ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

পানি চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিস্তা পাড়ে দুইদিনের অবস্থান কর্মসূচি শুরু আজ

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী॥ 

প্রকাশিত: ০১:০৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০১:০৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পানি চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিস্তা পাড়ে দুইদিনের অবস্থান কর্মসূচি শুরু আজ

অবিলম্বে তিস্তা নদীর পানি চুক্তি এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তরাঞ্চলের  তিস্তাপাড়ে শুরু হচ্ছে অবস্থান কর্মসুচি। আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) ও আগামীকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) দুই ব্যাপী এই অবস্থান কর্মসুচির ডাক দিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। যার প্রধান সমন্বয়কের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্য আসাদুল হাবীব দুলু। 

তিস্তা নদীর পানি নিয়ে বৈষম্যের বিষয়টি গোটা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে তিস্তাপাড়ের ১১টি পয়েন্টে ২০ লাখ মানুষদের সমাগম ঘটবে বলে আয়োজনকরা আশাবাদী। এ জন্য কর্মসুচিতে গান- কবিতা- অভিনয় ও স্মৃতিচারণের আয়োজন রাখা হয়েছে। তিস্তাপাড়ের  ১১টি পয়েন্টে মঞ্চ, তাবু স্থাপন ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজনের প্রস্তুতিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। 

এসময় নীলফামারী জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক জহুরুল আলম বলেন আমরা আশা করছি নীলফামারীর পয়েন্টের ডালিয়ায় ৫ লাখ মানুষের সমাগম হবে। এ ছাড়া লালমনিরহাটের বিভিন্ন পয়েন্টে  ৫ লাখ মানুষজন কর্মসুচিতে অংশ নেবে বলে জানান বিএনপি নেতা ব্যারিষ্টার রাকিব হাসান । তিনি বলেন সব মিলে দুইদিনের অবস্থান কর্মসুচিতে ২০ লাখ মানুষ থাকবে। তাবু স্থাপন খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে আমরা নেতাকর্মীরা সবাই ব্যস্ত সময় পার করছি।  

 

“জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও” শ্লোগানে তিস্তাপাড়ে এই ৪৮ ঘন্টার কর্মসুচি সোমবার  দুপুর ২টায়  জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু করা হবে। তবে  বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বিকাল ৪টায় কর্মসুচির উদ্ধোধন করার কথা রয়েছে। 

এসময় বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান দুদু বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন। এর আগে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে দাবী উপস্থাপন সহ বক্তব্য দিবেন  তিস্তা নদী রক্ষা  আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্য আসাদুল হাবীব দুলু। 

এ ছাড়া প্রথম দিনের কর্মসুচিতে খেলা ধুলা, সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান ,নাটক, পালা গান,ভাওয়াইয়া গান, ঘুড়ি উড়ানো, হা-ডু-ডু খেলা সহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসুচী চলবে রাত ২টা পর্যন্ত। কর্মসুচির দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১০টায় লালমনিরহাট তিস্তা ব্রীজ থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত গণপদযাত্রা এবং তিস্তা নদীতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হরে। এরপর বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পিদের অংশগ্রহনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। সন্ধ্যা ৭টায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দিবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

ওইদিন নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে উপস্থিত থাকবেন  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এরপর রাত ৮টায়  ব্লাক ডায়মন্ড খ্যাত বেবী নাজনীন সঙ্গীত পরিবেশনা করবেন ও তিস্তাপাড়ের জীবন মান নিয়ে তৈরী সিনেমা সাঁতাও প্রদর্শনের মাধ্যমে রাত ১২টায় দুইদিন ব্যাপী অবস্থান কর্মসুচির সমাপনী ঘটবে।

তিস্তাপাড়ের যে ১১টি পয়েন্টে পৃথক পৃথক ভাবে সমাগম ঘটনো হবে সেগুলো হলো নীলফামারীর ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজ পশ্চিম পার্শ্বে, লালমনিরহাটের দোয়ানীর তিস্তা ব্যারাজের পূর্বপার্শ্বে, কালিগঞ্জের মহিপুর সড়ক সেতু পূর্বপার্শ্বে, কালীগঞ্জ মহিপুর সড়ক সেতু পশ্চিম পার্শ্বে। আদিতমারীর মহিষখোচা, লালমনিরহাট সদরের তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন, রংপুরের গঙ্গাচড়া মহিপুর সেতু, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেল সেতু সংলগ্ন, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের সরিষাবাড়ী ঘড়িয়াল ডাঙ্গা, উলিপুরের পাকার মাথা, গাইবান্ধার  সুন্দরগঞ্জ ও হরিপুর সেতু সংলগ্ন। 

 

তবে লালমনিরহাট সদরের তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন পয়েন্টটি হবে কর্মসুচির প্রধান মঞ্চ। সেখান থেকে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রসারন করা হবে প্রতিটি পয়েন্টে বড় পর্দা স্থাপন করে। তবে প্রধান মঞ্চের উদ্ধোধনী শেষে প্রতিটি মঞ্চেই একই কর্মসুচি থাকবে। স্থানীয়রা মনে করেন, ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়। 

এদিকে কর্মসূচি দলীয়ভাবে না করে নতুন ব্যানারে করার মধ্য দিয়ে বিএনপি কী বার্তা দিতে চায়, সেটিও উঠে আসবে এই কর্মসূচিতে, এমন মনে করছেন তিস্তাপাড়ের মানুষজন। 

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল তিস্তা ইস্যুতে ঢাকা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে লংমার্চ কর্মসুচি পালন করেছিল বিএনপি। এরপর নীলফামারীর ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারেজের পৌছে সমাবেশের মধ্য দিয়ে দুই দিনের লংমার্চ কর্মসূচি শেষ হয়েছিল তখন। তিস্তা নদীবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বরাবরই অভিযোগ, নদীটির অন্তত ১১৫ কিলোমিটার এলাকার প্রায় কোথাও পানি নেই। প্রতি বছর বর্ষায় নদীটির তি হয় এক লাখ কোটি টাকার উপর। স্থানীয়রা মনে করেন, ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।

প্রকাশ থাকে যে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারী বিকালে তিস্তাপাড়ের কাউনিয়ায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে বিশেষ গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে প্রধান অতিথি পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, তিস্তার দুই পাড়ের ৪৫ কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ এলাকার মধ্যে অধিক ভাঙন কবলিত ২০ কিলোমিটার এলাকার ভাঙনরোধের কাজ আগামী মার্চ মাসের মাঝামাঝি হতে শুরু করা হবে। বাকি অংশের ভাঙনরোধের কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু করা হবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষের মতামত নিয়েই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এর জন্য একটি জরিপ করা হবে। যা আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চীনের চায়না পাওয়ার। তিনি আরও বলেছিলেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা পূর্বের নক্সাকে চীন বাতিল করেছে। কারন ওটা টেকসই হবেনা। নতুন ভাবে চীনের সাথে চুক্তিতে  মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন দুই বছরের সময় চেয়েছেন। 

অপর দিকে উক্ত গণশুনানি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছিলেন,অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে শিরদাঁড় উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন এবং পানির হিস্যা আদায়ের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে মাথা উঁচু করে কথা বলবে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক পানি আইনের ভিত্তিতে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হবে, যাতে ভারত চুক্তিতে স্বার করতে বাধ্য হয়।

আফরোজা

×