
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার টোকাই প্রকল্প এক বছরের অধিক সময় পার হলেও কার্যকর হয়নি ময়লা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ২৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে কেনা দুটি গারবেজ ভ্যান। পড়ে রয়েছে এখনো গ্যারেজে। স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় গাড়িগুলো কোনো কাজে আসছে না, ফলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলা উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) আওতায় ক্লিন ও গ্রিন সাটুরিয়া গড়ার লক্ষ্যে একটি "টোকাই প্রকল্প" গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় দুটি আধুনিক মিনি গারবেজ ভ্যান কেনা হয়, যার জন্য ব্যয় করা হয় ২৫ লক্ষ টাকার বেশি। তবে, ময়লা ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় গাড়িগুলো ব্যবহারের সুযোগ পায়নি।
২০২৩ সালের ৫ জুন তৎকালীন জেলা প্রশাসক রেহেনা আখতার এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই গাড়িগুলো ইউনিয়ন পরিষদের গ্যারেজে পড়ে রয়েছে। এতে যন্ত্রাংশ ও ব্যাটারি নষ্ট হচ্ছে।
টোকাই প্রকল্পের সহায়ক উদ্যোগ হিসেবে ইউনিয়নে ব্যাটারি চালিত টলি ভ্যান কেনার জন্য মোট ১০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ময়লা পরিবহনের জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে এসব ভ্যান তৈরি করা হয়। তবে, এগুলোরও কোনো কার্যকর ব্যবহার নেই।
সাটুরিয়া সদরে প্রায় ২০০ আবাসিক ভবনের ময়লা-আবর্জনা এখনো গাজীখালি নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদী তার যৌবন হারিয়েছে, জলধারণ ক্ষমতা কমেছে, দূষণ বেড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও অন্যান্য ক্লিনিকের বর্জ্যও যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, টোকাই প্রকল্পটি যদি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হতো, তবে এটি জনগণের উপকারে আসত। কিন্তু শুধুমাত্র গাড়ি কিনেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে, ফলে সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে।
সাটুরিয়ার টোকাই প্রকল্প মূলত বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইক্লিংয়ের জন্য চালু হয়েছিল, যাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে পৌরসভার মতো কার্যকর করা যায়। কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে ২৫ লক্ষ টাকার বেশি খরচ করেও প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ও তদারকি ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প শুধু অর্থ অপচয়ই বাড়াবে, জনগণের কোনো উপকারে আসবে না—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দরগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আলিনূর বকস রতন বলেন, সরকারি কোষাগারের টাকা ব্যয় হলেও সাটুরিয়া বাসিন্দাদের কোনো উপকার হয়নি। প্রকল্পটি অর্থ অপচয়ের নামান্তর।
সাটুরিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, ময়লা ফেলার ডাম্পিং স্টেশন ছাড়া গাড়ি কেনা ঠিক হয়নি। এটি অবাস্তব পরিকল্পনার উদাহরণ।
সাটুরিয়ার বর্তমান ইউএনও ইকবাল হোসেন জানান, তিনি তিন মাস আগে সাটুরিয়ায় যোগদান করেছেন।প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। তবে তিনি প্রকল্পটি কীভাবে কার্যকর করা যায়, তা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন।
আফরোজা