়েন্টে একযোগে ৪৮ ঘণ্টার এ কর্মসূচি পালন করছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিস্তা বাঁচানোর ডাক আমাদের অন্তরের ডাক। আমরা লড়াই করেছি ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে। ৩৬ দিনের সকলের লড়াইয়ের মাধ্যমে তিনি (শেখ হাসিনা) ওই ভারতে চলে গেছেন।
একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের যে শত্রু তাকে (হাসিনা) দিল্লিতে রাজার হালতে বসিয়ে রেখেছে। সেখান থেকে তিনি আবার আওয়ামী লীগারদের বিভিন্ন হুকুম রাজি করেন।সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আজকের এই সংগ্রাম আমাদের বাঁচা-মরার সংগ্রাম। তিস্তা পাড়ের মানুষের এই সংগ্রামকে আবার কখনো বন্ধ হতে দেব না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই তিস্তা নিয়ে আপনাদের মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আর আপনারা যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেহেতু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন।
মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে। সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন বিভিন্ন পয়েন্টে মিছিল নিয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও তিস্তা মহিপুর সেতুসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়।
কাউনিয়া তিস্তা সড়ক সেতুর লালমনিরহাট প্রান্তে উপস্থিত থেকে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি হায়দার আলী বিপ্লবী ওয়ার্ক পার্টির নেতা সাইফুল ইসলাম, বিএনপিরসহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে সবগুলো পয়েন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া তিস্তা পয়েন্টের গণসমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
আয়োজক সূত্র জানায়, কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিস্তা নদীবেষ্টিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করবে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। সরেজমিনে দেখা যায়, কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিস্তার বুকে মঞ্চ তৈরিসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে রবিবার রাতের মধ্যেই। সমাবেশ, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, খাবার তৈরি ও রাত্রি যাপনের জন্য বড় বড় প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে যেখানে ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ রাত্রি যাপন করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট এলাকায় পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ স্থাপনসহ সব ধরনের কাজ শেষ হয়েছে। এবারের আন্দোলনে সরকার যদি তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে। তবে লাগাতার কর্মসূচি চলবে। দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীপাড়ের লোকজন সকাল থেকেই তাদের জন্য নির্ধারিত পয়েন্টে আসতে শুরু করেন।
দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি সফল করতে তারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে আসছেন। রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর বাজার সংলগ্ন পয়েন্টে আসা পার্শ্ববর্তী জয়রামওঝা চরের বাসিন্দা ছয়ফুর বলেন, ‘এদ্দিন সবায় হামাক খালি আশা দিচে, কায়ও কোনো কাম (কাজ) করে নাই। এইবারের আন্দোলনে হামরা তিস্তাপাড়ের সবায় থাকমো। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। এটি রংপুর অঞ্চলের তিস্তাপাড়ের বঞ্চিত মানুষের আন্দোলন। এ আন্দোলন জনদাবিতে পরিণত হওয়ায় এতে নদীপাড়ের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আশা করছি, এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে পারব, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে।
নীলফামারী ॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিস্তা বাঁচানোর ডাক আমাদের অন্তরের ডাক। আমরা লড়াই করেছি ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে। ৩৬ দিনের সকলের লড়াইয়ের মাধ্যমে তিনি (শেখ হাসিনা) ওই ভারতে পালিয়েছেন।
একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের যে শক্র তাকে (হাসিনা) দিল্লিতে রাজার হালতে বসিয়ে রেখেছে। সেখান থেকে তিনি আবার আওয়ামী লীগারদের বিভিন্ন হুকুম করেন। এ সময় বিএনপির মহাসচিব ভারতের উদ্দেশে বলেন, যদি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব যুক্ত করতে চান তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন।
সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করেন। আর আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো আচরণ বন্ধ করেন। আমরা আমাদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা অবশ্যই ভারতকে বন্ধুত্বের সঙ্গে দেখতে চাই। যে বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সঙ্গে আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার।
সোমবার দুপুর থেকে উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলার ১১টি পয়েন্টে দুই দিনব্যাপী শুরু হয়েছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই কর্মসূচি। ওই কর্মসূচির বিকেল ৪টায় উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই কর্মসূচির মূল মঞ্চ কাউনিয়ায় তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে এসব কথা বলেন। যা একযোগে বড়টিভি পর্দার সকল পয়েন্টে সরাসরি সম্প্রসার করা হয়। ৪৮ ঘণ্টার এ কর্মসূচি পালন করছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন রংপুর বিভাগের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকের এই সংগ্রাম আমাদের বাঁচা-মরার সংগ্রাম। তিস্তাপাড়ের মানুষের এই সংগ্রামকে আর কখনো বন্ধ হতে দেব না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই তিস্তা নিয়ে আপনাদের মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আর আপনারা যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেহেতু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে ভারতের কাছে বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু বেচে দিয়েছে কিন্তু তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারেনি আওয়ামী লীগ। শুধু তিস্তা নয়, ৫৪টি অভিন্ন নদীর উজানে ভারত বাঁধ দিয়েছে। বাঁধ দিয়ে তারা পানি তুলে নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ফসল ফলাতে পারে না। জীবন-জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়। জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। প্রত্যেকটা মানুষকে কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে।
এ সময় বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান দুদু বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। এর আগে দাবি উপস্থাপনসহ বক্তব্য দেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক স¤পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু। এই মঞ্চে তার সভাপতিত্বে বিএনপির কেন্দ্রীয় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্ততা জানান হায়দার, বিএনপির চেয়ারম্যান পার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এদিকে তিস্তাপাড়ের যে ১১টি পয়েন্টে অবস্থান কর্মসুচি হচ্ছে তা হলো নীলফামারীর ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজ পশ্চিম পার্শ্বে, লালমনিরহাটের দোয়ানীর তিস্তা ব্যারাজের পূর্বপার্শ্বে, কালীগঞ্জের মহিপুর সড়ক সেতু পূর্বপার্শ্বে, কালীগঞ্জ মহিপুর সড়ক সেতু পশ্চিম পার্শ্বে, আদিতমারীর মহিষখোঁচা, লালমনিরহাট সদরের তিস্তা রেল সেতু সংলগ্ন, রংপুরের গঙ্গাচড়া মহিপুর সেতু, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেল সেতু সংলগ্ন, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের সরিষাবাড়ী ঘড়িয়াল ডাঙ্গা, উলিপুরের পাকার মাথা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও হরিপুর সেতু সংলগ্ন।
তবে লালমনিরহাট সদরের তিস্তা রেল সেতু সংলগ্ন পয়েন্টটি হবে কর্মসূচির প্রধান মঞ্চ। সেখান থেকে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রসারণ করা হচ্ছে প্রতিটি পয়েন্টে বড় পর্দা স্থাপন করে। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে জেলা ও উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীসহ এলাকার মানুষজনকে অংশ নিতে দেখা যায়। উদ্বোধনের পর প্রতিটি এলাকার বিএনপি নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সন্ধ্যা ৭টায় লন্ডন থেকে ভার্চয়ালি বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগে ১১টি অবস্থান কর্মসূচির মঞ্চে পৃথক পৃথকভাবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন-কুড়িগ্রামের রাজারহাটের সরিষাবাড়ি ঘড়িয়ালডাঙ্গা পয়েন্টে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, উলিপুরের থেতরাই পয়েন্টে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর ব্রিজ পয়েন্টে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও শামসুজ্জামান দুদু, নীলফামারীর ডিমলা তিস্তা ব্যারেজ পশ্চিমপাড় ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ পূর্বপাড়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
কুড়িগ্রাম ॥ বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর ধুঁ ধু চরে কয়েকদিন আগে সামান্য পানি দিয়ে মিডিয়াকে জানিয়েছে, তারা নিয়মিত পানি সরবরাহ করে। সেটাও একটি প্রতারণা। তিস্তা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতারণা করে আসছে।
এই তিস্তা বাংলাদেশের মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন। ভারত তাদের অংশে রাবারড্যাম বসিয়ে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটা করছে আর দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার যা খুশি তাই চাপিয়ে দিচ্ছে। সোমবার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় তিস্তাপাড়ে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন।